• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ বছরেও হয়নি ট্যানারি স্থানান্তর, সময় চান মালিকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২২, ২০১৬, ০১:৩৬ পিএম
১৫ বছরেও হয়নি ট্যানারি স্থানান্তর, সময় চান মালিকরা

ট্যানারি শিল্পকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরে স্থানান্তরে পনেরো বছরের শিল্পমালিকদের কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। আদালতে নির্দেশের পরেও কারখানা না সরানোয় ১৫৪ ট্যানারিকে প্রতিদিন জরিমানা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে আদালতের কাছে আরও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করবেন ট্যানারি শিল্প মালিকরা।

এদিকে, ১৫ বছর আগে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও সে আদেশ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ট্যানারি শিল্প মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর ও কাজ শুরু করতে আরও এক বছর সময় লাগবে। সেটি আগামী ২০১৭ সালের মে মাসে শেষ হবে। জুন মাসের মধ্যেই স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদী দূষণমুক্ত রাখতে ২০০১ সালে ট্যানারি সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত স্থানান্তরের সময় বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও ট্যানারি স্থানান্তরিত না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে গত বছরের ২১ এপ্রিল আদালতের তলবে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন শিল্পসচিব।

গত ১৩ এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগে তখনো যেসব ট্যানারি ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের তালিকা চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের এ আদেশ অনুসারে গত ১৬ জুন ১৫৫টি ট্যানারির তালিকা দাখিল করেন শিল্পসচিব। এর মধ্যে কেবল রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড ইউনিট-২ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে, বাকি ১৫৪টি ট্যানারি সদম্ভে চলছে হাজারীবাগে।

তবে সম্প্রতি, হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। হাজারীবাগে থাকা ১৫৪ ট্যানারি মালিকের প্রত্যেককে জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। 

এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাজারীগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নিতে আদালতের কাছে আরও এক বছর সময় চাইবেন ট্যানারি মালিকরা। এবং এর পাশাপাশি ট্যানারি স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়া মালিকদের কাছ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ হাজার জরিমানা আদায়ের কার্যক্রম থেকেও অব্যাহতি চাইবেন।

কি কারণে সাভারে স্থানান্তর হতে তাদের এই দীর্ঘ সময় লাগবে, সাভার বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর প্রকৃত উন্নয়ন কাজ কোন পর্যায়ে রয়েছে, কেন তারা এখনই যেতে চান না কিংবা গেলে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে গিয়ে সাভারের চারটি নদীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের কতটা সুরক্ষা হবে- সেসব বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ আদালতের কাছে করা আপিলে তুলে ধরবেন ট্যানারি মালিকরা। আপিলে যাওয়ার বিষয়ে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

সূত্র মতে, ট্যানারি স্থানান্তরে ব্যর্থতার জন্য সাভার বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক দায়ী করেন চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তারা। তার মনে করেন, উচ্চ আদালত ট্যানারি স্থানান্তরে যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তার দায় এই প্রকল্প পরিচালক কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। 

চামড়া শিল্পোদ্যোক্তারা মনে করেন, তিনি প্রকল্পের দ্রুত উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। যতটা উন্নয়ন হয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ে কিংবা গণমাধ্যমের কাছে তারচেয়ে বেশি বলেছেন। এর ফলেই ট্যানারি শিল্পের ওপর এই খড়গ নেমে এসেছে। তাদের মতে চামড়া শিল্পের মতো একটি ভারি শিল্প কেউ বললেই তা সাথে সাথে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না।

সাভারে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি, সেখানে গ্যাস পানি বিদ্যুৎ না থাকায় শিল্প স্থানান্তর করে কোনো লাভ নেই। তবে প্রকল্পের কাজ আজকে শতভাগ শেষ হলেই কালকেই তারা সরিয়ে নেবেন। জানা গেছে, সাভারের হেমায়েতপুরে ২০০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন চামড়া শিল্পনগরীতে ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি কারখানা স্থাপন করা হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিসিক। বিসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দূষণের হাত হাফ ছেড়ে বাঁচবে ঢাকা ও বুড়িগঙ্গা। প্রকল্প এলাকায় ওয়েস্ট ডাম্পিং ইয়ার্ড, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), সড়ক, সড়কবাতি, ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন, ছোট কালভার্ট, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনসহ নানা অবকাঠামোর কাজ চলমান আছে।

এদিকে, সাভার চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতাকেই হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর না হওয়ার পেছনে দায়ী করছেন ট্যানারি মালিকরা। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) সাভার চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ শিল্পনগরীর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে।

নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। এর পরেও কাজ শেষ হয়নি। পরে ব্যয় না বাড়িয়ে আবারও ২০১২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন হয় একনেকে। এ সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!