• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাওয়া বুঝেই পাল তুলেছিলেন ট্রাম্প


রাশেদ শাওন নভেম্বর ১৩, ২০১৬, ০৭:২৭ পিএম
হাওয়া বুঝেই পাল তুলেছিলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই তার ব্যবসায়ী পরিচয়টি বেশ জোর প্রচারণা পেয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের সমালোচকরা অনেকেই বলেছেন, ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা কম। এ কারণেই ‘উল্টা-পাল্টা’ মন্তব্য করছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। আসলে ট্রাম্প বাতাসটা বুঝতে পেরেছিলেন। বলা যায়, হাওয়া বুঝেই পাল তুলেছিলেন তিনি।

‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগান দিয়ে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় আসা ট্রাম্পের পরিচয় মার্কিন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে। বিভিন্ন বক্তব্যে ট্রাম্প সেটা প্রমাণেরও চেষ্টা করেছেন। তাকে শুধু জাতীয়তাবাদী নয়, উগ্র জাতীয়তাবাদী বললেও ভুল হবে না। অথচ এই ধরনের জাতীয়তাবাদকে ইউরোপ, আমেরিকায় বলা হয় ‘নব্য নাৎসীবাদ’। এটাকে দেখা হয় এক ধরনের অপরাধ হিসেবে। তাছাড়া দল হিসেবেও রিপাবলিকানদের রাজনৈতিক আদর্শ রক্ষণশীলতা (কনজারভেটিজম)। আর এই রক্ষণশীলতার কাছেই মার খেয়েছে ডেমোক্রেটদের উদারতাবাদী (লিবারেলিজম) আদর্শ। প্রশ্ন হচ্ছে- কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগে ইউরোপের চিত্রটা একটু দেখে নেয়া দরকার। ১২৭ বছর আগে অস্ট্রিয়ার যে বাড়িটায় নাৎসী নেতা হিটলার জন্মেছিলেন, সেই বাড়িটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। তাদের ধারণা, এই বাড়িটিকে নিজেদের তীর্থস্থানে পরিণত করতে পারে নব্য নাৎসীবাদীরা। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ইউরোপ এখন এই নব্য নাৎসীবাদ বা উগ্র জাতীয়তাবাদের দিকেই ঝুঁকছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) তার সবচেয়ে ভাল প্রমাণ। শুধু তাই নয়, এক সময়ের উদারতাবাদী আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেরেসা মে বলেছেন, ‘আপনি যদি নিজেকে সারা পৃথিবীর নাগরিক মনে করেন, তাহলে আপনি কোনো জায়গারই নাগরিক না (If you believe you're a citizen of the world, you're a citizen of nowhere)। ব্রেক্সিটের পর থেকে ব্রিটেনে অন্য জাতির লোকদের ওপর বিদ্বেষপ্রসূত হামলার ঘটনাও বেড়েছে ব্যাপকহারে।

ইউরোপের আরেক প্রধান দেশ জার্মানির অবস্থাও একই রকম। এমনিতেই জার্মানদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদ রয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেটার প্রকাশ ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু দেশটির সর্বশেষ প্রদেশিক নির্বাচনে উগ্র জাতীয়তাবাদী দল এএফডির কাছে ভরাডুবি হয়েছে মেরকেলের দল সিডিইউর। জার্মানির ১৬টি রাজ্যের পাঁচটিতে চলতি বছর নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে একটি আসনও পায়নি মেরকেলের দল। এর কারণে অভিবাসীদের প্রতি তার উদারতা।

জার্মান নাগরিকরা চেকোস্লোভাকিয়ায় (বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া) অনিরাপদ- এমন অজুহাতে এক সময় দেশটিতে হামলা করেছিল হিটলার। ঠিক একই অজুহাতে ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছে পূর্ব ইউরোপের দেশ রাশিয়া। তাদের দাবি, সেখানে রুশ নাগরিকরা নিরাপদে নেই। ইউরোপের আরেক রাষ্ট্র তুরস্কের অবস্থাও এর থেকে ভিন্ন নয়। কুর্দি-বিরোধী অভিযান চালিয়ে তুর্কিদের কাছে ‘হিরো’ হয়ে উঠছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষায় জাতীয়তাবাদী ধারা বেছে নিয়ে ফরাসিরাও। এই হচ্ছে ইউরোপের প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর অবস্থা।

নৃ-বিজ্ঞানে ‘stimulus diffusion’ বলে একটা কথা আছে। এটা সংস্কৃতি নৃ-বিজ্ঞানের একটা অংশ। এর মানে হচ্ছে, ‘উদ্দীপনার ব্যাপন’। অর্থাৎ, কোনো একটা দেশে পরিবর্তন শুরু হলে তার উদ্দীপনা অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে একই আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এটা খুব দ্রুত ছড়ায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আঠারো শতকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কথা। সেই আন্দোলনের উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছিল ফ্রান্সেও। মার্কিনিদের দেখে তখন তারাও নিজেদের দেশে আন্দোলন করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

stimulus diffusion-এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ আরব বসন্ত। তিউনেশিয়ায় শুরু হওয়া সরকার-বিরোধী আন্দোলন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আরব ভূখণ্ডের সবগুলো রাষ্ট্রে। মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, সৌদি আরব, মরক্কোসহ আরবের কোনো দেশই বাদ যায়নি। ঠিক একইভাবে যে বর্তমানে ইউরোপে চলা জাতীয়তাবাদের উদ্দীপনাও ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে- একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর সে কারণেই সব জরিপ ও মিডিয়ার প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণ করে জাতীয়তাবাদী নেতা ট্রাম্পই শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিতর্কিত ও সমালোচিত বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য করা কঠিন। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন, সেটা তার নীতি, নাকি কৌশল তাও বোঝা যাচ্ছে না। আসলে প্রকৃত ট্রাম্পকে চিনতে আরও কয়েকটা দিন সময় লাগবে।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!