• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যপ্রসূত


সৈয়দ আবুল হোসেন নভেম্বর ২, ২০২০, ০১:৪৬ পিএম
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যপ্রসূত

ঢাকা : সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ শুধু ভিত্তিহীন ও বানোয়াটই ছিল না, তা ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত।

যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি, কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি, কিংবা কোনো অর্থও ছাড় হয়নি, এই পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বিশ্বব্যাংকের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের এক কূটকৌশল মাত্র। পরবর্তী সময়ে দুদকের তদন্ত এবং কানাডার আদালতের রায়ে আমাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলা হলে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মনগড়া ও অসত্য বলে প্রমাণিত হয়।

রোববার (২ নভেম্বর) এক সাক্ষাৎকারে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন তাদের সমর্থিত ঠিকাদার নিয়োগে ব্যর্থ হয়, তখনই তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশল শুরু করে। আমরা চেয়েছিলাম পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল আমাদের সরকারের মেয়াদকালের মধ্যে, যাতে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন ঢাকাস্থ প্রতিনিধি মিস গোল্ড স্টেইন এক ডিনারে আমাকে বলেন, ‘Mr. Hossain, don't go fast. Don't complete the bridge during th tenure of this government.’ আমি এ বিষয়টি তৎক্ষণাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করি। গোল্ড স্টেইনের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিশ্বব্যাংকের একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল, যার বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে মিথ্যা অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রলম্বিত করা।

সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ নিচে দেওয়া গেল—

সোনালীনিউজ : পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আপনাকে বিতর্কে পড়তে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়। এ ব্যাপারটি বিস্তারিত বলবেন কি?

সৈয়দ আবুল হোসেন : পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এটা একটি গালগল্প ও মনগড়া কথা। অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক কথা। একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের কথা। এই ষড়যন্ত্র যখন চারদিকে ডালপালা মেলে, অসত্য ও মিথ্যা অভিযোগ যখন গোয়েবলসি কায়দায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তখন পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি আমার দপ্তর পরিবর্তন করে দিতে। প্রধানমন্ত্রী জানতেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ওই পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। কারণ পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি, কোনো চুক্তি হয়নি, কোনো অর্থছাড় হয়নি, সে পর্যায়ে দুর্নীতির প্রশ্ন আসে কীভাবে? পরের ইতিহাস সবার জানা। দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়। এক্ষেত্রে আমাকে নিয়ে যে বিতর্ক হয়, তার শেষ হয়। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। আমি যে পদ্মা সেতুর নির্মাণে কোনো অনিয়ম করিনি, আমি যে সৎ ও কাজে একনিষ্ঠ ছিলাম তা দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।

আপনারা জানেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। তাই যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার প্রথম দিন থেকে আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে মনোযোগী হই। পরামর্শ নিয়োগ প্রক্রিয়া, পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান, মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান এবং সেতুর অর্থায়ন সংস্থা- বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা, ইসলামী উন্নয়ন সংস্থা এবং এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিই। স্বল্প সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ করি। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ যাবতীয় কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে নিয়ে আসি। এমনকি প্রাকযোগ্য দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়াও শেষ করি। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে মাত্র দু’বছরে আমরা পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ শেষ করেছি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সেতু কাজ শেষ হবে, এটাই ছিল আমার মূল টার্গেট এবং এ টার্গেট নিয়েই দ্রুততার সঙ্গে আমি কাজ এগিয়ে নিই।

সব ডোনার এজেন্সির কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকায় ছিল বিশ্বব্যাংক। তাই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজের প্রত্যেক পর্যায় অবলোকন ও অনুমোদন করে। পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগের প্রতিটি পর্যায় বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনে অগ্রসর হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি ঠিকাদার নিয়োগ ও কনসালট্যান্ট নিয়োগের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগের এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক, কারিগরি কমিটিকে একটি Qualified ঠিকাদারকে, বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত থাকার কারণে বাদ দিতে বলে এবং একটি Disqualified ঠিকাদারকে Qualified করতে বলে। কারিগরি কমিটি Qualified দরদাতাকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে বাদ দেয়। কিন্তু Disqualified দরদাতাকে অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট দেয়ায় Qualified করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক Disqualified দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে Qualified করতে তার অনুকূলে বারবার কোয়ারি করে। Disqualified দরদাতাকে Qualified করতে কারিগরি কমিটি সম্মত হয় না। এরপরই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে। এবং নানা কর্নার দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে। উদ্দেশ্য, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বিলম্বিত করা। তারা সোজাপথে তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে না পেরে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার নানামুখী কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নেয়। আমার বিরুদ্ধে দেশে নানা প্রপাগান্ডা শুরু করে। Disqualified দরদাতা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট দিয়ে, লোকাল পত্রিকাকে প্রভাবিত করে, ভুয়া অভিযোগ দাঁড় করায় এবং প্রকাশ করে। যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত ও গাড়ি ক্রয়, কালকিনিতে ট্যাক্স প্রদত্ত অর্থে নির্মিত বাড়ি নিয়ে, সড়ক দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে, ১/১১-এর বিভীষিকাময় দিনে অন্যায়ভাবে দুর্নীতিবাজ বানানোর কথা একাধারে নিউজ করায়। আর এসব পত্রিকার পেপার কার্টিং বিশ্বব্যাংকে পাঠানো হয় ইংরেজিতে অনুবাদ করে। এভাবে বিশ্বব্যাংক আমার ব্যক্তিগত পত্রিকার তথাকথিত মিথ্যা রিপোর্টের ভিত্তিতে আমার ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলে? এবং সে আলোকে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিস গোল্ড স্টেইন আমাকে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম ধীরগতিতে এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুর সমন্বয়ক পাকিস্তান বংশোদ্ভূত জনৈক বিহারি এই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট ছিল বলে আমার মনে হয়েছে।

