ফাইল ছবি
বান্দরবান থেকে আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত থেকে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, আলোচিত ওই নারী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও পুরোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য যাচাই করে এই পরিচয় নিশ্চিত করেছে সিআইডি।
ঘটনার পর থেকেই হরিরামপুরের বয়ড়া ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। স্থানীয়দের কাছে এই নাম নতুন নয়— তারা বলছেন, প্রায় এক যুগ আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল এই নারীর। তার প্রথম স্বামী ছিলেন নদীতে মাছধরা শ্রমজীবী মানুষ। বিয়ের দুই বছর পর ডিভোর্স হয়, এরপর এক লাখ টাকা নিয়ে সে চট্টগ্রামে চলে যায়। তারপর সে ফরিদপুরে নানির বাড়িতে কিছুদিন ছিল, এরপর হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এরপর থেকে এলাকাবাসী তাকে আর দেখেননি।
বয়ড়া ইউনিয়নের ট্রলারচালক হাশেম মাঝি বলেন, ‘আজ থেকে আট বছর আগে ও ডিভোর্স দেয়। স্বামী লোকটা ভালো ছিল, নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাত। ওই মেয়ের জন্যই তার সংসার ভেঙে যায়। কাবিনের টাকা নিলেও আরও কয়েক লাখ টাকা নষ্ট করেছে। ওর পরেই লোকটা পথে বসে।’
পাশের গ্রামের মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিয়ের পর দুই বছর ওর স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলত। পরে শহরের ছেলেদের সঙ্গে মিশতে শুরু করে। আমরা ভাবতাম হয়তো কাজ করছে, কিন্তু এখন শুনছি ও ভিডিও বানাত!’
স্থানীয় কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই একটু অন্যরকম ছিল। সাজগোজে আগ্রহী ছিল, শহরে যেতে চাইত। এখন যা শুনছি, মনে হয় বাইরে গিয়ে ভুল পথে চলে গেছে।’
লেছড়াগঞ্জ চরাঞ্চলের সাবেক মেম্বার রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওর বাবা এখনো চরে থাকে, জেলে মানুষ। সরল-সোজা লোক। মেয়ের এই কাজের খবর শুনে সে খুব লজ্জায় আছে। কয়েক দিন মাছ ধরতেও যায়নি। আমরা ওকে কিছু বলি না, মানুষটা কষ্টে আছে।’
রওশন বেগম, যিনি একসময় সেই নারীর প্রতিবেশী ছিলেন, বলেন, ‘ছোটবেলায় শান্ত ছিল। নানির বাড়িতে যেত, হাসিখুশি মেয়েটা। পরে শুনলাম প্রেম করে বিয়ে দিয়েছে, আবার ডিভোর্স। এখন যা শুনি, তাতে ভয় লাগে।’
স্থানীয় কলেজছাত্র ইমরান সিকদার বলেন, ‘আমরা ভাবতাম, টিকটক-ইউটিউব করে হয়তো টাকা কামায়। কিন্তু এখন দেখি এটা অপরাধ। অনলাইনে কী হচ্ছে, সেটা অনেকেই জানে না।’
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দম্পতি গত বছর মে মাস থেকে অনলাইনে সক্রিয় হন। তারা শুধু একটি নয়, একাধিক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে কনটেন্ট প্রকাশ করতেন। টেলিগ্রাম ও ইনস্টাগ্রামেও তাদের নিজস্ব চ্যানেল ছিল, যেখানে নতুন ভিডিওর লিংক ও আয়ের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হতো।
অনুসন্ধানী প্ল্যাটফর্ম দ্য ডিসেন্ট জানায়, এক বছরের মধ্যেই তারা শতাধিক ভিডিও প্রকাশ করে বিপুল দর্শক ও অনুসারী অর্জন করেন। তরুণদের “অর্থ উপার্জনের সুযোগ” দেখিয়ে অনেকে এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘এই ঘটনা আমাদের সমাজের জন্য বড় সতর্কবার্তা। অনলাইন জগতে কী হচ্ছে, অভিভাবকরা জানেন না। মেয়েটা হয়তো ভুল পথে গিয়েছিল, কিন্তু এ দায় শুধু তার নয়- সমাজ ও পরিবার দুটোরই।’
এলাকার মানুষের মুখে এখন বিব্রত নীরবতা। গ্রামের বাজারে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চায় না। কেউ বলে ‘ওর কথা বললে নাম আসে, কেউ বলে ‘মিডিয়ায় গেলে বিপদ হবে।’ তবে সবার মুখেই এক কথা-‘ওর মতো মেয়েদের কারণে গ্রামের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।’
এসএইচ







































