• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী আয়ের এক চতুর্থাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৪, ২০১৬, ০৩:২৪ পিএম
প্রবাসী আয়ের এক চতুর্থাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা প্রতিজন এক বছরে গড়ে তিন লাখ টাকার বেশি দেশে পাঠাচ্ছেন; আর প্রবাসীদের মোট আয় বা রেমিটেন্স থেকে গড়ে ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

এছাড়া ২০১৫ সালে প্রবাসীরা যে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, তা মোট জাতীয় আয়ের ১২ দশমিক ৮৩ ভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘প্রবাস আয়ের বিনিয়োগ সম্পর্কিত জরিপ ২০১৬’ -এর ফলে এসব তথ্য উঠে আসে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে বিবিএস অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করে। ওই শুমারির জন্য বরাদ্দ থেকে বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে প্রবাস আয়ের জরিপের প্রস্তাব করা হয়। তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতিতে এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়। সারা দেশ থেকে ১০ হাজার ৪৫১টি খানা নমুনা হিসেবে গ্রহণ করে গত ১ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত মাঠ পর্যায় হতে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো এক বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বছরে একজন প্রবাসী গড়ে তিন লাখ দুই হাজার ১৮৪ টাকা দেশে পাঠান। প্রবাসীদের কাছ থেকে মোট যে অর্থ আসে তার ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বিনিয়োগে যাচ্ছে। আর বিদেশে যাওয়ার জন্য যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যয় হচ্ছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ অর্থ।

২০১৫ সালে প্রবাসী আয়ের ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ অর্থ বাড়িঘর/ফ্ল্যাট নির্মাণ ও সংস্কার খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে; আর অন্যান্য খাতে ১ থেকে ৭ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে। প্রবাস আয়ের ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ জমি কেনায় ব্যবহার করা হয়েছে। জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, আর গত বছরে প্রবাস আয় গ্রহণকারীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবাস আয় সঞ্চয় করেছে।

তবে ৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রবাস আয় গ্রহণকারী কোনো সঞ্চয় করেনি। আর প্রবাস আয় থেকে সঞ্চয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয় করা হয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থায়। এর মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ সঞ্চয়ী হিসাব, ডিপিএস, এসডিপিএস আকারে ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, স্থায়ী আমানত হিসাবে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবাস আয় সঞ্চয় করা হয়েছে। 

জরিপে বলা হয়, ৮৬ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মরত আছেন। ২০১৫ সালে প্রবাস আয়ের ৯৬ শতাংশ আসে নগদে এবং ৪ শতাংশ আসে দ্রব্যমূল্য হিসেবে। রেমিটেন্স পাঠানোয় সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্যাংক। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে আসছে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, আর ১২ দশমিক ৬৬ ভাগ পাঠানো হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও মানিগ্রামের মাধ্যমে। 

পাঠানো টাকার ৪৪ দশমিক ১৮ শতাংশ টাকা বাবা-মা এবং ৪১ দশমিক ৭৮ শতাংশ পরিবারের স্বামী বা স্ত্রী গ্রহণ করে। ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ খানা প্রবাস আয়ের টাকা সঞ্চয় করে। ৮৬ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ পুরুষ। এরমধ্যে প্রায় ৫৪ দশমিক ৯০ ভাগ প্রবাসীর বয়স ৩৫ এর নীচে। আর নারী প্রবাসীদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম। 

তবে রেমিটেন্সের ৭৮ শতাংশ আসে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে। অবৈধ চ্যানেলের মধ্যে হুন্ডির মাধ্যমে আসে ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১০ সালে ১১ হাজার ৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, ২০১১ সালে ১২ হাজার ১৬৮ কোটি ৯ লাখ ডলার, ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ১৬৩ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, ২০১২ সালে ১৩ হাজার ৮৩২ কোটি ১৩ লাখ ডলার এবং ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ৫৭০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার দেশে প্রেরণ করেন সারা বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। 

তবে, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসে। কিন্তু সেখান থেকে আগের মতো রেমিট্যান্স দেশে আসছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগদ পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে শুধু সৌদি আরব থেকেই ৩৩ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স কম এসেছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের জুলাই-মে সময় ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৮ দেশ থেকে ৭৭২ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ৮২৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ৫২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স কম এসেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৩ কোটি ডলার। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১১ মাসে মালয়েশিয়া থেকে ১২০ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ১২৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার। সে হিসেবে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ৫ কোটি ডলার। উল্লেখযোগ্য দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসায় সামগ্রিকভাবে প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়েছে। 

চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ব্যাংকগুলো সর্বমোট এক হাজার ৩৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আহরণ করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল এক হাজার ৩৮৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৪১ কোটি ২৩ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ শতাংশ। 

ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার পেছনে অন্যতম কারণ হল ক্ষুদ্র অঙ্কের রেমিট্যান্স এখন আর ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মাধ্যমে অবৈধ পথে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। তারা ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার অথবা হুন্ডির মতো অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বার্তা পাচ্ছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!