• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বহুমুখী চ্যালেঞ্জেও দৃঢ়প্রত্যয়ী গণশিক্ষা সচিব


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০, ০১:১৯ পিএম
বহুমুখী চ্যালেঞ্জেও দৃঢ়প্রত্যয়ী গণশিক্ষা সচিব

ঢাকা: শেষ ভালো যার সব ভালো তার। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে একের পর এক আশ্বাস আর গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই প্রবাদ বাক্যের সার্থকতা অর্জনে শেষ হাসি হাসতে চান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন। তাই মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নানা ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুসারে, করোনা হানায় বিপর্যস্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতের মন্থরতা দূর করতে অবসরে যাওয়ার আগে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ব্যাপারে নিজের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এদিকে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, বিগত কয়েক মাসে সংশ্লিষ্ট খাতের গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে একের পর এক আশ্বাস দিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে সেভাবে গতিরসঞ্চার হয়নি। এদিকে ঘনিয়ে এসেছে বর্তমান সচিব আকরাম-আল-হোসেনের বিদায়ের সময়। আগামী ১ নভেম্বর থেকে আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে থাকবেন না তিনি। অভিযোগ উঠছে, গত ছয়মাসেরও বেশি সময় ধরে শুধু প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন গণশিক্ষা সচিব। ফেসবুক টিভি, আইপি টিভি, বেসরকারি টিভি, প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকার দিয়ে চলছেন। সমানে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে বাস্তবায়নে বিশেষ অগ্রগতি চোখে পড়ছে না কোথাও। তবে সচিব বকছেন, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়া নির্দিষ্টি করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারনেই পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কাজের গতি।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতির চূড়ান্ত সুখবর দিলেন সচিব

লক্ষ্যপূরণে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আল-হোসেনের সামনে যে বিষয়গুলো নিয়ে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, প্যানেলে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ কার্যক্রম, দায়িত্বরত প্রধানশিক্ষকদের পদোন্নতি ও প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণীতে উত্তীর্নকরণের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া নির্ধারণসহ আরও বেশকিছু বিষয়। এরইমধ্যে দ্রুততার সঙ্গে বিষয়গুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা প্রদানে মন্ত্রণালয়ের তৎপরতার কথাও জানা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের কোন প্রস্তাব বিবেচনার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে এসব তথ্য জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যা বললেন সচিব

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব জানান, যদিও এক শ্রেণির প্রতারক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হবে বলে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়ে নিরীহ শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।

সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘােষণা অনুযায়ী ২৬, হাজার ৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিন ধাপে জাতীয়করণ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৪ হাজার জন শিক্ষককে আত্তীকরণ করা হয়। সার্বজনীন ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রয়ােজন হলে সরকার নিজ উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনসহ শিক্ষক নিয়োগ করবে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের আর কোন প্রস্তাব এ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনা করার সুযােগ নেই।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষকরা উত্তোলিত টাইমস্কেল ফেরত দিতে চান না

এতে আরো বলা হয়, কোন কোন স্বার্থান্বেষী মহল বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হবে মর্মে প্রচারণা চালিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহ করছে, যা অনভিপ্রেত। 

বিভিন্ন ভূইফোঁড় প্রিন্ট, অনলাইন, ফেসবুকটিভি ও ফেসবুক পেইজে প্রচারণা চালিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আদায় করছে কতিপয় ব্যক্তি।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ভিসি, ঢাকার বাইরে কারিগরি কলেজের একজন অধ্যক্ষ ও কতিপয় নামধারী সাংবাদিককে ডেকে ভুয়া অনলাইনে টকশোর মাধ্যমে সরকারিকরণের দাবি করে আসছে।

আরও পড়ুন: বিদ্যালয় খোলা ও অটোপাস নিয়ে বিস্তারিত জানালেন প্রতিমন্ত্রী

যেকোনো ধরণের বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় প্ররোচিত না হতে এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের কোন আবেদন, সুপারিশ, প্রতিবেদন এ মন্ত্রণালয়ে না পাঠাতে বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে অনুরোধ করেছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে প্যানেলে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কেও মন্ত্রণালয়ের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন আকরাল-আল-হোসেন।