আমি যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সরে আসার পরও বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে এগিয়ে আসেনি। বিশ্বব্যাংক আমাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর অন্যায় চাপ দেয়। এবং পদ্মা সেতুতে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে এনে নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল চেয়ারম্যান আইনজ্ঞ লুইস মোরেনো ওকাম্পোকে ঢাকায় পাঠায়। ওকাম্পো ঢাকায় এসে প্রথমেই কাদের সাথে, কোন কোন সম্পাদকের সাথে বৈঠক করেছেন তা গণমাধ্যম জানে। ওকাম্পোর লম্ফজম্ফ গণমাধ্যম দেখেছে, দেশবাসী দেখেছে। দুদকের সাথে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ওকাম্পো আমার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিবকে অ্যারেস্ট করার কথা বলে। আমাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু দুদকের তদন্ত এবং পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে আমার কোনো অনিয়ম না থাকায়, বিশ্বব্যাংক তার অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় সরকার আমাকে অ্যারেস্ট করতে সম্মত হয় না। তবে সার্বিক বিবেচনায়, দেশের স্বার্থে আমি নিজেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করি। তারপরও বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।

পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করা ছিল বিশ্বব্যাংকের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ হারালো। পরে শুনেছি, বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় আলোচনা না করে এবং বোর্ডসভার অনুমোদন না নিয়েই নিজ উদ্যোগে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেছেন। বিশ্বব্যাংকের অধিকাংশ কর্মকর্তাই অর্থায়ন স্থগিতের বিষয় সমর্থন করেননি। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিকের সাথে চায়নায় বোয়া ফোরামে এক অনুষ্ঠানে আমার সাক্ষাৎ হয়, পরিচয় হয়। তখন তিনি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি এ কাজে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বলে আমার মনে হয়। রবার্ট জোয়েলিকের মতো বিশ্বব্যাংকের হাতে গোনা কিছু কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু অর্থায়ন না করার দায় বিশ্বব্যাংককে নিতে হলো। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংক সৃষ্টির পর থেকে আরো ১০০ বছরেও পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে আর বিশ্বব্যাংক সুযোগ পাবে না। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের সেই রবার্ট জোয়েলিক এখন কোথায়? মিস গোল্ড স্টেইন এখন কোথায়? সেই লুইস ওকাম্পো কোথায়? তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ খবর দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ তারা বাংলাদেশে এসে সততার নাটক করেছে। এখন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা হলে, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন, লজ্জিত হন। আমাকে সমীহ করেন। আমি সম্মানিত হই।   

আমার আর মন্ত্রিসভায় ফেরা হয়নি। তবে আমি আওয়ামী লীগের সংবিধান ও মেনিফেস্টোভিত্তিক কর্মসূচির রাজনীতিতে, উন্নয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছি এবং থাকব।

সোনালীনিউজ : কী অভিপ্রায়ে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্বব্যাংক তুলেছিল? বিলম্ব হলেও এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

