প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগ

  • ময়মনসিংহ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের ভেতর বসেই ব্যক্তি মালিকানাধীন কিন্ডারগার্টেনগুলোর প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হয়েছে-এমন অভিযোগ ঘিরে তুমুল আলোচনায় সরব স্থানীয়রা। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় দেখা যায়।

উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশে দোতলা ভবনটি। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে ভবনের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, কিন্ডারগার্টেন মালিকদের দীর্ঘ লাইন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলো থেকে মালিকরা এসেছেন প্রশ্নপত্র কিনতে। কেউ হাতে টাকা, কেউ আবার প্যাকেট হাতে অপেক্ষা করছেন।

কয়েকজন কিন্ডারগার্টেন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আগে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করত। কিন্তু এবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা অফিস থেকে প্রশ্নপত্র কিনতে নির্দেশ দেন। 

তারা বলেন, স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়-যে প্রতিষ্ঠান প্রশ্নপত্র কিনবে না, নতুন বছরের সরকারি বই দেওয়া হবে না। এ কারণে বাধ্য হয়েই প্রতিসেট ১৫ টাকা করে প্রশ্নপত্র কিনতে হয়েছে।

নান্দাইল উপজেলা সদর ও আশপাশে ১৩৪টি ছোট-বড় কিন্ডারগার্টেন আছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষার্থীও রয়েছে। ফলে প্রশ্নপত্র বিক্রির এই ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে বসে প্রশ্নপত্র বিক্রি করছিলেন নাজমুল হোসেন। তিনি স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিস থেকেই এসব প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। কারা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, “তখন শিক্ষা কর্মকর্তারা অফিসে ছিলেন।” তবে এসব প্রশ্নপত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হয় কি না-এ প্রশ্নে তিনি স্পষ্টভাবেই ‘না’ বলেন।

নাজমুল আরও জানান, সরকারি বই পাওয়ার জন্য প্রশ্নপত্র কেনার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্ডারগার্টেন মালিকরাই নাকি সেটি চান বলে শিক্ষা অফিস প্রশ্নপত্র দিয়েছে।

নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. ফজিলাতুন্নেসা বলেন, “এখানে তো প্রশ্ন বিক্রি করার কথা নয়। আমি তো বিষয়টি দেখি নাই।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি জানান, বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সোমবার তাঁর কার্যালয় থেকে উপজেলার ১৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে তিনি এ সময় কার্যালয়ে ছিলেন না, স্কুলসংক্রান্ত কাজে বাইরে ছিলেন।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল জানান, “কিন্ডারগার্টেনের কিছু শিক্ষক একটু জায়গা চেয়েছিলেন, আমি নিচতলার বারান্দায় বসে বিক্রির অনুমতি দিয়েছি।” তবে কার নির্দেশে প্রশ্নপত্র এসেছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে-সরকারি একটি অফিসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নপত্র বিক্রি হলো কীভাবে? দায়িত্বশীলদের ব্যাখ্যা নিয়েও অস্পষ্টতা কাটছে না।

এসএইচ