সমুদ্রের উচ্চতা বাড়বেই!

ঢাকা : প্যারিসে জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করা ১৯৭টি দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির পটস্ডাম ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের একদল গবেষক নতুন এক মডেলে গবেষণা করেন। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত সেই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২৩০০ সালের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭ থেকে ১ দশমিক ২ মিটার বেড়ে যাবে।

পরিবেশবিষয়ক বিখ্যাত জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঠেকিয়ে রাখা যায়, তবু সিস্টেমের জড়তার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আটকে রাখা যাবে না। শুধু তা-ই নয়, কার্বন ডাই-অক্সাইডের উদগিরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনতে দেরি হলে ২০২০ সালের পর থেকে প্রতি পাঁচ বছরে ২০ সেন্টিমিটার করে পানির উচ্চতা বাড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বরফ ও হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার না কমে উল্টো বাড়ছে।

গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ যদি এখনই বন্ধ করে দেওয়া হয়, তারপরও এরই মধ্যে আমরা পরিবেশের এতটাই ক্ষতি করে ফেলেছি যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আগামী কয়েক শতকে বেড়ে যাবে। তবে গবেষকরা বলছেন, যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা নিলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ওপর তা কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা নিরূপণ করা হয়নি।

গবেষণা অনুযায়ী, পানির উচ্চতা ১ দশমিক ২ মিটার বাড়লে বাংলাদেশসহ ভিয়েতনাম ও ভারতের উপক‚লবর্তী এলাকাগুলোয় ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে। নিউ সাউথ ওয়েলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন চার্চের মতে, এ এলাকাগুলোয় এক মিটার উচ্চতার ঝুঁকিতে প্রায় ১০ কোটি মানুষ বাস করেন। তাদের বিপদ সবচেয়ে বেশি।

ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যথাক্রমে ১৪ ও ৩২ সেন্টিমিটার এবং ২১০০ সাল নাগাদ ৮৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে কমপক্ষে ১০ শতাংশ এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার বাড়লে পুরো সুন্দরবন পানিতে তলিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে অবস্থিত ‘লোহাচরা’ ও ‘সুপারিভাঙ্গা’ নামের দুটি দ্বীপ হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ভোলা দ্বীপও গত চার দশকে প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা হারিয়ে বর্তমানে অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে।

অনেক এলাকা হারিয়ে যাওয়ার আগেই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান জন চার্চ। তিনি বলেন, ‘২৩০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি রোধ করতে হলে এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আরো বাড়াতে হবে।’

গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ইয়ান লোয়ি বলেন, ‘এ গবেষণাটি আরেকবার মনে করিয়ে দিল- জলবায়ু পরিবর্তন উপক‚লে কতটা ঝুঁকি তৈরি করে ফেলেছে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই