• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টোনায় লয় টুনি লয় ১০ টাকা ১০ টাকা...


এম সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭, ০৫:২৮ পিএম
টোনায় লয় টুনি লয় ১০ টাকা ১০ টাকা...

ঢাকা: ‘খালি দশ, খালি দশ। বাইচ্ছা লন, দেইখখা লন, খালি দশ, খালি দশ। টোনায় লয়, টুনি লয়, মাত্র মাত্র দশ, মাত্র দশ’ এভাবেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন রাজধানীর কামরাঙ্গির চর এলাকার মতি মিয়া। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মাত্র ১০ টাকায় নানা ধরনের পোশাক বিক্রি করছেন ।

মাত্র ১০ টাকার পোষাক কিনছেন ক্রেতা

হাড়ি পাতিলের বিনিময়ে সপ্তাহে ছয় দিন বিত্তবানদের কাছ থেকে তাদের পুরনো পোশাক সংগ্রহ করেন মতি মিয়া। আর ওই সব পোশাক নিয়ে প্রতি মঙ্গলবার চলে আসেন রাজধানীর লালবাগের বালুর ঘাট এলাকার হাটে। স্থানীয়দের কাছে এ হাটটি বেড়িবাঁধের মেলা নামেই পরিচিত।

বিত্তবানদের কাছে ওই সব পোশাক পুরনো হলেও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে সেগুলো নতুনের থেকেও নতুন। প্রতি পিস পোশাক বিক্রি করছে মাত্র ১০ টাকায়। দশ টাকা এ সব পোশাক অল্প সময়েই বিক্রি হয়ে যায। এসময় মতি মিয়ার ভ্রাম্যমাণ দোকানে দেখা যায় নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বেশিরভাগ ক্রেতা ইচ্ছে মতো বেছে কিনে নিচ্ছেন পোশাক।

এ দেশে অনেক মানুষ আছেন যাদের লাখ টাকার পোশাকেও মন ভরে না। প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার পোশাক কিনলেও অতৃপ্তি যেন তাদের থেকেই যায়। আবার এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা ১০ থেকে ৫০ টাকার পোশাকেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার পাওয়ার আনন্দ পান।

স্বল্প রোজগার, অল্প ক্রয় আর শ্রেষ্ঠ আনন্দ এ যেন তাদের বেঁচে থাকার এক অনন্য সম্বল। এমন সব মানুষের খোঁজ পাওয়া যায় রাজধানীর লালবাগের বালুর ঘাট এলাকায়। প্রতি সপ্তাহে মতি মিয়ার মতো আরও অনেকে কম মূল্যের সব পণ্য নিয়ে সড়কের দুই পাশে বসেন।

কামরাঙ্গির চর, খোলামুড়া, কেরানীগঞ্জ, হাজারিবাগ, লালবাগ, আজিমপুরসহ আসপাশের বিভিন্ন এলাকার স্বল্প আয়ের মানুষেরা ভিড় জমায় এ মেলায়। শুধু পুরনো পোশাকই নয় কম দামের সব নতুন পোশাকের হাট বসে এখানে।

সরেজমিনে হাট ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট গাবতলী সড়কের বালুর হাট এলাকায় রাস্তার দুই পাশে চট বা মাদুর বিছিয়ে হরেক রকমের পণ্য নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। নতুন থ্রি পিস ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় এখানে। থান কাপর, শাড়ি, বোরকা, বিছানার চাদর, লুঙ্গিসহ ব্যাগ, হাড়ি পাতিল, কাচের সামগ্রি ও জুতাসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রি পাওয়া যায় এ মেলায়।

কথা হয় কামরাঙ্গির চর থেকে আসা রহিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে যে থ্রি পিস ৩০০ টাকায় বিক্রি হয় সেই একই থ্রি পিস নিউ মার্কেটে ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় বিক্রি হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস এখানে কম দামে পাওয়া যায়। তাই আমি এ হাটে প্রতি সপ্তাহেই আসি।

মরিয়ম নামের এক ক্রেতা বলেন, এখানে খুব কম দামে থান কাপড় বিক্রি করে। তাই থান কাপড় কিনলাম তিন মেয়ের জন্য।

এদিকে বিক্রেতাদের দাবি, দোকান ভাড়াসহ কোনো প্রকার খরচ না থাকায় এহাটে খুব কম দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন তারা। তাই ক্রেতাও তুলনামূলক অনেক বেশি।

শফিক নামের এক বিক্রেতা বলেন, এ হাটে বেশি দামের পণ্য নিয়ে আসলে তা বিক্রি হয় না। কারণ, এ হাটের প্রায় সব ক্রেতাই নিম্ন আয়ের। তাই কম দামের মধ্যে একটু ভালো কাপড় নিয়ে এলে ভালো বিক্রি হয়।

হাটের বিক্রেতা বশির উদ্দিন বলেন, আমি নিউ মার্কেটে ব্যবসা করি, ওখানে প্রতি মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় এ হাটে বসি। এখানে দোকান ভাড়াসহ কোনো প্রকার খরচ না থাকায় কম দামেই আমরা পণ্য বিক্রি করতে পারছি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!