• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফের কঠোর আন্দোলনের আভাস


নাসরিন জাহান জয়া, বেরোবি এপ্রিল ২১, ২০১৭, ১০:০৩ পিএম
ফের কঠোর আন্দোলনের আভাস

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী দীপু চন্দ্র রায়কে আটকের পর ‍দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবার আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রক্টরকে দায়ী করে তার অপসারণ চেয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।

দীপুর আটক ও বাবার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হককে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানা, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিনাত শারমিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম।

কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমানকে। পরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হক ও সহকারী প্রক্টর ড. শফিক আশরাফ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন। আগামী রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেয়।

পরে তারা একই দাবিতে বেরোবির হেয়াত মাহমুদ ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তবে বর্তমানে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রমতে, কয়েকদিন ধরে চলমান এই আন্দোলন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। 

অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য দ্বিতীয় মেয়াদে বহাল থাকার জন্য জোর তদবির চালাচ্ছেন। সেই লক্ষে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদবির করতেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। যদিও তার চাকরির মেয়াদ আছে আর মাত্র ১৩ দিন। উপাচার্য ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করায় তার না ফেরা পর্যন্ত ধীরগতিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীরা।

সূত্রমতে, আগামী শনিবার উপাচার্য ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে এলেই বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে উপাচার্যবিরোধিরা। আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান উপাচার্যের দ্বিতীয় মেয়াদে থাকা ঠেকাতেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আন্দোলনের বার্তা দিতে চায় তারা। এছাড়াও উপাচার্যবিরোধিরা তার এক্সটেনশন ঠেকাতে এবং নিজেদের পছন্দমাফিক উপাচার্য নিয়োগ দিতে উপর মহলে তদবির অব্যাহত রেখেছেন। 

সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে যোগ্য কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন-প্রমোশন, পুলিশি হয়রানির শিকার কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি প্রদান করে চাকরি স্থায়ীকরণ এবং বেতন স্থগিত কর্মকর্তাদের স্বপদে বহাল রেখে বেতন চালুকরণের দাবিতে কর্মকর্তারা উপাচার্যকে অসহযোগিতার কর্মসূচি পালন করেন। সেই আন্দোলনে এতাত্মতা ঘোষণা করে সেসময় কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, আপগ্রেডেশন ও প্রমোশন বোর্ড গঠন, নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মচারীদের ওভার টাইম চালু এবং পুরাতন কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে লোক নিয়োগ বন্ধকরণ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে কর্মচারীদের সংগঠন কর্মচারী ইউনিয়ন। পরে উপাচার্য তার মেয়াদেই দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন তুলে নেয়।

কিন্তু উপাচার্যের মেয়াদ আগামী ৫ মে শেষ হতে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো দাবি পূরণ করেননি। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নামতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে শিক্ষকদের একটি অংশও কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন।

শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন-প্রমোশন, সেশনজট নিরসন, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানসহ সর্বোচ্চ পদগুলো একাই দখল করে রাখা, প্রধানমন্ত্রীর স্বামী খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে অকার্যকর করে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার নিয়োগ না দিয়ে সেই পদও দখল করে রাখা, মিথ্যা মামলা দিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি সম্পাদকের পদোন্নতি আটকিয়ে রাখা, লাইব্রেরিতে বই ক্রয়ে দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা না রাখা, ক্যাফেটেরিয়া চালুকরণসহ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট করতে সেই আন্দোলনে শিক্ষার্থীবান্ধব দাবি রাখা হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই আন্দোলনই পরবর্তীতে ভিসি হঠাও আন্দোলনে রূপ নিতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। 

আন্দোলনের সঙ্গে যেন সখ্য গড়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়টির। গেল নয় বছরে বারবারই আন্দোলনের মুখে পতিত হয়ে দফায় দফায় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সেশনজটের কবলে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!