আপন আলোয়
শেরপুর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধনী দেশের তরুণীরা নিত্যদিনেই প্রেমে পড়েছেন বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশের তরুণদের। তারা প্রেমের টানে একে একে ছুটে আসছেন এদেশের গ্রামে গঞ্জে। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হলেন রুশ তরুণী সিভেতলেনা।
শেরপুরের ইসকন মন্দিরের সেবক ধর্মকান্ত সরকারের প্রেমের টানে সুদূর রাশিয়া থেকে ছুটে এসেছেন সিভেতলেনা। প্রেমিক ধর্মকান্তের গলায় মালা পরিয়ে বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে।
শুক্রবার (৩০ জুন) রাত ৯টায় শেরপুর শহরের গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গনে সনাতন ধর্মমতে যজ্ঞ সম্পাদন করে সিভেতলেনা ও ধর্মকান্তের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন, শেরপুর শাখার সদস্যরা।
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বর ধর্মকান্তের পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধব ও ইসকন ভক্তসহ প্রায় চার শতাধিক অতিথি। তাদের খাবারের তালিকায় ছিল পুষ্প অন্ন, ভুনা খিচুরি, সয়াবিনের রসাসহ ১৪ প্রকারের নিরামিষ।
প্রেমিক ধর্মকান্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের ধীরেন্দ্র কান্ত সরকারের ছেলে। কনে সিভেতলেনা জন্মসূত্রে রুশ। তিনি মস্কোতে অবস্থিত ও ইসকন প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা মন্দিরে গুরুদেব আনন্তাকৃষ্ণা মহারাজের কাছে আসতেন ও ইসকনের নিয়মানুযায়ী মন্দিরের বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পারিবারিক ও ইসকন মন্দির সূত্রে জানা গেছে, ধর্মকান্ত সরকার ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাসের পর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য রাশিয়ায় যান। মস্কোর আছরাখান টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখানে তেল-গ্যাস-পেট্রল জ্বালানি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর ব্যবসা শুরু করেন। এর মধ্যেই যাওয়া আসা শুরু করেন মস্কোর 'ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণা কন্সিয়াসনেস' (ইসকন) প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা মন্দিরে। বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্তও হন। ২০১৩ সালে মন্দিরের গুরুদেব আনন্তাকৃষ্ণা মহারাজের মাধ্যমেই রুশ তরুণী সিভেতলেনার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে দুজনের মধ্যে ই-মেইলে আলাপচারিতা।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ধর্মকান্ত দেশে চলে এলেও দুইজনের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। এর সূত্র ধরে মাস খানেক আগে বাংলাদেশে আসেন সিভেতলেনা। তারা কিছুদিন সন্ন্যাসীভিটায় থেকে চলে আসেন শেরপুর শহরের ইসকন মন্দিরে। দুইজনই যুক্ত হন মন্দিরের সেবামূলক কাজের সঙ্গে। পরে তারা পরস্পরের ইচ্ছায় প্রেমকে পরিণয় দিতেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সনাতন ধর্মীয় আচার অনুযায়ী শুক্রবার রাতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বর্তমানে মস্কোতে হোটেল ব্যবসায় নিয়োজিত ধর্মকান্ত সরকার জানান, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার আইন অনুসারে তারা বিয়ের জন্য নিবন্ধনের আবেদন করেছেন। দীর্ঘদিনের জানাশোনা থেকেই পরস্পরের গলায় মালা পরিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুইজনই নিরামিশাষী এবং ইসকন অনুসারি। দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার জন্য সবার প্রার্থনা কামনা করেছেন।
শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য বলেন, প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসা রুশকন্যা সেভেতলানার সঙ্গে ধর্মকান্ত সরকারের বিয়ে হিন্দুধর্মমতে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা তাদের সুখী দাম্পত্যজীবন কামনা করি।
শেরপুর ইসকনের সেবায়েত অপূর্ব জগন্নাথ দাশ ব্রহ্মচারী জানান, শুক্রবার রাত ৯টায় গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মকান্ত সরকার ও সিভেত লেনার বিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ভালোবাসার পরিণতি বিয়েতে রূপ পেয়েছে।
সোনালীনিউজ/এন







































