• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামসর্বস্ব সমাবর্তন


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ১০:৫২ এএম
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামসর্বস্ব সমাবর্তন

ঢাকা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর আজ মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে প্রথম সমাবর্তন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যতটা আগ্রহ তৈরি হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি ব্যাচের ২০ লাখ শিক্ষার্থীর অধিকাংশ এ সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন মাত্র চার হাজার ৯৩২ জন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জটিলতার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এ সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না। অনেক শিক্ষার্থী এখনো নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সিটি কলেজ, বোরহানউদ্দীন কলেজ, বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ রাজধানীর বেশকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, এত শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে সমাবর্তন হতে পারে না।

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা তারা সমাবর্তনে অংশ নেবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করলে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে, কারণ আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলেই এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এজন্য আমরা ভিসি ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এত শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে এ সমাবর্তন হলে আবার আন্দোলন শুরু করব। শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রয়োজনে জেলায় জেলায় এ সমাবর্তন আয়োজন করা হোক। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জানিয়েছিল জেলায় জেলায় সমাবর্তন আয়োজন করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোন পদ্ধতিতে সমাবর্তন আয়োজন করছে, সেটা স্পষ্ট নয়। সমাবর্তনের জন্য যে নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয় তার কতটুকু করা হয়েছে জানি না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে রয়েছে। এ জটিলতা দূর করার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক উপাচার্য বলেন, কোনো নিয়ম না মেনেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের ছাড়াই এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। কারণ ২০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে সমাবর্তনে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন মাত্র চার হাজার ৯৩২ জন। এ রকম আয়োজনের ফলে সমাবর্তনের মর্যাদা নষ্ট হবে।    

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন পরে সমাবর্তন হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন। তাছাড়া আস্থার সংকট রয়েছে। এর আগে একবার উদ্যোগ নেয়া হলেও সফল হয়নি, ২৪ বছরে হয়নি। একবার এটা হয়ে গেলে এরপর দেখবেন যে কী অবস্থা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে করা যাবে না। গত ২৪ বছরেও কেন সমাবর্তন হয়নি, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অর্থের কারণে করা যাচ্ছে না, এটা ঠিক নয়। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মন-মানসিকতা ও দৃঢ়তা থাকতে হয়। একটা সমাবর্তন করার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ-অঙ্গীকার দরকার তার অভাব ছিল।’ 

জানা যায়, শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী দীর্ঘ সময় পড়াশোনা করে বের হন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের জন্য কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। এ জন্য শিক্ষার্থীরা মূল সনদ পাননি। ফলে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলেন দেশের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। 

যদিও ২০০৫ সালে একবার তৎকালীন প্রশাসন সমাবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন বিভাগ, পরীক্ষায় পাসের বছর আর ফল অনুযায়ী প্রথম ১০-২০ জনের কাছ থেকে সমাবর্তন ফিও নেয়া হয়। কিন্তু এরপর সমাবর্তনও হয়নি, ফি বাবদ নেয়া অর্থও ফেরত দেয়া হয়নি। এরপর বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ২০১৫ সালের ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় ২০১৬ সালের শেষ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেন। সে হিসেবে আগামী ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। সমাবর্তন আয়োজনে খরচ হবে দুই কোটি টাকা। এ হিসাবে শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু খরচ হবে চার হাজার ৫৫ টাকা। সমাবর্তনে তিন হাজার ১৩৭ ছাত্রী এবং এক হাজার ৭৯৫ ছাত্র অংশ নেবেন। প্রথম সমাবর্তনে অংশ নিতে আড়াই হাজার টাকা নিবন্ধন এবং সনদের জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছেন চার হাজার ৯৩২ জন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন। স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা চ্যান্সেলর কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রিপ্রাপ্ত হবেন। ১৯৯২ সালে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর অধীনে বর্তমানে দুই হাজার ১৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ২০ লাখ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। গত ১২, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ধানমণ্ডির নগর কার্যালয় (বাড়ি ৫৮, রোড ৮/এ) থেকে গাউন বিতরণ করা হয়। কিন্তু এখনো অনেক শিক্ষার্থী তাদের গাউন পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তবে গাউন বিতরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক দিন সময় বাড়িয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই


 

Wordbridge School
Link copied!