• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ফাঁকা ক্যাম্পাসে আতঙ্কের নাম ‘ছাত্রলীগ’


রাবি প্রতিনিধি মে ১৭, ২০১৮, ০৫:৩৮ পিএম
ফাঁকা ক্যাম্পাসে আতঙ্কের নাম ‘ছাত্রলীগ’

রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটির সবেমাত্র দুইদিন পার হতেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যেই ক্যাম্পাসে ছিনতাই, বান্ধবীকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীকে ছুরিকাহত এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্নজনকে নানাভাবে হুমকি দেয়ায় এ আতঙ্ক বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দীর্ঘ ৩৭ দিনের ছুটি শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগ থেকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর ছুটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস।

আর এই সুযোগেই সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসের ভেতর অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়া ক্যাম্পাসে ব্যাপক নিরাপত্তার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ এবার ঈদ এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি অনেক দীর্ঘতর হলেও হল খোলা থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই পড়ালেখার জন্য এখনো ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। তবে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্ন ভাবে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া, ছিনতাই, ছুরিকাঘাত এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে টাকা চেয়ে হুমকি দেয়ায় এ ‘ছাত্রলীগ’ আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত শনিবার একটি জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিককে মারতে আসে দুই ছাত্রলীগ কর্মী। তাদের অপকর্ম নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হলে ক্ষুব্ধ হয় ওই সাংবাদিকদের ওপর। এর জের ধরে মারতে আসে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সেক্রেটারীর মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয় বলে জানা যায়। এর ঠিক তিনদিন পর গত বুধবার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম হৃদয়কে ছুরিকাহত করেছে হামজা নামে ছাত্রলীগের বেপরোয়া এক কর্মী। আহত শিক্ষার্থী এখনো রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হৃদয় ছাত্রলীগ কর্মী হামজার বিরুদ্ধে মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করা হামজা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী বলে জানা গেছে। সহ-সভাপতি সাদ্দাম ধমক দিয়ে হামজাকে চুপ থাকতে বলায় তিনি ছুড়িকাহতের ঘটনাটি অস্বিকার করেন বলে এক সাংবাদিক জানান। এর একদিন আগে ‘সেন্ডেল’ এর মতো একটি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে এমফিল শিক্ষার্থীকে মারধর করেন ছুরিকাহতকারী ওই ছাত্রলীগ কর্মী হামজা। তাছাড়া আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ কয়েকটি বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দ্রুত এ ফাঁকা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা, নইলে ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের এক মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় কিছু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এর কারণ হিসাবে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীদের মাদকাসক্তে আক্রান্ত হওয়াকে দায়ী করেন ওই সিনিয়র শিক্ষার্থী। তবে আরও বেশকিছু শিক্ষার্থীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের বিষয়ে মন্তব্য বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।

ক্যাম্পাসে হঠাৎ ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা কেন বেপরোয়া হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে সভাপতিসহ আমরা অনেকেই ঢাকায় থাকায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী সমস্যা সৃষ্টি করছে। তবে দু’এক দিনের মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে বিশৃঙ্খল করা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. লুৎফর রহমান জানান, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেই অপরাধী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, বেশ কয়েকদিনে ক্যাম্পাসে যে কয়টি ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটেছে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে অপরার্ধীদের মামলা দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূর্ণ এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি গেটে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!