• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পছন্দের ছাত্রীকে প্রথম বানাতে জাবি শিক্ষকের কেরামতি


জাবি প্রতিনিধি মার্চ ৯, ২০১৮, ০৪:৫৯ পিএম
পছন্দের ছাত্রীকে প্রথম বানাতে জাবি শিক্ষকের কেরামতি

প্রতীকী ছবি

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফলাফলে এক ছাত্রী সিজিপিএ ৩.৯৭ পাওয়ার ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। যেখানে স্নাতকে তার সিজিপিএ ছিল ৩.৫১। স্নাতকোত্তরে এটিই ওই বিভাগের সর্বোচ্চ অর্জন (ফলাফল) বলে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

তবে ওই ছাত্রীর এ অর্জনের পেছনে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিনের অনৈতিক হস্তক্ষেপ আছে বলে অভিযোগ করেছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্য বরাবর লিখিত এক অভিযোগ পত্রে পরীক্ষা কমিটি সভাপতির বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ওই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানাতেই এ সুবিধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ পত্রটি সোনালীনিউজের হাতে আসার পর এই প্রতিবেদক নানাভাবে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে। এ সময় বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য রেবিয়ে আসে।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, চকমপ্রদ ফলাফল করা আতিফা কাফিকে এগিয়ে দেয়ার জন্য অভিযুক্ত পরীক্ষা কমিটির সভাপতি নিজের প্রচেষ্টায় তড়িঘড়ি করে ৬৯ দিনের মাথায় ১৩ ফেব্রুয়ারি ফলাফল প্রকাশ করে। যেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস বলছে, এমন দ্রুত সময়ে স্নাতকোত্তরের থিসিস গ্রুপের ফলাফল প্রকাশের নজির এর আগে কখনো দেখা যায়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে আবেদনের শেষ দিন ছিলো। তার ঠিক ২ দিন আগে ফলাফল প্রকাশ করে আতিফা কাফিকে ওই পদে আবেদনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য এমন তড়িঘড়ি করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

বিভাগের ৪১তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, স্নাতকোত্তর থিসিস গ্রুপের মৌখিক পরীক্ষায় শুধুমাত্র আতিফা কাফিকেই এ+ মার্ক দেয়া হয়েছে। এছাড়া পিএ-৫০১ নং কোর্সের বহিঃস্থ শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন নুরুল আমিন। ওই কোর্সে শুধুমাত্র ওই ছাত্রীই এ+ পেয়েছে। থিসিস পেপার মূল্যায়নে স্বচ্ছতার জন্য থিসিস পেপারে শিক্ষার্থীর নাম লেখার নিয়ম না থাকলেও ওই ছাত্রীর নাম থিসিস পেপারের উল্লেখ ছিল বলে অভিযোগ থিসিস গ্রুপের অন্য শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আতিফা কাফির শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন পিএ-৫০৩ নং কোর্সের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করেছিলো। জানা যায় ওই দিন কাফি অসুস্থ ছিলনা। বরং ওই কোর্সের পরীক্ষার জন্য তার প্রস্তুতি ছিলো না, তাই সে পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে ওই পরীক্ষাটি স্থগিত করতে বলে। সভাপতি ওই কোর্সটির পরীক্ষা স্থগিত করেছিলো বলে জানা গেছে।

তারা আরো অভিযোগ করেন যে, আতিফা কাফির সঙ্গে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. নুরুল আমিনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি পুরো বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেটা বিশ্বাস করে। তবে ‘বিশেষ’ সম্পর্কের ব্যাখ্যা তারা খোলাসা করেনি।

এ বিষয়ে আতিফা কাফির এক বান্ধবী তার ফেসবুক ওয়ালে ঘটনাটির দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন ‘ওয়াও আমাদের পাবিলিক অ্যাডমিনেস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট এ এইগুলাও নাকি হয় !!!!! যেদিন আমাদের সবাইকে না জানায়া ওর জন্য পরীক্ষা পিছাইছিল সেদিনই বুঝছিলাম ঘাপলা আছে। যে কিনা রাত দেড়টা অবধি আমাদের রুমে বসে আচার খায় আর আড্ডা দেয়, পরের দিন সকালে সে বলে অসুস্থ। আর কত আবাল বানাবা আমাদের বাছাধন। সত্যি কি কখনো চাপা থাকে!!!! অথচ আমার মা অসুস্থ ছিল, হাতে পায়ে ধরেও পরীক্ষা পিছাইতে পারি নাই সবাই। কোর্স টিচার না হওয়া সত্ত্বেও কেন বার বার স্যারের রুমে ঢুকত এইবার বুঝলাম।

তিনি আরো লেখেন, ‘ফার্স্ট হওয়ার জন্য কি কি করছে আর কি কি দিছে কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো ;) টিচার হয়ত ঠিকই হবা কিন্তু ওইযে দিয়া দিয়া হইতে হবে, যেটা তোমার ফার্স্ট ইয়ার থেইকা অভ্যাস (এইগুলা আমার একান্ত নিজে চোখে দেখা মতামত, কারো ব্যক্তিগত স্বার্থে লাগলে তার জন্য দুঃক্ষিত) (হুবহু তুলে ধরা হয়েছে)

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদে অভিযোগ, বিভাগের শিক্ষকদের মাঝে দ্বন্দ্ব, নোংরা রাজনীতি, স্বজনপ্রীতির কারণে মেধাবি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শিক্ষকরা মুখে সততার কথা বলেন। অথচ তারা সবচেয়ে বেশি অসৎ কাজ করে প্রমাণ করে দিলেন, তারা কতটা নিচে নামতে পারেন। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য তারা উপাচার্যের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।

এই বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের অন্তত ১০জন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোক-প্রশাসন বিভাগের শিক্ষকরা যে কোনো ব্যাচের টার্গেটকৃত শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করানো চেষ্টা করে। এবং দিন শেষে প্রকাশিত ফলাফলে সেটাই প্রমাণ করে। তাদের অভিযোগ ক্লাসের ভিতরে পছন্দের শিক্ষার্থীদেরকেই নির্দেশানা দিয়ে অধিকাংশ কোর্স শিক্ষকরা আনন্দ পায় আর বাকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশিক্ষকসুলভ আচরণ করে।

এ বিষয়ে লোক-প্রশাসন বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. জেবউনন্নেছা বলেন, পরীক্ষা কমিটির সদস্য না হওয়ায় এ বিষয়ে আমি অবগত নই।

পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন সোনালীনিউজকে বলেন, ‘কাফি ৫০১ নং কোর্স ও ভাইভাতে ভালো করেছে তাই সে এ+ পেয়েছে। এছাড়া বহিঃস্থ শিক্ষকদের কাছে প্রেরিত থিসিস পেপারে কাফির নাম ছিল না বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘একটি চক্র আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমন ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক অভিযোগ তুলেছে। তবে আমার জায়গায় আমি সৎ ও দক্ষতার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করেছি’। তিনি ৫০৩ নং কোর্সের পরীক্ষা পেছনোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সোনালীনিউজকে বলেন, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে লোক-প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষার অনিয়মের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তদন্ত না করে এ বিষয়ে মন্তব্য করা আমার জন্য সমীচীন হবে না।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!