নড়াইল: চিত্রা নদীর পাড়ে বসে ক্যানভাসে রঙতুলি চালিয়ে ছোট ছোট হাতে ফুটে উঠছে একেকটি কল্পনার জগৎ। কেউ আঁকছে লাল-কমলা রোদ্দুরে ঝলমল সূর্য, কেউ তুলির টানে নদীপথে ভেসে চলা পালতোলা নৌকা।
আবার কারও চিত্রে ধরা পড়ছে সোনালি ধানের খেত কিংবা ঘামে ভেজা কৃষকের মুখ। শিশুর চোখে গ্রামের প্রকৃতি ধরা দিচ্ছে এক অপূর্ব রঙে, এক স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতে।
শুক্রবার সকালে এমন দৃশ্য দেখা গেল নড়াইল শহরের বাঁধাঘাটে, চিত্রা নদীর তীরে। ‘বৈশাখে রাঙিয়ে দাও বাংলাদেশ’ স্লোগানে সেখানে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর। স্থানীয় শিল্পসংগঠন ‘চারুনীড়’-এর এই আয়োজনে অংশ নেয় পঞ্চাশের বেশি শিশু।
মুক্ত আকাশের নিচে আপন মনে ছবি আঁকে শিশুরা। পরে নিজের আঁকা ছবি প্রদর্শনীতে দেখে তারা খুশিতে উচ্ছ্বসিত। ছবি আঁকা শেষে অনন্যা নামে এক শিশু বলেন, 'গাঁয়ের বধূরা ঘাট থেকে জল আনছে, ছোট ছেলেমেয়েরা নদীতে সাঁতার কাটছে, পাশ দিয়ে পাল তোলা নৌকা যাচ্ছে ' -এখানে এমন একটি ছবি আমি এঁকেছি। তাছাড়া আজকের প্রদর্শনীতে আমার আঁকা একটি ছবিও রয়েছে- এটি দেখে খুশি হয়েছি।
আরেক শিশু প্রতিযোগী বলেন, 'আমার মত অনেকে ছবি আঁকতে এসেছে। দেখে খুব ভালো লাগছে৷ সবাই সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকেছে, আমিও এঁকেছি।'
শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও প্রদর্শনী দেখতে আসেন অভিভাবক ও দর্শনার্থীরা। শিশুদের আঁকা ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁরা । কিছু অভিভাবক ও দর্শনার্থী ছবিগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন, যেন প্রতিটি ছবির মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলেন একাত্মতা ও নতুন দৃষ্টি। একে অপরকে ছবির ভিন্নতা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তাঁরা, যা প্রদর্শনীর এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।
নূপুর বিশ্বাস নামে এক অভিভাবক বলেন, 'সাধারণত বাচ্চারা ছবি আঁকলেও তা প্রদর্শিত হয় না। এখানে বাচ্চাদের আঁকা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে তাঁরা ছবি আঁকার প্রতি উৎসাহিত হবে, সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
আয়োজকরা জানায়, শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখাতে এবং উৎসাহ দিতে নবম বারে মত 'চারুনীড়' শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর এই আয়োজন করে আসছে। এ বছর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও দিনভর চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অর্ধশতাধিক শিশু নিয়েছে এবং চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে শিশুদের হাতে আঁকা অর্ধশত চিত্র রাখা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সকলের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আয়োজকের একজন নাজমুল হাসান লিজা বলেন, প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতায় শিশুদের আঁকা ছবি ফ্রেমে বাঁধায় করে প্রদর্শনীতে টানানো হয়। এখানে এসে নিজেদের অঙ্কিত ছবি দেখে ওরা আনন্দ অনুভব করে। সেইসঙ্গে আমরা ওদেরকে আমরা একটি ক্যাটালগ দেয়। ক্যাটালগটি যদি সংরক্ষণ করতে পারে, আজ থেকে বিশ বছর পর ওই শিশু নস্টালজিয়ায় ফিরে যাবে এই ভেবে যে, 'আমি এই ছবিটি এঁকেছিলাম '। তাছাড়া এখন যে বিষয়ে পড়াশোনা করা হোক না কেন প্রত্যেকের জন্য আঁকাজোকা জানা অবশ্যক। তাও ছোটবেলা থেকেই আমরা শিশুদের অঙ্কন শেখানোর চেষ্টা করছি।
এআর