• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বালিশ চেপে ধরেন মা, গলা চেপে ধরেন মায়ের প্রেমিক


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ৭, ২০১৭, ১০:৫৫ এএম
বালিশ চেপে ধরেন মা, গলা চেপে ধরেন মায়ের প্রেমিক

ঢাকা: বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল ৯ বছরের শিশু নুসরাত জাহান। একই ঘরে কিছুটা দূরে ঘুমায় আড়াই বছরের ছেলে আলভি। অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ মাথায় শক্ত কিছুর আঘাতে ঘুম ভেঙে যায় গাড়িচালক জামিল শেখের। প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর জামিল শেখ চিৎকার করে ওঠেন। চোখ মেলতেই দ্বিতীয় আঘাত। এরপর আর কোনো শব্দ করতে পারেননি। তবে আঘাতের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় পাশে থাকা নুসরাতের। তখন সে বলতে থাকে, ‘কী হয়েছে, আমার বাবাকে মারছ কেন?’ ততক্ষণে মেয়েকে রুমের বাইরে নিয়ে যান মা আরজিনা। হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলায় এবং বাবাকে মারার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় নুসরাতকেও হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় ঘাতকরা। জন্মদাত্রী মা নিজেই মেয়ে নুসরাতের মুখে বালিশ চেপে ধরেন। গলা চেপে ধরে মায়ের প্রেমিক শাহিন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডায় ওই জোড়া খুনের পর সন্দেহবশত আরজিনাকে আটক করে পুলিশ। পরে তার কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে শুক্রবার খুলনা থেকে শাহিন ও তার স্ত্রী মাসুমাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর শনিবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় তারা গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার বর্ণনা দেন।

ডিএমপির গুলশান জোনের উপকমিশনার মোশতাক আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে স্বামী ও মেয়েকে হত্যার পর ডাকাতির নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেছিলেন আরজিনা বেগম। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রেমিক শাহিনের হাতে কিছু সোনার গহনাও দিয়ে দেয় আরজিনা। সেগুলো নিয়ে শাহিন খুলনায় চলে যায়। পরে ডাকাতের হাতে স্বামী ও মেয়ে খুন হয়েছে এমন বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে অভিনয় শুরু করেন।

এদিকে রাজধানীর বাড্ডায় জামিল শেখ ও তার মেয়ে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার স্ত্রী আরজিনা বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। অপরদিকে তার কথিত প্রেমিক শাহীন মল্লিককে ৪ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। বাড্ডা থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহীনকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এসএম মোশতাক আহম্মেদ বলেন, প্রাইভেট কারচালক জামিল তার স্ত্রী আরজিনা, মেয়ে নুসরাত ও ছেলে আলভিকে নিয়ে উত্তর বাড্ডার ৩০৬ নম্বর বাসায় থাকত। এর আগে তারা উত্তর বাড্ডার আরেকটি বাসার একতলায় ভাড়া থাকত। ওই বাড়ির দ্বিতীয়তলায় থাকত রঙমিস্ত্রি শাহিন ও তার স্ত্রী মাসুমা বেগম। ওই বাসায় থাকাবস্থায় শাহিনের সঙ্গে আরজিনার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কয়েক মাস পর জামিল তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে উত্তর বাড্ডার ৩০৬ নম্বর বাসা ভাড়া নেয়। ভাড়া ৭ হাজার টাকা হওয়ায় দুই রুমের ওই বাসার একটি কক্ষ শাহিনকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেয়ার জন্য স্বামী জামিলকে প্রস্তাব দেয় আরজিনা। পরে জামিলকে রাজি করিয়ে শাহিন ও তার স্ত্রীকে সাবলেট দেয়।

পুলিশ কর্মকর্তা মোশতাক আহম্মেদ বলেন, ‘একই বাসায় থাকায় তারা আরও ঘনিষ্ঠ হয়। এক সময় তারা বিয়ে করার পরিকল্পনা করে। তারা পালিয়ে যেতেও চেয়েছিল। আরজিনা তার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চাইলে, শাহিন অন্য কোনো উপায় বের করতে বলে। তারপর তারা দু’জনে মিলে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’ এরই সূত্র ধরে ১ নভেম্বর গভীর রাতে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় জামিল শেখকে। আর এ দৃশ্য দেখে ফেলায় তার নয় বছরের মেয়ে নুসরাতকেও খুন করা হয়।

মোশতাক আহম্মেদ বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শাহিন বাসার নিচ থেকে একটি কাঠ নিয়ে আসে বাসায়। ওইদিন রাতের খাবার শেষে রুমের দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন আরজিনা। মধ্যরাতে শাহিন ঘরে ঢুকে কাঠ দিয়ে জামিলের মাথায় আঘাত করে। চিৎকার শুনে মেয়ে নুসরাতও জেগে যায়। সে শাহিনের কাছে প্রশ্ন করে, ‘শাহিন আঙ্কেল, আমার বাবাকে মারছ কেন?’ ততক্ষণে জামিল অচেতন হয়ে গেলে আরজিনা ও শাহিন রুমের বাইরে চলে যায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে শাহিন নুসরাতকেও হত্যার পরিকল্পনা করে। প্রথমে রাজি না হলেও পরে আরজিনা নিজ মেয়েকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দু’জনে রুমে ফিরে আসে এবং শাহিন নুসরাতের গলা চেপে ধরে। নুসরাত চিৎকার করলে তার মুখে বালিশ চেপে ধরে আরজিনা।

পুলিশ কর্মকর্তা মোশতাক আহম্মেদ বলেন, নুসরাতের চিৎকার শুনে পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকা শাহিনের স্ত্রী আরজিনাদের রুমে চলে আসে। এরপর শাহিন তার স্ত্রীকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলে, ঘটনা একটা ঘটে গেছে। এখানে থাকা যাবে না। এরপর ভোরে ফজরের আজানের পর স্ত্রী মাসুমাকে নিয়ে শাহিন খুলনায় গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। এর আগে শাহিনের কাছে আরজিনা নিজের কিছু গহনা দিয়ে দেয়। এদিকে শাহিন তার স্ত্রীকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর স্বামী ও মেয়ের খুনের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ডাকাতির নাটক সাজায় আরজিনা। খবর পেয়ে বাড্ডা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। একই সঙ্গে ঘটনা জানতে আরজিনাকে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় আরজিনা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পুলিশের কাছে ডাকাতরা তাকে ধর্ষণ করেছে বলেও দাবি করে। ধর্ষণের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি নিলে বেঁকে বসে আরজিনা। আর এ থেকেই সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সত্য ঘটনা ফাঁস করে দেয় আরজিনা। এরপর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ খুলনা থেকে শাহিন ও তার স্ত্রী মাসুমাকে গ্রেফতার করে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ৩০৬ ময়নারবাগে পাঠানভিলার তৃতীয়তলায় ভাড়া বাসা থেকে বাবা জামিল শেখ ও মেয়ে নুসরাত জাহানের লাশ উদ্ধার করে। সূত্র: যুগান্তর

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!