• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারীদের তালিকায় এবিটি


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ২, ২০১৬, ০৪:৩৪ পিএম
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারীদের তালিকায় এবিটি

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণকারী ৩৫ প্রেসিডেন্ট, ধর্মীয় নেতা, জঙ্গি ও অপরাধ সংগঠনের তালিকা প্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)।

বুধবার (২ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণকারী ৩৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে আরএসএফ।

তালিকায় স্থান পাওয়া সাংবাদিক নিপীড়কদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছেন মিশরের স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এই তালিকায় প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আনসারল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।

শীর্ষ দশ সাংবাদিক নিপীড়নকারীর মধ্যে এবিটি অবস্থান সপ্তম স্থানে। সংগঠনটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তচিন্তার ব্লগারদের ওপর হামলা এবং হত্যা করে আসছে বলে দাবি আরএসএফের।

শীর্ষ দশ নিপীড়নকারীর মধ্যে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেংকো দ্বিতীয়, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনী তৃতীয়, মেক্সিকোর অপরাধ সংগঠন লস জেটাস চতুর্থ, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো পঞ্চম, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো ষষ্ঠ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ অষ্টম, তুর্কেমিনাস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাংগুলি বারদিমুখাম্মেদভ নবম এবং বাহরাইনের বাদশা হামেদ বিন ইসলা আল খলিফা দশম স্থানে রয়েছেন।

এছাড়া তালিকায় আরও রয়েছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফেওয়ার্কি, কংগোর প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলা, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন, ইসলামিক স্টেট (আইএস), সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়ে লং, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, ইয়েমেনের শিয়া গোষ্ঠী হুতি, সোমালিয়ার ইসলামপন্থী গোষ্ঠী আল শাবাব। 

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সক্রিয় সংগঠন তালেবান, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুয়েন ফু ত্রং, কাজাখাস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, বুরুন্ডির প্রেসিডন্ট পিয়েরে এনকুরুনজিজা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা, চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেফ তায়িপ এরদোগান।

জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে, সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আবদেল আজিজ আল সাউদ, দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সালভা কির, গিনির প্রেসিডেন্ট তিওডোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াহাইয়া জামেহ।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস পালন উপলক্ষে এ তালিকা প্রকাশ করে আরএসএফ।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)

দেশের নামকরা একাধিক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে যাত্রা শুরু করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু হলেও সংগঠনটি ২০১৩ সাল থেকে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে।  

রাজধানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক ক্যাম্পাসের কাছাকাছি বনানীর একটি মসজিদকে ঘিরে আল-কায়েদার মতাদর্শে বিশ্বাসী এ গোষ্ঠীর কার্যক্রম শুরু হয়। 

প্রধানত ইংরেজি মাধ্যম বা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে তাদের মতাদর্শ প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ চলত। পরে ফেসবুক, ব্লগসহ তথ্যপ্রযুক্তিকেন্দ্রিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। শুরুতে এ দল বা গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট কোনো নাম ছিল না। 

বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকদের উগ্রপন্থী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে জিহাদের মাধ্যমে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়াই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। সংগঠনটি তাদের মতাদর্শ প্রচারের জন্য মসজিদকেও ব্যবহার করে থাকে। সংগঠনটির হামলার মূল লক্ষ্য হলো মুক্ত চিন্তার অনুসারী, ব্লগার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনা জেলার একটি মসজিদে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় সংগঠনটির নেতা মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যা করে এবিটি। এ হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যাঁরা পরে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। একই বছরের ১৪ জানুয়ারি ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে এবং ৭ মার্চ সানিউর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। 

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাঁরা মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা চালান। এতে অভিজিৎ রায় নিহত ও তাঁর স্ত্রী গুরুতর জখম হন। গত ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াসিকুর রহমানকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে বাংলাদেশে সক্রিয় গোষ্ঠীর ওয়েবসাইট ও একাধিক ব্লগে আল-কায়েদার মতাদর্শ নিয়ে প্রচার, উদ্বুদ্ধকরণমূলক লেখা, অডিও-ভিডিও বক্তৃতা, আলোচনা, পরামর্শ, প্রশ্নোত্তর ইত্যাদির চর্চা করা হয়। বিদেশি জঙ্গি নেতাদের লেখা, বক্তৃতা-বিবৃতি বাংলায় অনুবাদ করে এই সাইটে প্রচার করা হয়।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামটিও ইরাকি আল-কায়েদার আনসার উল ইসলাম-এর অনুকরণে নেয়া। তবে বাংলাদেশি এই গোষ্ঠী আধ্যাত্মিক নেতা মানেন ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদার নেতা আনওয়ার আওলাকিকে। আল-কায়েদা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (আরব উপদ্বীপ) নামে সক্রিয় এই গোষ্ঠীর প্রধান আওলাকি ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) হামলায় ইয়েমেনে নিহত হন।

এদিকে ২০০৫ সালে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি বি) ও শাহাদাত আল হিকমাতকে নিষিদ্ধ করে সরকার। 

বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যাকাণ্ডের দায়ে জেএমবির শীর্ষনেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইকে ফাঁসিতেও ঝোলানো হয়। এরপর ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরির নিষিদ্ধ করা হয়। সবশেষ ২০১৫ সালের ২৫ মে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকেও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে সরকার। তবু তাদের কার্যক্রম থেমে নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!