• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াবহ দূষণের হুমকিতে নগরবাসী, বাড়ছে জটিল রোগ


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১০, ২০১৮, ০২:০৬ পিএম
ভয়াবহ দূষণের হুমকিতে নগরবাসী, বাড়ছে জটিল রোগ

ঢাকা : ভয়াবহ দূষণের হুমকিতে নগরবাসী, বাড়ছে জটিল রোগ রাজধানীতে ধুলা দূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। দূষণে নগরবাসী অতিষ্ঠ হলেও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। ভয়াবহ এ ধুলা দূষণের কারণে নগরবাসী নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যা আরো ভয়াবহ আকার ধারণের আশঙ্কা রয়েছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিক কারণে প্রতিদিন রাস্তায় কিছু ধুলা জমে। এ ধুলা ঠিকমতো অপসারণ না করার ফলে ধুলা জমতে থাকে। জমে যাওয়া এ ধুলা চলন্ত যানবাহনের গতিতে বাতাসে মিশছে এবং ধুলা দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে।

গ্যাস, পানি, টেলিফোন, সুয়ারেজ ইত্যাদি পরিষেবার ভূগর্ভস্থ সংযোগ প্রায় সব ক্ষেত্রে রাস্তার নিচ দিয়ে গেছে। এসব পরিষেবার সংযোগ মেরামত, বৃদ্ধি ও নতুন সংযোগ স্থাপনের সময় রাস্তা খননে সৃষ্ট মাটি রাস্তার ওপরেই স্তূপ করে রাখা হয়। দালান-কোঠা বা অন্য কোনো অবকাঠামো তৈরির সময় নির্মাণসামগ্রী রাস্তার ওপর বা রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় রাখা হচ্ছে, যা থেকে ধুলা দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। ধুলা দূষণ রোধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আহ্বান জানালেও কার্যত এ ব্যপারে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকায় ধুলা দূষণ ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যায়।

ধুলা দূষণের ফলে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। এগুলো পরিষ্কার করার জন্য আলাদা শ্রম ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ধুলা দূষণের ফলে পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যান্য কাপড়চোপড় বেশি নোংরা হয়। এগুলো পরিষ্কার করতেও অধিক শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয় এবং এগুলোর মেয়াদও কমে যাচ্ছে। ধুলা দূষণের ফলে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্য রক্ষার জন্যও অধিক শ্রম ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় ধুলা দূষণের ফলে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, যথাযথ পরিকল্পনা ও শক্তিশালী মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তর ধুলা দূষণ রোধ করতে পারে। না হলে নাগরিকদের এ অনিয়ন্ত্রিত ধুলা দূষণের শিকার হতে হবে। রাস্তার ধুলা এ শহরের দূষণের সবচেয়ে বড় উৎস। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজের কারণে যে দূষণ হয় তা নাগরিকদের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ঝুঁকি।

পবার একটি জরিপে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ধুলা দূষণের কারণে রাজধানীতে একটি পরিবারকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ অতিরিক্ত ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীতে ধুলা দূষণ সবচেয়ে বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল শুষ্ক মৌসুমে ঢাকায় ধুলা দূষণের মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪৯৯ মাইক্রোগ্রাম। অথচ দূষণের সহনীয় মাত্রা হলো প্রতি ঘনমিটারে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম।

নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট ফর এয়ার রিসার্চের (এনআইএআর) সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর গেল বছর এ জরিপ সম্পন্ন করে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মতিন বলেন, রাজউক, সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসার সমন্বয়ের অভাবে ঢাকায় ধুলা দূষণ বাড়ছে। নাগরিক সেবাদানকারী এসব সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এছাড়া রাস্তার কাজ ভালো না হওয়ায় খুব দ্রুত ভেঙে যায়। পরে এ ভাঙা অংশ আরও খারাপ হয়ে ধুলা সৃষ্টি করে। এ ধুলা নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। সরকারকে অবশ্যই এ ধুলা দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জনসচেতনতাও সৃষ্টি করা খুব জরুরি এবং সরকারকে অবশ্যই এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এরই মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আমরা এরই মধ্যে দূষণকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করেছি।

বাড়ছে নানা রোগ : ধুলা দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের নানা ধরনের রোগ, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্তের সংখ্যাবেড়েই চলছে। রাস্তার পাশে বা ফুটপাতে অবস্থিত খাবারের দোকানে রাখা খাবারে ধুলা জমছে। এ ধুলার সঙ্গে নানা রোগজীবাণুও খাবারে মিশছে ও মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি ধুলার কারণে রাস্তার পাশের দোকানের অন্য সব মালামালের গুণগত মানও ক্ষু্ণ্ণ হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের সহযোগী চিকিৎসক ডা. সাদিয়া শারমিন বলেন, ধুলাযুক্ত বাতাস গ্রহণের ফলে প্রাথমিকভাবে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এর ক্ষতি অনেক বেশি। ক্যান্সার তৈরির সঙ্গে যুক্ত কিছু রাসায়নিক যেমন ইউরিয়া, প্যারাবিন, থ্যালেট, পেট্রোলিয়াম বাই প্রডাক্টস ও প্রোপাইলিন গ্লাইকল পানির সঙ্গে মিশে না। এগুলো ধুলার সঙ্গে বাতাসে উড়তে থাকে। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে গিয়ে ধীরে ধীরে ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!