• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেনানিবাসের আদলে আবাসিক এলাকা চায় পুলিশ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩০, ২০১৭, ১০:১০ পিএম
সেনানিবাসের আদলে আবাসিক এলাকা চায় পুলিশ

ঢাকা: সেনানিবাসের আদলে আলাদা আবাসিক এলাকা চায় পুলিশ। কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এমন দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দায়বদ্ধতা আইন বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিও তুলে ধরা হয়েছে।

পুলিশ সপ্তাহে বাহিনীর সদস্যদের দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমন্বয় ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি মিলেছে। ফলে পুলিশ সদস্যরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং মাদকের বিরুদ্ধে আরো জোরাল ভূমিকা রাখতে পারবে। ভবিষ্যতে তাদের সব দাবির বাস্তবায়ন ঘটবে বলেও আশা প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।

পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ শেষে পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা এসব কথা বলেছেন। পুলিশ সদরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা জানান, এই বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক অনুষ্ঠান হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। পুলিশ সপ্তাহে পুলিশের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে উপস্থাপন করা হয়। পরে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।

এবারের পুলিশ সপ্তাহে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি দাবি জোরালভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, ‘সেনাবাহিনীর আদলে পুলিশবাহিনীর সদস্যদের জন্য আবাসিক এলাকা গড়ে তুলতে হবে।’ রাজধানীতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য ডিওএইচএস ও নিউ ডিওএইচএসের মতো আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশবাহিনীর জন্য এ ধরনের আবাসিক ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশবাহিনীর জন্য আবাসিক এলাকার দাবি জানান। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৩৭তম সাধারণ সভায় তিনি বলেন, রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কর্মকর্তা সাধারণ মানুষের এলাকায় বসবাস করেন। তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার পরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বসবাস করতে হয়। ১০০ জনের মধ্যে মাত্র পৌনে তিনজনের আবাসিক ব্যবস্থা আছে। মাঠপর্যায়ে যারা বেশি তৎপর থাকেন সেই এসপি, ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টররা সাধারণ এলাকায় বসবাস করেন। ফলে কর্মকর্তারা নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা সবচেয়ে বড় হুমকি। পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা আরো জোরাল ভূমিকা রাখতে পারবে।

কর্মকর্তারা জানান, এবারের পুলিশ সপ্তাহে আরো একটি দাবি জোরালভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তা হলো ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন বাতিলের দাবি। এই আইন পুলিশের অধিকার খর্ব করে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে জানান। আইনটি হওয়ার চার বছর পর এই প্রথম বাতিলের দাবি জানানো হলো। আগামীতেও এই দাবির বিষয়টি সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। এ ধরনের আইন থাকলে পুলিশ সদস্যরা অযথা হয়রানি ও সাহসের সঙ্গে কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলবে। বাহিনীর কাজের গতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

এছাড়া স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ গঠন, পুলিশের উচ্চপর্যায়ে আরো পদ সৃষ্টি, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট দ্রুত গঠন, সার্জেন্ট ও সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা সুবিধা প্রদান, চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির অবকাঠামো বৃদ্ধি, পুলিশের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন সরবরাহ, পুলিশ সদস্যদের পোশাকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরো জানান, বিগত কয়েক বছরে পুলিশ সপ্তাহে পুলিশের বেতন, ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছিল। পরে এগুলোর বাস্তবায়ন ঘটেছে। এবারের দাবিগুলোও ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, গত বছরে পুলিশের ভালো কাজের স্বীকৃতি এবারের পুলিশ সপ্তাহে মিলেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য অবদান রেখেছেন তাদেরই পুরস্কৃত করা হয়েছে। কারো কাজের অমর্যাদা করা হয়নি, খাটো করে দেখা হয়নি। ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মকর্তাদের ‘বিপিএম ও পিপিএম’ পদক প্রদান করা হয়েছে। প্রশংসনীয় ও ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যায়ে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ২৯৩ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে আইজিপি-ব্যাজ পরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই দিকটি এবারের পুলিশ সপ্তাহের অনেক বড় প্রাপ্তি। কয়েকটি দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে। সব ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে সমন্বয় হয়েছে।  

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!