• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
মানবপাচার

প্রতারণার অর্থ লেনদেনে ১২ ব্যাংক শনাক্ত


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২৭, ২০১৭, ০৬:৫৯ পিএম
প্রতারণার অর্থ লেনদেনে ১২ ব্যাংক শনাক্ত

ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চার নাইজেরিয়ান নগারিকসহ সাতজন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন জন আগডি ইউজিও, মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন, নামডি কেলভিন, লিজা আক্তার ওরফে অ্যাসতা, আফেজ, মোহাম্মদ মোহসিন শেখ, মোছা. তাছমিয়া পারভীন ওরফে শিমু।

লিজা বাংলাদেশি নাগরিক হলেও নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে থাকেন। তাসমিয়া পারভীন শিমু ও মো. মহসিন শেখ লিজার বাংলাদেশের সহযোগী। এছাড়া জামাল হোসেন ও মজিবুর রহমান নামের দুই মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ন কমিশনার আব্দুল বাতেন।

আব্দুল বাতেন বলেন, প্রতারণায় জড়িত বিদেশিদের অর্থ লেনদেনে ১২ থেকে ১৫টি ব্যাংক সহায়তা করছে। ওই ব্যাংকগুলোকে শনাক্ত করা হয়েছে।

প্রতারণার মাধ্যেমে হাতানো অর্থ ব্যাংকগুলোতে জমা রাখার পর বিভিন্ন উপায়ে সেসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন দেশে টাকা পাঠানো হতো। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে জালে ফেলে বন্ধুত্ব গড়ে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিতো এ চক্রের সদস্যরা।

তিনি বলেন, ১২ থেকে ১৫টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশিরা প্রতারণার টাকা সংগ্রহ করেন। এ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রেফতারকৃত লিজা আক্তারের নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে ডিবি। এ সব টাকা অসাধু মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে পাকিস্তানি নাগরিক দানেশ রিজভীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

আব্দুল বাতেন বলেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে ভেরিফিকেশনের জন্য নানা ধরনের ডকুমেন্ট দিতে হয়। তবে তারা কিভাবে এসব অ্যাকাউন্ট খুলে ভিকটিমদের টাকা জমা দিয়েছে এ বিষয়ে আমরা ভাবছি। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর যে কোন বিষয়ে তদন্তের দায়ভার সিআইডির। তবে মামলার তদন্তে ব্যাংকগুলো আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে।

বিদেশিদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে ডিবির এ যুগ্ন কমিশনার বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় ও বন্ধুত্বের পর মো. কামরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে প্রিসকা খালিফা নামের এক বিদেশী মহিলা বলেন, তার বাবা ডা. ডেবিট উইলসন খালিফা মারা গেছেন এবং উনার ব্যাংক একাউন্টে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার রয়েছে। কিন্তু এগুলো তিনি তুলতে পারছেন না।

তুলতে গেলে একজন বিশ্বস্থ লোক ও কিছু টাকা লাগবে। রাজি হলে কামরুজ্জামানের কাছে প্রিসকা খালিফা টাকা পাঠানোর জন্য লিজা আক্তার ও মোহসিনের ব্যাংক একাউন্ট দেন। সেখানে তিনি ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৪ টাকা দেন। এরপর কামরুজ্জামান প্রতারণার ফাঁদে পড়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। মূলত প্রিসকা খালিফা বাংলাদেশী কিছু নাগরিকদের সঙ্গে যোগসাজোশ করে নাইজেরীয় নাগরিকদের বানানো একটি ফেক একাউন্ট ছিল।

গ্রেফতার মাইকেল ও নামডির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল বাতেন বলেন, তারা গার্মেন্টস ব্যবসার জন্য বাংলাদেশে এসেছে। এর আড়ালে দেশী-বিদেশীদের যোগসাজোশে এ দেশের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে প্রথমে তারা বিদেশী নারী ও পুরুষের নামে ফেসবুক একাউন্ট খুলে বাংলাদেশী বিভিন্ন নাগরিককে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।

এক সময় নিজের বিপদের কথা বলে আর্থিক সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করে। শুধু কামরুজ্জামান নয়, শাহনূর হোসেন নামের এক ব্যক্তিও তাদের ৪০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। বাতেন আরও বলেন, এ দেশে অনেক বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। এদের মধ্যে আফ্রিকা অঞ্চলের অধিবাসী নাগরিকরা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত।

তারা নানাভাবে ফাঁদ পেতে এদেশের সহজ সরল ও লোভী প্রকৃতির মানুষকে ধোকা দিয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাচার করে দিচ্ছেন। ডিবির এ কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বিদেশিদের গ্রেফতারে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। মানবপাচারকারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেদের বিদেশে উন্নত জীবন গড়ার প্রলোভন দেখায়।

কথায় ফাঁদে যারা পড়ে তারা শেষ সম্বল বিক্রি করে তাদের টাকা দেয়। ফাঁদে পা দেওয়া ব্যক্তিদের প্রথমে তারা টুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠায়। সেখানে পাচারকারীদের নিজস্ব লোক তাদের রিসিভ করে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যায় ও তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছে আরা টাকা চায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!