• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে ঢাবি সাদাদলের মানববন্ধন


ঢাবি প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৬:০৮ পিএম
রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে ঢাবি সাদাদলের মানববন্ধন

ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ এবং বাংলাদেশে আসা  রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদাদল।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

সাদাদলের আহ্বায়ক ড. মো. আখতার হোসেন খানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ড. লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, সাবেক আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আবদুর রশিদ, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, পালি ও বুদ্ধিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, ড. দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- সাদাদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক কাজী শরীফ, উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান,  মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ অনেক শিক্ষক।

অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বর্বর এবং অমানুষের মতো আচরণ করছে। তাদেরকে অস্ত্র দিচ্ছে ভারত, চীন, রাশিয়া। বাংলাদেশ সরকার কেন এর নিন্দা জানাচ্ছে না! আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের উচিৎ হবে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা এবং রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্ব প্রদানসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানে বাধ্য করা।

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন,  রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানাই। তাদের ওপর নিপীড়ন রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এমতাবস্থায় সকলের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।  

বিএনপির ২২ ট্রাক ত্রাণ আটকে দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের এই সঙ্কটে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা প্রস্তাবটি তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি। কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কোনোভাবেই গায়ের জোরে কোনো সমস্যার সমাধান হয়না।

অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, আমরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজকে রাখাইনে মানবতার চরম বিপর্যয় চলছে। গৌতমবুদ্ধের বাণীকে আজ মানুষ কটাক্ষ করছে। পৃথিবীতে তার বাণী নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। আমি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে আমি সবার কাছে  ক্ষমা প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মহল ও সংস্থা চাইলে এক মিনিটের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সম্ভব।

দিলীপ বড়ুয়া বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না করার দায় প্রতিবেশি দেশগুলো এড়াতে পারেনা। তাদের প্রতি আহ্বান, বর্মিদের এই অমানবিক আচরণে মিয়ানমার সরকারের পক্ষে কথা না বলে, বর্মিদের এই জঘণ্যতম অপরাধের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসেন।

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের জংলী বর্মিদের সঙ্গে এদেশের বৌদ্ধসম্প্রদায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মানুষ নয়। তারা দানব, বর্বর। ওই জঙ্গি বৌদ্ধদের প্রতিশোধ আমাদের ওপর নয়। আমরা সকলে রোহিঙ্গাদের পক্ষে এবং হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে।

সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শত শত বছর ধরে তারা সেখানে বাস করে আসছে। কিন্তু আজকে মিয়ানমার সরকার তাদেরকে বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করছে। যা ঐতিহাসিকভাবে অসত্য ও অপপ্রচার। তাদেরকে তথাকথিত বাঙালি সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে জাতিগত নিধন করার জন্য নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।  

আজকে সারা বিশ্ব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। আমরাও বলব অবিলম্বে জাতিসংঘের কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করা হোক। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধানের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

তিনি বলেন,  বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান নয়। আমরা চাই  টেকসই স্থায়ী সমাধান। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের উচিত জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ।

অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, নাফ নদীতে আজ মানবতা ভাসছে। মিয়ানমার সরকারের হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে বাঁচতে লাখ লাখ মানুষ এদেশে আসতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ নাফ নদীতে ডুবে মরেছে। নাফ নদীর পানি আজ রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত।

তিনি বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু। এটিকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। সরকার যদি কূটনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আখতার হোসেন খান বলেন,  নাফ নদীর ওপারে রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বলছে, মানবতা জ্বলছে, নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ সকলকে হত্যা করা হচ্ছে । নাফ নদীতে নারী শিশু পুরুষের লাশ ভাসছে। এসব লাশ, চিত্র দেখে যাদের বিবেক জাগ্রত হয়না, সেই তথাকথিত মানবতাহীন সারাবিশ্বের মোড়লদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে জোর দাবি জানাচ্ছি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে এসে দাঁড়ান। তাদেরকে মুসলমান হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখুন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারত আজকে রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে গিয়ে কথা বলছে। চীন, রাশিয়া মিয়ানমারের সুরে কথা বলছে। এটা কিসের লক্ষণ? প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। আমরা চাই, তার এই সফর সফল হোক। রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের দাবি-দাওয়া যেন বাস্তবায়ন হয়।
পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণের ফলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর যেন কেউ কোনো আঘাত না হানে। কোনো দুঃস্কৃতকারী যেন এই সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য সকলকে আহ্বান জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম 

Wordbridge School
Link copied!