• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হলে আটকে রেখে দোকান কর্মচারীকে নির্যাতন, চাঁদা দাবি


ঢাবি প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭, ১২:৫৯ পিএম
হলে আটকে রেখে দোকান কর্মচারীকে নির্যাতন, চাঁদা দাবি

ঢাকা: চাঁদার দাবিতে হলে আটকে রেখে চাঁনখারপুলের এক দোকান কর্মচারীকে সিগারেটের ছ্যাকা এবং ছুরি দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ফজলুল হক মুসলিম হল (এফ এইচ হল) শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহরিয়ার সিদ্দিক সিসিমের প্রত্যক্ষ মদদে এ কাজ করা হয় বলে জানা যায়।

একটি সূত্র জানায়, শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুম এক ছাত্রলীগ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে মিষ্টি কিনতে চাঁনখারপুলে অবস্থিত বনফুলের ব্রাঞ্চে যায়। এ সময় তারা দোকানের ভেতর সিগারেট টানতে থাকলে দোকানের এক কর্মচারী নিষেধ করে। তখন এ নিয়ে ওই শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে দোকানের কর্মচারী এবং ম্যানেজারের বাকবিতণ্ডা হয়।

পরে বিকেল ৫টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জিসান এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২ জন ছাত্রলীগ কর্মী বনফুলের ওই দোকানে গিয়ে ব্রাঞ্চের মালিক মো. আল-আমিন এবং ম্যানেজার গিয়াসউদ্দিনকে কিল-ঘুষি দিতে থাকে। পরে গিয়াসউদ্দিনকে জোর করে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে হলে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এবং আল-আমিনকে বলে আসে টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনতে। এ সময় তারা দোকানের চাবিও নিয়ে আসে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়াসউদ্দিনকে হলে এনে প্রথমে রুমে আটকে রেখে নির্যাতন করে। এ সময় তার ঘাড়ে সিগারেটের ছ্যাকা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে খোঁচা দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়াসউদ্দিনকে আরেক দফা নির্যাতন করে তার মাধ্যমে দোকান মালিককে ফোন দিয়ে বলা হয় টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে।

সন্ধ্যার দিকে দোকানের মালিক আল-আমিন ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গিয়াসউদ্দিনকে ছাড়াতে আসলে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হল সভাপতি সিসিমকে মোবাইলে বিষয়টি জানায়। সিসিমের সঙ্গে কথা বলার পর রাকিব জানায় ১৫ হাজারে হবে না, ১ লাখ টাকা লাগবে।

ততক্ষণে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়াসউদ্দিনকে ছেড়ে দেয়।

দোকান মালিক আল-আমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সোনালীনিউজকে বলেন, দুপুরের দিকে দোকানের ভেতরে সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুজন লোকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে বিকাল ৫টার দিকে দুপুরের একজনসহ ১০-১২ জন ছেলে দোকানে এসে আমাকে এবং গিয়াসউদ্দিনকে কিল-ঘুষি দিতে থাকে। পরে তারা গিয়াসউদ্দিনকে মোটরসাইকেলে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আর আমাকে বলে টাকা নিয়ে গিয়ে ছাড়িয়ে আনতে।

সন্ধ্যার দিকে আমি ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গেলে তারা ১ লাখ টাকা দাবি করে। পরে আমি ফিরে এসে কয়েকজনের কাছে বিষয়টি জানাই। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার কিছু পর শুনি গিয়াসউদ্দিনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমরা গিয়ে মৎস্য ভবনের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের ছ্যাকা এবং ছুরির ছোট ছোট খোঁচা দেয়া হয়েছে।

নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে শাহরিয়ার সিদ্দিক সিসিম বলেন, আমার কোনো কর্মী এরকম কোনো ঘটনা ঘটায়নি। তবে শুনেছি চাঁনখারপুলের একটি মিষ্টি দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে কিছু ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, আমার কাছে এ রকম অভিযোগ আসেনি। যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে জানতে ঢাবি প্রক্টরকে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!