• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিম্নমানের: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৯, ২০১৭, ০৭:১৩ পিএম
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিম্নমানের: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

ঢাকা: সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এত দিন বিষয়টি ঝুলে ছিল। সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদকারী সংগঠন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি এর প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) ডিআরইউ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি যোগদেন জ্বালানী ও কয়লা বিশেষজ্ঞ রণজিৎ সাহু। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। রণজিৎ বলেন, রামপাল প্রকল্পের দূষণ নিয়ন্ত্রণে যেসব যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি একটি নিম্নমানের প্রকল্প হতে যাচ্ছে। ভারত তার নিজ দেশেও এর চেয়ে উন্নত মানের কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে।

সংগঠনটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেছেন, ভারতের এক্সিম ব্যাংক কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এই টাকা তারা নিজেদের পকেট থেকে দিচ্ছে না, এই অর্থ সেই দেশে জনগণের আমানতের টাকা। আর এ অর্থ দিয়ে সুন্দরবন ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা আমানতের খেয়ানত।

রামপাল প্রকল্প বিষয়ে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘রামপাল নিয়ে সরকার দেশে-বিদেশে অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। সরকারের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা আমাদের শরীরে বিষ ঢোকাবে এবং সেই বিষ যাতে আমাদের ক্ষতি না করে সেই ব্যবস্থাও করবে।’

৫০টি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রণজিৎ সাহু বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না—এ কথা যাঁরা বলেন, তাঁরা ভুল বলেন। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএফসি ও ডব্লিউএইচওর যে নীতিমালা আছে, তা-ও মানা হচ্ছে না। রামপাল প্রকল্পের দূষণ নিয়ন্ত্রণে যেসব যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি একটি নিম্নমানের প্রকল্প হতে যাচ্ছে। ভারত তার নিজ দেশেও এর চেয়ে উন্নত মানের কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। কিন্তু সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল জায়গার পাশে এ ধরনের কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে না ভারত।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম রামপাল প্রকল্প বিষয়ে বিশ্বের সাতজন খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞের মূল্যায়ন ও গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রামপালের কারণে সুন্দরবনের যে ক্ষতি হবে, তা সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় তুলে ধরা হয়েছে। সরকার বলছে, এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। ইউনেসকোর বিশেষজ্ঞরা একই মতামত তুলে ধরেছেন। সরকার সেটাকেও বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কোথায় বিজ্ঞানসম্মত নয়, তা নিয়ে কোনো যুক্তিতর্ক নেই।

বিশ্বের খ্যাতনামা ১০ জন বিশেষজ্ঞ এই রামপাল প্রকল্পের সব নথি পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে এর মাধ্যম সুন্দরবনের ক্ষতি হবে। এতগুলো স্তরের বিজ্ঞানীদের মতামত জানার পরও সরকার যদি বিজ্ঞান না বোঝে তাহলে বিজ্ঞান কী, সেটা আমাদের বোঝাতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আবদুল মতিন ও সদস্য শরিফ জামিল।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!