• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরিতে সমন্বয়হীন ইসি!


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৪, ২০১৭, ০৯:১০ পিএম
নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরিতে সমন্বয়হীন ইসি!

ঢাকা: কমিশনারদের পরামর্শ ছাড়াই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়- এমন খবর চাউর হওয়ার পর খোদ কমিশনাররা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান। তাদের পাশ কাটিয়ে স্পর্শকাতর এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘটনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে। নতুন কমিশনকে বেকায়দায় ফেলতেই এ পরিকল্পনা কিনা-ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছেন তারা।

তবে কমিশন বলছে, নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরির বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। অপরদিকে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি বুঝে ভোল পাল্টাতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসি সচিবালয় এবং কমিশনের মধ্যে শুরুতে কাজে ও কথায় যে সমন্বয়হীনতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এতে সামনের দিনগুলোতে পথচলা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এমনকি ইসি সচিব যে কাজটি জানেন অথচ কমিশনাররা সেটি জানেন না-এটা হতবাক হওয়ার মতোই ঘটনা।

গত ৬ মার্চ হঠাৎ করে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেছে কমিশন, যা শিগগিরই চূড়ান্ত হবে। যা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আশা করি, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কমিশন সভায় এটা উত্থাপন করব। মার্চের মধ্যেই অনুমোদন পাবে।’

কমিশন সচিবের বক্তব্যের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি নানাভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। এই ইস্যুতে কমিশন প্রথমে নিশ্চুপ থাকেন। ঘটনার নেপথ্যের কারণ তলিয়ে দেখতে গিয়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই কমিশনের। তাদের সঙ্গে পরামর্শ দূরে থাক আলোচনা পর্যন্ত করেননি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্টরা। পরে সরব হয় কমিশন।

সাবেক আজিজ কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর সচিবালয়ের সঙ্গে কাজে সমন্বয়হীনতায় শেষ পর্যন্ত পরিণতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে। নিয়ম অনুযায়ী, পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং আদমশুমারির আলোকে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা।

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা করতে গিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে খবরটি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গণমাধ্যমে চলে আসে। গুজবের ভিত্তিতে খবর ছড়িয়ে পড়ে ১ কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকায় যোগ হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এটি লুফে নিয়ে আজিজ কমিশনকে বিদায়ে সোচ্চার হয়। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হয়ে করুণভাবে বিদায় নেয় আজিজ কমিশন।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বে এসেছে কে এম হুদার কমিশন। দায়িত্বের শুরু থেকেই বিএনপির সমালোচনার মুখে রয়েছেন তারা। যদি কমিশন সচিবালয় ও কমিশনের মধ্যে কোনো দুরত্ব সৃষ্টি হয় তবে সে সুযোগ লুফে নিতে পারেন রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ভবনে খবর সংগ্রহে কড়াকড়ি আরোপ করে গণমাধ্যমের বিরাগভাজন তারা।

অপরদিকে, ইসিতে রদবদলের উদ্যোগ নিয়ে কর্মকর্তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন তারা। ছোটখাটো ইস্যুতে দ্বন্দ্বের কারণে আজিজ কমিশনের পরিণতি বরণ করতে হবে, না কি সব জটিলতা কাটিয়ে সফল হবেন-এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাই শুরুতেই বিতর্কে লাগাম টানতে, রোডম্যাপ ইস্যুতে মুখ খুলেছেন কমিশনাররা।

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রণয়নকাজ এখনো শুরু করতে পারিনি। চলমান নির্বাচনগুলো শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করব। এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ বা ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কমিশন বৈঠক কিংবা আলোচনা হয়নি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাবির অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গণতান্ত্রিক ধারা অক্ষুণ্ণ এবং ক্ষমতা বদলের এই নির্বাচনে কোনো অবস্থায়ই ইসি সচিবালয় এবং কমিশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা কাম্য নয়। স্থানীয় নির্বাচনে ভুল হলে শুধরানোর পথ থাকে। তবে জাতীয় নির্বাচনে ভুল করলে পরিণতি বিদায়। তাই নিজেদের বিতর্কমুক্ত রাখতে নতুন কমিশনের উচিত সতর্ক পথচলা।

একই বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরিতে সচিব জানেন, কমিশনাররা জানেন না, বিস্মিত আমি। তাহলে স্পষ্ট, কমিশনারদের ওপর খবরদারি বাড়াতে অতি উৎসাহে কমিশন সচিবালয় নিজেদের অপরিহার্য করে তুলতে চাইছেন। যাতে নতুন কমিশন সবসময় ইসি সচিবালয়ের ওপরে নির্ভরশীল থাকেন। এতে উভয়েরই কাজে সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে বলে আমি মনে করি।’

উল্লেখ্য, রোডম্যাপ তৈরিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা মুদ্রণ, ডিজিটাল ভোটিং মেশিনে (ডিভিএম) ভোট গ্রহণ, বিভিন্ন আইনকানুন সংশোধন ও আলোচনার জন্য সম্ভাব্য সূচি বিষয়গুলি গুরুত্ব পাবে।

সোনালীনিউজডটকম/জেডআরসি/এন

Wordbridge School
Link copied!