• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টার্গেট কিলিং : কলকাঠি নাড়ছে পলাতক জঙ্গিরা!


নিউজ ডেস্ক জুন ২৮, ২০১৬, ০৭:৩১ পিএম
টার্গেট কিলিং : কলকাঠি নাড়ছে পলাতক জঙ্গিরা!

একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটলেও খুনিদের নাগাল পাচ্ছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি দেশজুড়ে চলমান কম্বিং অপারেশনে হাজার হাজার মানুষ গ্রেফতার হলে কিলারদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডগুলোর ঘটনায় গোয়েন্দারা বিশেষ তদন্তে নেমেছে।

প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা দেখতে পান বর্তমানে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ জন জঙ্গি নেতা পলাতক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- তারাই টার্গেট কিলিংয়ের নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছে। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত যতো জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার হয়েছে তাদের অনেকেই বর্তমানে জামিনে ছাড়া পেয়ে বাইরে আছে। তারাও এসব অপরাধে অংশ নিচ্ছে। বর্তমানে পলাতক ও জামিনে থাকাদেও জঙ্গিদের তালিকা হচ্ছে। ঈদের পর শুধুমাত্র জঙ্গি ধরতেই অভিযান চালানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জঙ্গিদের বিষয়ে গোয়েন্দারা এখন বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে। ঈদের পর শুধুমাত্র জঙ্গিদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে। বর্তমানে গ্রেফতারের পর জামিনে থাকা জঙ্গিদের তালিকা এবং যেসব জঙ্গি ধরা পড়েনি তাদের তালিকাসহ বিভিন্ন রকমের তালিকা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার পর ৫ শতাধিক জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বর্তমানে জামিনে রয়েছে। গোয়েন্দারা তাদের খুঁজেও পাচ্ছে না। পাশাপাশি অনেক জঙ্গি সদস্য গ্রেফতারের পর জামিন পেয়েই লাপাত্তা।

পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ সেল জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করছে। ওই সেলের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ জন জঙ্গি নেতা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেই নেপথ্যের কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ। তাদের মধ্যে চারজন ঢাকার হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, বরিশালের মাওলানা আবু বক্কর ওরফে সেলিম হাওলাদার, কিশোরগঞ্জের মুফতি শফিকুর রহমান ও কুমিল্লার মুফতি আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে। কিন্তু তাদের এখনো গ্রেফতার করা যায়নি।

ওই জঙ্গিরা ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে রমনায় বোমা হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল। অন্য আসামিরা স্বীকারোক্তি দিয়ে তাদের অংশ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তাছাড়া নিম্ন আদালত ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ৭ জঙ্গিকে ফাঁসি দিয়েছিল। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়ে যায়। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে।

খালাস পাওয়ার পর থেকেই তারা লাপাত্তা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। তারাও আবার সক্রিয় হয়ে কলকাঠি নাড়ছে। ওই জঙ্গিরা হলো- ঝিনাইদহের রবজেল হোসেন, একই জেলার আজিজুর রহমান, ইউনুস আলী ও আজিম উদ্দিন এবং গাইবান্ধার আবু তালেব আনসারী, খুলনার তরিকুল ইসলাম ও গাইবান্ধার মতিন মেহেদী। খালাস পাওয়ার পরই তারা লাপাত্তা।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ৫৬ জন জঙ্গির ফাঁসির আদেশ হয়েছে। তার মধ্যে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল বিভাগ মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে আরো ৩ জনের। তাছাড়া আপিল বিভাগ এক জঙ্গির বিষয়ে নিম্ন আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৩ জঙ্গির মামলা। হাইকোর্ট ১৬ জন জঙ্গির মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছেন। ১৫ জনকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছেন এবং ৭ জনকে খালাস দিয়েছেন। হাইকোর্টে এখন শুনানির অপেক্ষায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আরো ১৮ জঙ্গির মামলা। ওই মামলাগুলো রাষ্ট্রপক্ষ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।

বর্তমানে জঙ্গি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। কিন্তু যখন দেশে জঙ্গিদের উত্থান হয়েছিল তখন বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়া হয়েছিল। জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইসহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর ও কিছু জঙ্গি গ্রেফতারের পর মনে হয়েছিল সব শেষ হয়ে গেছে। জঙ্গিদের আর সক্ষমতা নেই। কিন্তু বিষয়টি ছিল ভুল। এখন মনে হচ্ছে আরো গভীরভাবে তদন্ত করলে জঙ্গিদের ঠেকানো সম্ভব হতো। তবে এখন  গ্রেফতার হওয়া বা পালিয়ে থাকা জঙ্গিদের প্রোফাইল তৈরি করা হচ্ছে। ওই প্রোফাইল ধরেই ঈদের পর অভিযান চালানো হবে। জঙ্গিদের পুরো নেটওয়ার্ক তছনছ করে দেয়া হবে। দেশে জঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব রাখা হবে না।

সূত্র আরো জানায়, জঙ্গিদের নিত্যনতুন কৌশলে চিন্তিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আগে জঙ্গিদের এক ধরনের চলাফেরা ছিল। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখকে ফাঁকি দিতে নিত্য নতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে জঙ্গি সদস্যরা। জঙ্গিদের কৌশল মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। সম্প্রতি জঙ্গিদের নতুন কৌশল নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে জঙ্গিদের সম্ভাব্য কৌশল পর্যালোচনার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সচেতন থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জঙ্গি দমনের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওসব এলাকার মসজিদগুলোতেও নজরদারি ও বয়ানের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের জঙ্গি প্রতিরোধের নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সাথে চেকপোস্ট বৃদ্ধি ও ভিজিবল পুলিশিং বৃদ্ধির জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রয়োজনে সন্দেহভাজন এলাকায় ব্লক রেইড অপারেশন করতেও বলা হয়েছে। শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা নয়, জঙ্গি দমনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকেও বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, মেট্রোপলিটন এলাকা ও জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদেরও এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে কোনো মূল্যে জঙ্গি হামলা ঠেকানোর জন্য পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জঙ্গি আস্তানা ঠেকাতে রাজধানীতে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০ লাখ ১২ হাজার ৮০৯টি ফরম বিতরণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ১০৫টি ফরমের তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর বাকি ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের জন্য গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রম বাড়িয়ে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করার জন্যও মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গিরা ধর্মীয় ভিন্ন মতাবলম্বী বা ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি আতঙ্ক ছড়াতে ও মনোবল দুর্বল করতে পুলিশ সদস্যদেরও টার্গেট করতে পারে। কারণ অতীতে কয়েক দফায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই কারণে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সময় কিংবা অফ ডিউটিতেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সময় সব সময় অন গার্ড পজিশনে থাকতে বলেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে যেসব এলাকায় ভিন্নমতাবলম্বী ও ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় রয়েছে ওসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা হামলা হতে পারে এমন ব্যক্তিদের নিজেদেরও সতর্কতার সাথে চলাফেরা করার পরামর্শ দিতে পারেন বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা জঙ্গি হামলা ঠেকাতে ও জঙ্গি সদস্যদের ধরতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করছি। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ ভিজিবল পুলিশিংও বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গিরা যেসব কৌশল প্রয়োগ করছে পুলিশও পাল্টা কৌশল প্রয়োগ করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!