• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার পরিবার

তিস্তার পানি ১২ ঘণ্টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে  


লালমনিরহাট প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১, ০৭:৩৩ পিএম
তিস্তার পানি ১২ ঘণ্টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে  

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে উজানের পাহাড়ি ঢলে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্যারাজ রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক খুলে দেয়া হয় সব’কটি জলকপাট। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৫ মিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ মিটার)। যা বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তায় মাত্র ১২ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৬০ সেন্টিমিটার। তবে পানি প্রবাহ কমে দুপুর ১২ থেকে এ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি ভারতে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। উজানে ভারতের অংশে ভারত সরকার বাধ নির্মাণ করে নদী এক তরফা ভাবে ব্যবহার করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে কোন পানি থাকে না। ফলে মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা। আবার বর্ষাকালে অতিবর্ষণের ফলে ভারতের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা আর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে

লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৬ টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯০ মিটার। এর তিন ঘণ্টা পরে আরও ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে সকাল ৯টায় এ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯৫ মিটার। যা বিপৎসীমার ৩৫সেন্টিমিটার ওপরে। ফলে ব্যারাজ রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক সব জলকপাট খুলে দিয়ে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ১৫ হাজার পরিবার।      

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনার লকডাউনে দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকায় বন্যার জন্য গচ্ছিত খাদ্য শেষ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিস্তা চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ। ঘরের ভেতর হাঁটু পানি। রান্না করার উপায় নেয়। শুকনো খাবারের প্রয়োজীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়নি। খবর নিয়ে জানাগেছে, কেউ এক বেলা খেয়েছেন আবার কেউ বিকাল পর্যন্ত না খেয়েই আছেন। গবাদি পশু পাখি নিয়েও চরম কষ্টে পড়েছেন পানিবন্দি তিস্তা পাড়ের মানুষ। বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে আমন ধানের চারা। যা পানিতে পচে নষ্টের শঙ্কায় চাষিরা।

বন্যা কবলিত তিস্তা পাড়ের আজহার আলী বলেন, আমনের চারা বানের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। মেম্বরকে (ইউপি সদস্য) আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। কিন্তু কোন ত্রাণ পাইনি। তিস্তা পাড়ের মনিরুজ্জামান বলেন, তিন দিন ধরে পানিবন্দি আমরা। শুকনো খাবার নেই। খাবারের জন্য ৩৩৩ নম্বরে কয়েকবার কল করেছি। লাইন বিজি, কল ঢোকে না।

জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, আমি নিজেই কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি। আমার ওয়ার্ডে ৫০০ পরিবার পানিবন্দি। যার মধ্যে প্রায় ৩০০ পরিবার ত্রাণের জন্য আইডি কার্ড দিয়েছেন। কিন্তু বরাদ্ধ না আসায় তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারিনি।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে মাত্র ১২ঘন্টার ব্যবধানে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তখন পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজ রক্ষায় সকল জলকপাট খুলে করা হয়। এতে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে পানি প্রবাহ দ্রুত কমতে শুরু করেছে বলেও তিনি জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!