• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ক্ষোভে ফুঁসছে সাদুল্যাপুর

১০ দিনেও খোঁজ মেলেনি চার নেতার


গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৮, ২০১৭, ১০:১২ পিএম
১০ দিনেও খোঁজ মেলেনি চার নেতার

গাইবান্ধা: ১০ দিনেও খোঁজ মেলেনি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও যুবদলের চার নেতার। স্বজনদের দাবি, সাদা পোশাকে  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে, তাদের খোঁজ না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন স্বজনরা। তাদের খোঁজ দাবি করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও।

গত ৯ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাদুল্যাপুর থেকে মোটরসাইকেলে নলডাঙ্গা যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যান সাদুল্যাপুর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মনোয়ারুল হাসান জিম মণ্ডল ও দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদেককে। তারা নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম নয়নের কাছে যাচ্ছিলেন। এদের মধ্যে জিম মণ্ডল উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

এ ঘটনার পরের দিন ১০ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নলডাঙ্গা রেলগেট এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও কাচারীবাজার এলাকা থেকে নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলাকে।

এ ঘটনায় নিখোঁজ চার নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে সাদুল্যাপুর থানায় পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করা হয়। কিন্তু পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারছে না। এমনকি তাদের সন্ধান ও উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন নিখোঁজের স্বজনরা।

নিখোঁজ জিমের স্ত্রী লাভলী বেগম বলেন, ‘সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে আমার স্বামী ও সঙ্গে থাকা সাদেককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। তারা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন তা-ও জানি না।’

তিনি আরো  বলেন, ‘যদি তার স্বামী যদি কোনো অন্যায় করেন, সে জন্য তো আইন-আদালত আছে। তাদের আইনের আওতায় সোপর্দ করা হোক। আইনে তাদের যে সাজা হবে তা-ই মেনে নেব।’

নিখোঁজ সাদেকের মা সাহিদা বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। তারপর ১০ দিন ধরে ছেলে নিখোঁজ রয়েছে। সবখানে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান পাচ্ছি না। আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। এ ছাড়া সে কোনো অপরাধের সঙ্গেও জড়িত না। কিন্তু কেন তাকে তুলে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে বুঝতে পারছি না।’

অপর নিখোঁজ মাইদুল ইসলাম প্রিন্সের বড় ভাই নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘হঠাৎ করে দিনের বেলা আমার ছোট ভাইকে মোটরসাইকেলসহ তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ সুপার, র‌্যাব সবার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার সম্পর্কে তথ্য পাইনি।’

সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান বিপ্লব বলেন, ‘১০ দিন ধরে চার নেতা নিখোঁজ হলেও তাদের সন্ধান ও উদ্ধারে কোনো তৎপরতা নেই পুলিশ প্রশাসনের। অবিলম্বে তাদের সন্ধান দেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন তাদের সন্ধান দিতে না পারলে রাজপথ অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।’

তবে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) বোরহানউদ্দিন জানান, নিখোঁজ চার নেতার সন্ধানে পুলিশ বিভিন্নভাবে কাজ করছে। তাদের উদ্ধারেও নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

গাইবান্ধা সহকারী পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম জানান, নিখোঁজ চার নেতার সম্পর্কে তাদের কাছে এখনো কোনো তথ্য নেই। সাদা পোশাকে তাদের কারা নিয়ে গেছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

এদিকে, চার নেতার সন্ধান দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সাদুল্যাপুর উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ। তাদের সন্ধান দাবিতে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নলডাঙ্গা এলাকায় অর্ধদিবস হরতাল পালন করে সর্বস্তরের জনসাধারণ। এ ছাড়া মানববন্ধন-বিক্ষোভ ও থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!