• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দল শক্তিশালী করতে গিয়ে নতুন সংকটে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৮, ২০১৭, ০২:৫৩ পিএম
দল শক্তিশালী করতে গিয়ে নতুন সংকটে বিএনপি

ঢাকা : ঝিমিয়ে পড়া বিএনপিকে চাঙ্গা করতে সাংগঠনিক জেলায় যে সফর শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা তার উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। বিভিন্ন জেলাতে দলের ভেতর কোন্দল আবার স্পষ্ট হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সংঘর্ষ-বিভেদে জড়াচ্ছেন দলের স্থানীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতারা বহু চেষ্টা করেও পরিস্থিতি সামলাতে পারছেন না।

২০০৬ সাল থেকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে বিএনপি। এই সময়ের মধ্যে দল সাংগঠনিকভাবে আরো দুর্বল হয়েছে। বেড়েছে দলের ভেতর বিশৃঙ্খলা। আর এই পরিস্থিতি পাল্টাতেই উদ্যোগী হয়েছে দলটি। তাই বিএনপির পুনর্গঠনের লক্ষ্য হিসেবে ৫১টি টিম করা হয়েছে। এই টিম সারাদেশের ৭৫ টি সাংগঠনিক জেলায় সফর করছে। এই সফরকে কেন্দ্র করেই ঘটছে সংঘর্ষ-মারামারি। পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে এর ফল কী হয়, সে নিয়েই সন্দিহান সংশ্লিষ্ট নেতারা।

২০০৯ সালের শুরু থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে এতদিন ধরে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ-সহিংসতা নিয়মিত খবর হয়ে আসছে। বিএনপি নেতারা এসব ঘটনা বেশ উপভোগই করেছে বলা যায়। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে নাশকতা নিয়ে এতদিন টিপ্পনি কেটেছে। এখন নিজেরাই এই সমস্যার মুখে পড়েছে বিএনপি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশররফ হোসেন বলেন, হ্যাঁ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বড় দলের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে একটু ঝামেলা থাকতে পারে। এটাকে খুব বড় করে দেখার কিছু নাই।

এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু একই প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি সারাদেশেই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানে সরকারের মদদে কোন কোন জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা তো সমস্যা শুনতেই গেছি, সেখানে সমস্যা শুনতে দিচ্ছে না, প্রোগ্রাম করতে দিচ্ছে না। সেটাতো সরকারের মদদেই হচ্ছে। এছাড়া সংষর্ষ হওয়ার কথা না।

এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৩ মে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা সদর টুডে কমিউনিটি সেন্টারে এক সমাবেশে বিএনপির এক শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে দলের দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন। সমাবেশ শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভপতি এনামুল হক এনামের অনুসারী শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সেখানে পৌঁছায়। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি দলে অপর সমর্থক পটিয়া উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান জুয়েলের সমর্থকরা এনামের সমর্থকদের পিটুনি দেয়। পিটুনি খেয়ে তারা শেষে সভাস্থল ছেড়ে সড়কে যানবাহন ভাঙচুর করে। দুই পক্ষের সেই সংঘর্ষ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়।

এর আগের দিন বিকালে চট্টগ্রামেরই কাজীর দেউড়িতে মহানগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবনে উত্তর জেলা বিএনপির কর্মী সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যেও সংঘর্ষ হয়। সেখানেও ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেনসহ নগর বিএনপির নেতারা। সংঘর্ষ ব্যাপক হলে খন্দকার মোশারফ হোসেন মঞ্চ ছেড়ে চলে যান এবং কর্মী সভা পণ্ড হয়ে যায়।

গত ৩ মে ঝিনাইদহ শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপির প্রতিনিধি সভায় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠান শুরু হলে দাওয়াত না পাওয়া জেলা বিএনপির নতুন কমিটির শৈলকূপার ১৭ জন নেতার সমর্থকরা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে হট্টগোল শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা ভেতরে ঢুকতে গেলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপর ঢুকতে না পারা নেতাকর্মীরা কমিউনিটি সেন্টারে হামলা চালান। তাদের ইটপাটকেলে কমিউনিটি সেন্টারের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়তে থাকে। এসময় ইট ও কাঁচের আঘাতে ভেতরে থাকা ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়।

ঝিনাইদহের দায়িত্ব পাওয়া জয়নাল আবেদীন বলেন, বড় দলগুলোতে মাঝমধ্যে এ ধরণের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। আমরাতো এখন বিরোধী দলে আছি। আপনারা দেখবেন, যে ক্ষমতাসীন দলেও মাঝে মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। জয়নাল আবেদীন আরো বলেন, আমাদের কিন্তু সারাদেশে এ রকম ঘটনা ঘটছে না। যে এলাকায় এই এরকম হয়েছে, আমরা সে সম্পর্কে সেন্ট্রালে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখবে।

সর্বশেষ বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি’র তৃনমূল কর্মীসভায় দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল হট্টগোল, চেয়ার ছোড়াছুড়ি এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। চলমান সভার মধ্যে এমন ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।  

নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলে গত শনিবার সকাল ১০টায় সভার নির্ধারিত সময় ছিল। কিন্তু উত্তর জেলা বিএনপি’র তৃণমূল কর্মীসভা শুরু হয় সকাল সোয়া ১১টার দিকে। তখনও প্রধান অতিথি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সভাস্থলে এসে পৌঁছাননি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান ও জয়নাল আবেদীনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দলের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন উত্তর জেলার আওতাধীন মুলাদী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আল মামুন।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সালে সেলিমা রহমানের পরামর্শে গঠিত উত্তর জেলা যুবদল নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তারা দলের কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহন করেছ না। একইভাবে মুলাদী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ছত্তার খানসহ কমিটির অধিকাংশ নেতা নিষ্ক্রিয়। তারা দলে গ্রুপিং করছে। এসময় তিনি সেলিমা রহমান অনুসারীদের কমিটি বাতিল করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের অনুসারীদের নিয়ে উত্তর জেলা যুবদলের এবং মুলাদী উপজেলা বিএনপি’র নতুন কমিটি করার দাবি তোলেন। এই বক্তব্যের জবাবে উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ তাকে সংযত হয়ে বক্তব্য দিতে বলেন। এসময় মঞ্চে থাকা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আহম্মেদ বাবলু তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিলে হট্টগোল শুরু হয়।  

এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা হাতাহাতি এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেন। এতে সভার কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বিঘ্নিত হয়। পরে স্থানীয় সিনিয়র নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

একই সময়ে অশ্বিনী কুমার হলের বাইরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হাতাহাতি এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। গত শনিবার বেলা ১২টার দিকে প্রধান অতিথি মির্জা আব্বাস সভাস্থলে পৌঁছলে ফের সভার কার্যক্রম শুরু হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!