• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রেজিংয়েও মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট কাটছে না


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৯, ২০১৬, ০১:০৭ পিএম
ড্রেজিংয়েও মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট কাটছে না

টানা ড্রেজিংয়েও মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নাব্য সঙ্কট কাটছে না। বরং দিন দিন ওই পথে ফেরি চলাচল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ওই পথে রো রো ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। আর ডাম্প এবং কে টাইপসহ অন্য ফেরিগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি মুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। 

ফলে টানা ড্রেজিং করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। এই পরিস্থিতিতে আপাতত নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের খনন করা একটি নতুন চ্যানেল ব্যবহারের অনুমতি চেয়েও তা পায়নি টিএ। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথ চালু রাখতে ফি বছরই ড্রেজিং খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাব প্রায় ৪ বছর ধরে মন্ত্রণালয়ের হিমাগারে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন মাত্র ৬০ কোটি ব্যয়ে ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে ফি বছর এমন সঙ্কটে পড়তে হতো না। কেবল গতবছরই ওই চ্যানেলে ড্রেজিং খাতে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। 

চলতি বছরও তেমনই ব্যয় হবে। আর এ খাতে ৩ বছরে ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। অথচ হিমাগারে থাকা প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখলে অতিরিক্ত ব্যয় হতো না। বিকল্প প্রস্তাবে বর্তমান কাওড়াকান্দি থেকে ঘাট সরিয়ে একেবারে পদ্মার পাড়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। 

তাতে মাত্র ৩০/৪০ মিনিটে পদ্মা পাড়ির পাশাপাশি জ্বালানি আর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সাশ্রয় হবে। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আলোচনাও হয়। প্রাথমিক বিবেচনায় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি ছোট সেতু আর ৭/৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমেই সেটি করা সম্ভব। কিন্তু ওই প্রস্তাবটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

এদিকে মাওয়া ফেরি পয়েন্টে বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মতে- কয়েকদিন আগেও বন্যার ঢল আর তীব্র স্রোতের কারণে ওই রুটে ফেরি চলাচল করা ছিল মুশকিল। আর এখন ওইপথ নব্যতা সঙ্কটে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যাত্রী এবং যানবাহন পারাপারে নির্ভরযোগ্য রো রো ফেরি বন্ধ রাখতে হয়েছে। 

কারণ ওসব ফেরি স্বাভাবিক চলাচলে নদীতে কমপক্ষে ৭ ফুট গভীরতা দরকার। কিন্তু বর্তমানে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টসহ কিছু জায়গায় ভরা জোয়ারেও সাড়ে ৬ ফুটের বেশি পানি থাকে না। ফলে রো রো ফেরি ঘাটে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমনকি ডাম্প এবং কে টাইপ ফেরি চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। তাছাড়া ডুবোচরে মাঝে মধ্যেই আটকে যাচ্ছে কে টাইপ ফেরি। এ অবস্থায় নদী পারাপারের অপেক্ষায় দু’পাড়েই কয়েক হাজার যানবাহন আটকে আছে।

অন্যদিকে কাওড়াকান্দি ফেরি পয়েন্ট সংশ্লিষ্টরা বলছেন- রো রো ফেরি বন্ধ থাকায় অসংখ্য গাড়ি আটকে যাচ্ছে। আর তীব্র স্রোত এবং ডুবোচরের কারণে ডাম্প ফেরিতে পারাপারে অনেক সময় লাগছে। রো রো চালু থাকলে তার অর্ধেক সময়েই পদ্মা পাড়ি দেয়া সম্ভব হতো। বর্তমানে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নাব্য সংকটে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নৌ চ্যানেল সচল রাখতে মাওয়া-কাওড়াকান্দির বিভিন্ন পয়েন্টে টিএর ড্রেজিংও চলছে পুরোদমে।

এ প্রসঙ্গে ডেজিংয়ে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ জানান- বেসরকারি একটিসহ মোট ১০টি ড্রেজার বর্তমানে চ্যানেল সচল রাখার জন্য দিন-রাত ড্রেজিং করছে। কিন্তু চলমান বর্ষা এবং বন্যার মৌসুমে নদীর চরিত্র ঠিক না থাকায় খুব একটা সুবিধা করা যাচ্ছে না। বর্তমানে যে পয়েন্টে ড্রেজিং চলছে সেখানে তীব্র স্রোতের পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে ফেরি চলাচল।

ফলে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। এর ঠিক পাশেই পদ্মা সেতুর কাজে সুবিধার জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ একটি ১ হাজার ফুট চওড়া চ্যানেল খনন করেছে। কয়েকদিনের জন্য ওই চ্যানেলের ২ হাজার ফুট জায়গা দিয়ে ফেরি চলাচলের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজি হয়নি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে ঝক্কি ঝামেলা সয়ে একদিকে যেমন ড্রেজিং করতে হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি ফেরি চলাচলও হচ্ছে মারাত্মক বিঘ্নিত। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!