প্রাথমিকে প্যানেলে শিক্ষক নিয়োগের কোনও সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন। রোববার তিনি এই বিষয়টিও আলোচনায় এনেছেন। সচিব বলেন, আমরা যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম সেখানে প্যানেলে নিয়োগের বিষয়টি ছিল না। যে কারণে প্যানেলে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা কোনওভাবে সম্ভব না।

তিনি জানান, আমরা প্রাথমিকে আরও শিক্ষক নিয়োগের জন্য কাজ শুরু করেছি। খুব দ্রুতই এটা বিজ্ঞাপন আকারে জারি হবে। আমাদের প্রি-প্রাইমারির ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন আছে। এছাড়া জুন থেকে এখন পর্যন্ত যে শূন্যপদ হয়েছে সেগুলো ধরে আমরা একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেবো।

এদিকে দীর্ঘ দিন ধরেই নতুন করে বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে প্যানেলের মাধ্যমে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে ২০১৪ সালের স্থগিত ও ২০১৮ সালে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। প্রার্থীরা ভাষ্য মতে, ২০১৪ সালে স্থগিত ও ২০১৮ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ প্রার্থী। এতে মোট উত্তীর্ণ হন ২৯ হাজার ৫৫৫ জন প্রার্থী। শূন্যপদ থাকার পরও নিয়োগ দেওয়া হয় মাত্র ৯ হাজার ৭৬৭ জনকে। এই পরীক্ষায় পাসের হার ছিল মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ। উত্তীর্ণ ১৯ হাজার ৭৮৮ জন আজও প্যানেলভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্যানেল প্রত্যাশীরা আরও জানান, পদ শূন্য থাকার পরও ২০১০-২০১১ সালের প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগ না দিয়ে ২০১৪ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। সে কারণে ওই সময়ের প্যানেল প্রার্থীরা মামলা করেন। সেই মামলা জটিলতায় ২০১৪ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরবর্তী চার বছর স্থগিত রাখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মামলার রায়ে প্যানেলভুক্ত ৪২ হাজার ৬১১ জনকে ২০১৮ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আবারও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনেকের জীবন থেকে চার বছর নষ্ট হয়ে যায়।

তাদের দাবি, বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। করোনাকালে তীব্র শিক্ষক সংকট দূর করতে যোগ্য ও বঞ্চিত প্রার্থীদের প্যানেলের মাধ্যমে শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে চাকরি দিতে চান, অথচ মন্ত্রণালয় বেকার বানিয়ে রেখেছে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে প্যানেল পদ্ধতি চালুর সুপারিশও করে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

আলোচিত বিষয় দু’টি প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান পরিষ্কারভাবে উঠে আসলেও বিপত্তি রয়ে গেছে দায়িত্বরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের পদোন্নতি ও করোনা পরিস্থিতিতে মূল্যায়ণ পরীক্ষা বাতিল ঘোষিত হওয়ায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণকরণ ও ভর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্বরত শিক্ষকদের শিগগিরই পদোন্নতি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে জানা গেছে, পদোন্নতির কাজ এখনো অনেকটাই বাকি।

এ ব্যাপারে তিনি সংবাদিকদের জানিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দেয়া শিক্ষকদের চূড়ান্ত তালিকা যাচাই-বাছাই করে শিগগিরই সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হবে। পিএসসি অনুমোদন দিলেই চূড়ান্ত তালিকা ধরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাদের পদোন্নতি দেয়া হবে।

যদিও জানা গেছে, কিছুদিন আগে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে। সে তালিকা এখনো গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি অধিদপ্তর। অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির করায় তাদের পদোন্নতি দিতে পিএসসির সুপারিশ লাগবে। ডিজি অফিস কাগজপত্র পাঠালে এবং কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পিএসসিতে পাঠাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পিএসসি অনুমোদন দিলে পদোন্নতি দেয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাত সম্পর্ক প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৯৯টি। এছাড়া তিনটি ধাপে নিবন্ধিত ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে যেগুলোতে প্রধান শিক্ষক নেই, সেসব বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী শিক্ষকদের। বর্তমানে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ১৮ হাজার শিক্ষক। এছাড়া নতুন সরকারি হওয়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রায় এক হাজার শিক্ষক সহকারী শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। এ শিক্ষকরাও প্রধান শিক্ষক হিসেবে গ্রেডেশন পেতে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!