• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির সহায়ক সরকারে আগ্রহ নেই আ.লীগের


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ৭, ২০১৭, ১২:৩৯ পিএম
বিএনপির সহায়ক সরকারে আগ্রহ নেই আ.লীগের

ঢাকা : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তবে ‘সাংবিধানিক জটিলতা’ মাথায় রেখে তত্ত্বাবধায়ক থেকে সরে এসে এখন সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আসছে দলটি। এনিয়ে একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে।

অবশ্য সেই রূপরেখা তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। তবে এ ব্যপারে ভ্রুক্ষেপ নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। দলটির মতে, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক ও সহায়ক সরকারের মধ্যে কার্যত কোনো পার্থক্য নেই। তারা বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সরকারই সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে।

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিপরীত অবস্থানে রয়েছেন। আওয়ামীপন্থীদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক ও সহায়ক সরকার একই দাবির দুটি নাম মাত্র। আর বিএনপিপন্থীদের কথা হচ্ছে, নতুন নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করে সেটা স্থায়ীভাবে কার্যকর করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সহায়ক সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে মূল সাংবাধানিক তফাৎ একটি। সেটা হলো- একটির কাঠামো আছে, আরেকটির নেই। যে কোনো নতুন নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করে সেটা স্থায়ীভাবে কার্যকর করতে অবশ্যই জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেতে হবে। এর মধ্যদিয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ইঙ্গিত হচ্ছে- সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ না নেয়, যাতে তারা আবারও ক্ষমতায় থাকতে পারে। আর বিএনপির উচিত হবে তাদের সহায়ক সরকারের রুপরেখা অতি দ্রুত তুলে ধরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, বিএনপি চায় আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে হোক। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। যথাসময়ে দলের নেতারা বসে সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন। তার পরই তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে পেশ করবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। যখনই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তখন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। তার প্রমাণ ১৯৭৩ ও ২০১৪ সালের নির্বাচন।

এছাড়া সাবেক এই স্পিকার আরো বলেন, চলমান সংসদ না ভেঙে দিলে দেশে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জাতি কখনো এই সরকারে অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটা বিশ্বাস করে না।

এদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রসঙ্গক্রমে বলেন, সহায়ক সরকারের নামে অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি। সেজন্যই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহিভর্‚ত এক অস্বাভাবিক প্রস্তাবের বান্ডিল দিয়েছে তারা। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে জল্পনা-কল্পনার কিছু নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ অসাংবিধানিক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সাংবিধানিকভাবে এ ব্যবস্থায় আর ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

হানিফ আরো বলেন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনকালে শুধু রুটিন ওয়ার্ক পালন করবে। ক্ষমতাসীন সরকার হবে সহায়ক সরকার। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। ওই সময় নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো সরকারের কোনো সুযোগ থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. আবু সাঈদ বলেন, দেশে দুই বৃহৎ দলের মধ্যে অনাস্থা এবং অবিশ্বাসের মাত্রা এত উঁচু যে, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি না করা হলে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কখনো সম্ভব হবে না। এটি সৃষ্টি করা বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক অপরিহার্যতা।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। কিন্তু ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের জায়গায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। ওই সময় দুর্নীতির অভিযোগে রাজনীতিকদের ওপর দমন-পীড়ন হলে এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

এরপর ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন। বিলুপ্তি ঘটে জন্মলগ্ন থেকেই সাংবিধানিক বিতর্ক হিসেবে দেখা এই ব্যবস্থার। যদিও এই ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গ্রহণযোগ্য দুটি নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির মুখে আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেয়। ওই সরকারে বিএনপিসহ সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে এমন দলগুলোর এমপিদের নিয়ে একটি সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিএনপিকে পছন্দ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অবশ্য ওই সময় বিএনপি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তাদের মতে, নির্বাহী বিভাগের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রশাসনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত এ দাবিতে বিএনপিসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তিন-চতুর্থাংশের বর্জনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিনাভোটেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৫৩টি আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ জোট।

সর্বশেষ এ বছরের ১৫ অক্টোবর সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠন ও সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরির প্রস্তাবসহ নির্বাচন কমিশনকে ২০ দফা প্রস্তাবনা দেয় বিএনপি। শিগগিরই চেয়ারপারসন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন বলেও দলটির নেতারা বলে আসছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!