ছবি: প্রতিনিধি
পাবনার ঈশ্বরদীতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। হাট-বাজারে দেশি পুরোনো পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। শুক্রবার এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে আজ শনিবারও দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোথাও পাওয়া গেলেও দাম রাখা হচ্ছে কেজিতে ১৬০ টাকা।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার খুচরায় দেশি পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকায়। কিন্তু শুক্রবার পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু আড়তে থাকলেও পাইকারিতে দাম ধরা হয় ১৫০ টাকা। সেই পেঁয়াজই শনিবার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাজারেও একই চিত্র। বৃহস্পতিবার যার পাইকারি দাম ছিল ৭০ টাকা, তা শুক্রবার বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে কেজি ১২০ টাকায়। এক দিনের ব্যবধানে উভয় ধরনের পেঁয়াজের দামই বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা।
শুক্রবার ও শনিবার সরেজমিনে শহর এবং আশপাশের হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের খুচরা ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। ক্রেতা মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার ১১৫ টাকায় যে দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন, আজ কিনতে হচ্ছে ১৬০ টাকায়। দাম বাড়ায় তিনি পরিমাণেও কম পেঁয়াজ কিনছেন।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়াতেই দাম চড়ছে। আড়তদাররা দাবি করেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। একই সঙ্গে আগাম রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজের একটি বড় অংশ সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই।
কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কয়েক মাস ধরে দেশি পেঁয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা মিটছে। কিন্তু এখন মৌসুমের শেষ দিকে মজুদ কমে আসায় দাম বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাইকারিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছিল ৭০ টাকা, দেশি পুরোনো পেঁয়াজ ১১০ টাকা। কিন্তু শুক্রবার সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তে থাকে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
ঈশ্বরদীর কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের মতে, পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী—এসব উৎপাদন এলাকাতেই দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ঈশ্বরদীর বাজারে। দীর্ঘদিন মাচায় মজুদ থাকা পেঁয়াজ শুকিয়ে ওজনে কমে যায়। ফলে ব্যাপারী ও কৃষক পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
দেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। আগাম রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, তাই দ্রুত বাজারে আসে। এরপর একই জমিতে রোপণ করা হয় হালি বা বীজ পেঁয়াজ, যেগুলো মাচায় দীর্ঘদিন রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ আমদানিতে আইপি না দেওয়ায় বাজার সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মমিন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ পর্যাপ্ত বাজারে আসেনি। কৃষকদের মাঠে মজুদও কমে গেছে। তবে এবার আগের তুলনায় বেশি জমিতে পেঁয়াজ রোপণ হওয়ায় মৌসুমের শেষদিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তাঁর মতে, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে।
এসএইচ







































