• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ষোড়শ সংশোধনী: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি অব্যাহত


আদালত প্রতিবেদক মে ২৮, ২০১৭, ০৮:৫৩ পিএম
ষোড়শ সংশোধনী: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি অব্যাহত

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষনা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের অষ্টম কার্যদিবসের শুনানি শেষ হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি চলছে। শুনানিতে আদালতকে আইনী সহায়তা করতে সুপ্রিম কোর্টের ১২জন জেষ্ঠ্য আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

শুনানি শেষে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংসদের মাধ্যমে বিচারক অপসারণ পদ্ধতি বিশ্বের যেসব দেশের রয়েছে সেখানে নানা ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এটি সফল হয়নি। আমাদের আশে পাশের যেসব দেশ রয়েছে বিশেষ করে ভারত শ্রীলংকা মালয়েশিয়াতে এটি সফল হয়নি। এসব দেশের দৃষ্টান্ত আমি আদালতে তুলে ধরেছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনী বিরোধ নিয়ে যেসব মামলা হয়, সেগুলোর শুনানি ও নিষ্পত্তি হয় হাইকোর্টে। এসব মামলার নিষ্পত্তি করেন বিচারকরা। এখন বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি যদি সংসদের হাতে থাকে তাহলে ভারসাম্য নষ্ট করবে এবং বৈপরিত্য সৃষ্টি করবে। আমাদের সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের স্বাধীন ভাবে কাজ করবার যে ভূমিকা, তিনটি সামরিক শাসনের কবল থেকে আমাদের বাচিঁয়েছেন সংবিধানকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করেছেন। সংসদ ও গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যহত রাখার জন্য স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থার বিকল্প নেই। ইয়াজউদ্দিন ও ফখরুদ্দিন যে অসাংবিধানিক সরকার গঠণ করেছিলেন সেখান থেকে ফিরে আসতে হাইকোর্টের বিচারপতিদের ভূমিকা রয়েছে। ওই সরকার হাইকোর্টকে জামিন না দিতে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালা জারি করে। তিনজন বিশিষ্ট নাগরিক (সুলতানা কামাল, নুরুল কবির ও মুনতাসির মামুন) ওই বিধিমালা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। আমি তাদেও পক্ষে মামলা পরিচালনা করি। হাইকোর্ট ওই বিধিমালা বাতিল ঘোষণা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা ফ্লোর ক্রসিংয়ের ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর আমলে সব সময় সংসদীয় দলের সভায় সবকিছু আলোচনা করার সুযোগ পেতাম। ওই সময় পরিকল্পনা কমিশন থেকে এগ্রিকালচার ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব এসেছিল। ওই প্রস্তাব সংসদীয় দলের সভায় উত্থাপন করা হলো তখন বঙ্গবন্ধু সেটি বাতিল করে দেন। গণতান্ত্রিক যে রীতিনীতি রয়েছে সেটা ৭০ অনুছেদে থাকা সত্তেও ইনফোর্স করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও সংবিধানের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে সুপ্রীমকোর্ট সব সময় গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহবউদ্দিন আহমদ, বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী, বিচারপতি খায়রুল হক তাদেও বিভিন্ন রায়ে সামরিক শাসন আমলের সংবিধানকে যেভাবে কাটাছেড়া করা হয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়েছে সুপ্রীমকোর্টের রায়ের মাধ্যমে। এই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আমাদের ও জাতীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা স্বাধীণভাবে কাজ করতে পারেন। কারণ বিচারকরা চতুর্থ পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী মামলার রায়েই তারা প্রমাণ করেছেন। এ জন্যই সুপ্রীমকোর্টের ভূমিকা ঐতিহ্যবাহী ও প্রশংসনীয়।

অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী বলেন, ৫ম সংশোধনী বাতিল রায়ে সুপ্রিম কোর্ট সামরিক শাসনামলে জারি করা সকল ফরমান বাতিল করলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল ব্যবস্থাকে রেখে দিয়েছেন। এরপর সরকার ১৫তম সংশোধনীতেও এ ব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন। এ অবস্থায় বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী করেছে সরকার। কিন্তু এই ১৬তম সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোর লংঘন। তিনি বলেন, বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত হতে হবে বিচারকদের দিয়েই, রাজনীতিবীদদের দিয়ে নয়।

 সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/জেএ

Wordbridge School
Link copied!