• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ফড়িয়াদের কারসাজিতে ঠকছে চাষীরা

গ্রামের সবজি নগরে ঢুকলেই দ্বিগুণ দাম


বরিশাল ব্যুরো নভেম্বর ১৪, ২০২০, ১২:২৬ এএম
গ্রামের সবজি নগরে ঢুকলেই দ্বিগুণ দাম

বরিশাল : বরিশালে মধ্যস্বত্তভোগীদের ফাঁদে পড়ে ঠকছেন সবজি চাষীরা। ৮ কিলোমিটার দুরের গ্রামের সবজি নগরে এসেই দাম বেড়ে যায় দুই থেকে ৩ গুন।

বিভিন্ন হাটের ইজারাদার এবং সবজি চাষীদের তথ্যমতে, এক আটি লাল শাক ফড়িয়ারা কিনে নেন গড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে। সেই লাল শাকই নানা হাত ঘুরে বরিশাল নগরীতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। মাঠপর্যায়ের চাষীরা এভাবে যুগ যুগ ধরে ন্যাজ্য দাম না পেলেও দেখার যেন কেউই নেই।

বাবুগঞ্জের চাঁদপাশার এক সময়ের লাভবান সবজি চাষী জসিম উদ্দিন বলেন, সবজির সেই জৌলস এখন আর নেই। তারপরও যেটুকো উৎপাদন হয় তার কদর বরিশাল জুড়ে। তার দেয়া তথ্যমতে, চাঁদপাশায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় মানকচু। এর কদর সর্বত্র। এখানকার এক পিচ মাঝারী আকৃতির কচু কৃষক বিক্রি করেন ১৫০-২০০ টাকা। বরিশাল নগরীতে যার দাম কমপক্ষে ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, লাল শাক চাষীরা হাটে ফড়িয়াদের কাছে গড়ে ১০ টাকা দরে বিক্রি করেন। নগরীতে যা ৩০ টাকা আটি।

একইভাবে চাষীরা পালন শাক আটি প্রতি ১২-১৫ টাকায় বিক্রি হলেও নগরীর বাজারে তা বৃহস্পতিবার রাতে বিক্রি হতে দেখা গেছে ৩০ টাকায়। মুলা শাক আটি প্রতি ৫ টাকার স্থলে ১৫ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা, পুইশাক ২৫-৩০ টাকার বিপরীতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কুমাড় শাক ৩০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা, ধুনে পাতা কেজি প্রতি ১০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা।

জানা গেছে, বাবুগঞ্জের লাকুটিয়া, বাবুরহাট, শার্ষি, মোগনগঞ্জ, রহমতপুর হাটে এসব শাক বিকিকিনী হয়। রহমতপুর বাজারে ফড়িয়াদের কাছে শাকসবজি বিক্রি করতে আসেন ওই এলাকার চাষী রজব আলী।

তিনি বলেন, এখন আর আগের মত সবজি হয় না। নানা কারনে তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর প্রধান কারন ন্যাজ্য দাম পান না সবজির। এসব কারনে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে লাকুটিয়া বাজারে দেখা গেল কয়েকজন কৃষক পুইশাক, লাউ, চাল কুমড়া, মিস্টি কুমড়া, মানকচু, বেগুন, কাচা কলা, ঝিঙ্গে নিয়ে এসেছেন। মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মাথয় তা কিনে নিলো ফড়িয়ারা।

সেখানকার একাধিক চাষী এবং বাজারের ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাট বসে বুধবার। কিন্তু আগের দিন বিকেলেই ফড়িয়ারা অপেক্ষায় থাকেন। চাষী সবজি নিয়ে এলেই তা স্বল্প দামে কিনে শহরে চড়া দামে বিক্রি করেন। চাষীরাও নিয়মিত এই ক্রেতা পেয়ে আর অপেক্ষা করেন না। যেকারনে লাকুটিয়ায় হাটের দিন বুধবার এখন আর তেমন সবজি বেচাকেনা জমে না।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরী থেকে ৮ কিলোমিটার দুরের বাবুগঞ্জের লাকুটিয়া বাজারে চাষীরা মাঝারি সাইজের প্রতি পিচ লাউ ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সেই লাউ নগরীর নতুন বাজার, চৌমাথা বাজারে বৃহস্পতিবার বিক্রি হতে দেখা গেছে প্রতি পিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

একইভাবে চাল কুমড়া প্রতি পিচ ৩০ টাকার স্থলে নগরীতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। যে মিস্টি কুমড়ার ঝাঝে এখন নগরীতে কেজি প্রতি বিক্রি চলছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, সেই কুমড়া কৃষক পিচ বিক্রি করেন লাকুটিয়ায় ৬০ টাকা। ৪০ টাকার বেগুন মাঠ থেকে নগরীতে এনে বিক্রি চলছে এক দর ৭০ টাকা, কাচা কলা হালি প্রতি ২৫ টাকার স্থলে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

কেন এতো দামের ফাঁড়াক জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার নগরীর নতুন বাজারের সবজি বিক্রেতা হালিম মজুমদার বলেন, তারাও ফড়িয়াদের কাছ থেকে সবজি কিনেন। ফড়িয়ারা পরিবহনে করে তাদের দিয়ে যায়। কয়েকটা হাত ঘুরে নগরীর বাজারে শাকসবজির দামের হেরফের দেখা যায়।

আফজালুল করিম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবজির দাম নিয়ন্ত্রনে নেই। ফুটপাত দখল করে যেমন ইচ্ছে তেমন দামে সবজি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

বিক্রেতাদের তথ্যমতে, বরিশাল নগরীতে বাবুগঞ্জের মত স্বরুপকাঠীর আটঘর, বানারীপাড়া থেকেও শাকসবজি আসে। এসব জায়গার চাষীরাও এভাবে মধ্যস্বত্তভোগীদের কারসাজিতে ঠকছেন। তবে এই মুহুর্তে বাজারে যেসব শীতের সবজি উঠেছে তা যশোর, খুলনা, চিতলমারি থেকে আসা বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে বরিশাল জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এ এস এম হাসান সরোয়ার শিবলি বলেন, চাষীরা যাতে ফসলের দাম পায় এজন্য মাঠ পর্যায়ে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। নগরীর নির্দিস্ট স্থানে একটি বাজার করা যায়। যেখানে চাষীরা সবজি এনে নেয্য মুল্য বিক্রি করবেন। তিনি বলেন, শীতের সবজি আসায় সবজির দাম কমছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!