• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা!


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭, ০৫:৩১ পিএম
রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা!

আবু সাইদ

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাইদের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আবু সাইদের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগ লেখা হয়েছে। কিন্তু তার সহপাঠীদের দাবি, শিক্ষা কার্যক্রমে অত্যাধিক কায়িক পরিশ্রম, মানসিক চাপ এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সাইদের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আবু সাইদের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশকৈল উপজেলায়। অনেকটা অকালেই চলে গেলেন আবু সাইদ।

রাবি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খাওয়ার পর থেকেই বুক জ্বালাপোড়া করছিল সাইদের। এ সময় নিজের কাছে থাকা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খায় সে। তাতেও তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে রাবির মেডিক্যাল সেন্টারে নেয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ইঞ্জেকশন পুশ করে ছেড়ে দেন। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা চিকিৎসা শেষে তিনি বিভাগে চলে আসেন।

আবু সাইদের সহপাঠীরা জানান, সাইদের দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রযোজনা হিসেবে ‘নির্বাসন দণ্ড’ নামের একটি নাটকের তৃতীয় ও শেষ মঞ্চায়ন ছিল শুক্রবার। এই নাটকের মঞ্চায়নের জন্য গত তিন মাস ধরে কঠোর শারীরিক ও কায়িক পরিশ্রম করে আসছিল সাইদ ও অন্য শিক্ষার্থীরা।

এই নাটকে অভিনয় করছিলেন সাইদ। শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চিকিৎসা শেষে আবার বিভাগে এসে নাটকের মঞ্চায়নে অংশ নেয় সাইদ। পরে রাত ৯টার দিকে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্বিতীয় দফায় রাবি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান চিকিৎসক তার আগের ব্যবস্থাপত্র দেখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সাইদের সঙ্গে থাকা সহপাঠীরা বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তিন ধরনের টেবলেট ও ইনজেকশন দেয়। ইনজেকশন ও ওষুধ খাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে সাইদ ঘুমিয়ে যায়। এর মধ্যে সে দুই-তিনবার চেতনা পায়। ভোর ৪টার দিকে সাইদ বমি করতে শুরু করে। এরমধ্যে কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডাক্তার এসে একটা ইনজেশন আনতে দেয়। ইনজেকশন আনার আগেই সাইদ মারা যায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাবি মেডিকেল সেন্টারের এক চিকিৎক বলেন, ‘সাইদ মেডিকেল সেন্টারে এসে কর্তব্যরত চিকিৎসককে বুক জ্বালা-পোড়ার কথা বলে। তার যে হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে এটা সে কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানায়নি, চিকিৎসকও এ ব্যাপারটা ধরতে পারেননি। এ সময় তাকে মানসিক চাপ কমানোর জন্য সেডিল ইঞ্জেকশন দেয়া হয় এবং তাকে বিশ্রাম নিতে বলা হয়। দুই তিন ঘন্টার মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে রামেক হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।’

এ ব্যাপারে সাইদের চিকিৎসাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের উপ-প্রধান চিকিৎসক সোহেল রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সাইদের মৃত্যু হয়েছে বলে ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে। তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সাইদের মৃত্যুতে পুরো বিভাগ শোকাহত।’

অত্যধিক কায়িক শ্রমের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাটকের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করতে হয় এটা সত্যি। তাবে সাইদকে তার নাটকের মঞ্চায়নে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়নি বলে কোর্স টিচারের কাছ থেকে শুনেছি। তার মৃত্যুর পর চিকিৎসায় অবহলোর ব্যাপারে আমাদের মাঝেও প্রশ্ন জেগেছে। সাইদকে কী ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তব্যরত নার্স আমাদের সেটা দেখাতে রাজি হননি।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!