সৈয়দ আবুল হোসেন : পদ্মা সেতু বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের এক প্রাণশক্তি। উন্নয়নের অন্যতম সিঁড়ি। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা, এডিবি ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নের অঙ্গীকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় বিশ্বব্যাংক। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি কার্যক্রম দুই বছরে শেষ করি। প্রতি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনে, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি ঠিকাদার নিয়োগ, কনসালট্যান্ট নিয়োগের কার্যক্রমের ধাপ অতিক্রম করেছিল। আমি আগেই বলেছি, ঠিকাদার নিয়োগের একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক কারিগরি কমিটিকে একটি Qualified দরদাতাকে বিশ্বব্যাংকের কালোতালিকাভুক্তির কারণে বাদ দিতে বলে এবং একটি Disqualified দরদাতাকে Qualified করতে বলে। কারিগরি কমিটি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাংকের কালোতালিকাভুক্ত থাকার কারণে Qualified দরদাতাকে বাদ দেয়। কিন্তু Disqualified দরদাতাকে Qualified  করতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ, Disqualified দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট প্রদান করেছিল। কারিগরি কমিটি বিশ্বব্যাংককে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। ফলে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক কারিগরি কমিটির কাছে একাধিকবার নানা কোয়ারি করে এবং প্রতিবার কারিগরি কমিটি বিশ্বব্যাংককে তাদের মতামত যুক্তিসহ প্রেরণ করে। ফলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের ঘাপলা বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হলে এবং বিশ্বব্যাংক এ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ার আশংকায় Disqualified দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রি-কোয়ালিফিকেশন প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।

পরবর্তীকালে নানা অজুহাতে বিশ্বব্যাংক ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে। এ সময় স্থানীয় পত্রিকায় আমার কতগুলো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে, অসত্য রিপোর্ট করতে থাকে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের Disqualified দরদাতা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি পত্রিকার কাটিং অন্তর্ভুক্ত করে আমার বিরুদ্ধে বেনামি দরখাস্ত বিভিন্ন জায়গায় পাঠায় এবং তাও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মূলত বিশ্বব্যাংক নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়ে অর্থাৎ Disqualified দরদাতাকে নিয়োগ দিতে না পারার কারণে, পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ আনে। পরবর্তী সময়ে দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে বিশ্বব্যাংকের নানা অভিযোগ, অসত্য ও মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

সোনালীনিউজ : বিশ্বব্যাংক বলেছিল, আপনি যোগাযোগমন্ত্রী থেকে সরে গেলে সেতুর কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু আপনি সরে যাওয়ার পরও স্থগিত কার্যক্রম তারা আর শুরু করেনি। এটা কি কোনো ষড়যন্ত্র ছিল মনে করেন?

সৈয়দ আবুল হোসেন : অবশ্যই, এটা ষড়যন্ত্র ছিল। কারণ বিশ্বব্যাংক যখন তাদের সমর্থিত ঠিকাদারকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়, তখনই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিশ্বব্যাংক তাদের এই অবৈধ কার্যক্রমকে আড়াল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে Disqualified ঠিকাদারের স্থানীয় এজেন্ট দিয়ে ভুয়া বেনামি অভিযোগপত্র প্রদান শুরু করে এবং এসব ভুয়া অভিযোগ পত্রিকায় প্রকাশে প্রভাব বিস্তার করে। অনেক নামিদামি পত্রিকাও বিশ্বব্যাংকের এ ষড়যন্ত্র বুঝে হোক, আর না বুঝে হোক, তাতে হাত মিলায়। এবং এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে যেন পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। এ সময় বিশ্বব্যাংক তাদের ষড়যন্ত্রকে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনৈক বিহারিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করে। ফলে আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, পদ্মা সেতু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে। তাই একপর্যায়ে যখন ঠিকাদার নিয়োগে কোনো ত্রুটি বা অনিয়ম প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বব্যাংক আমাকে টার্গেট করে এবং আমি সরে গেলেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে, সেতুর কাজ চালিয়ে যাবে, এমন কথা বলতে থাকে। কিন্তু আমি জানতাম, এটা তারা করবে না। কারণ, তৎকালীন ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি মিস গোল্ড স্টেইন আমাকে এক ডিনারে বলেছিলেন- ‘Mr. Hossain, don't go fast. Don't complete the bridge during th tenure of this government.’ এ বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলাম। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে আমি মন্ত্রিসভা থেকে এক পর্যায়ে পদত্যাগ করি। এরপরও বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন কার্যক্রম শুরু করেনি। এটা ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।

সোনালীনিউজ : কানাডার আদালত পদ্মা সেতুর অভিযোগ মামলার রায় দিয়েছে। রায়ের প্রেক্ষিতে এখনকার মূল্যায়ন কী?

সৈয়দ আবুল হোসেন : পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে পরিকল্পিত স্কান্ডাল নিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকার কাটিং এবং কিছু টেলিফোনের কথোপকথন আদালতে জমা দেয়া হয়েছিল। কানাডার পুলিশ দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কোন প্রমান বা কারো সম্পৃক্ততা পায়নি। ফলে বিষয়টি আদালতের কাছে একটি অখাদ্য ও গালগল্প স্টোরি ছাড়া কিছুই প্রতীয়মান হয়নি। বিচারক রায়ে এসব যুক্তিতর্ক টেলিফোনিক কলকে গালগল্প বলে খারিজ করে দেন। এদিকে দুদকও পদ্মা সেতুর বিষয়টি নিয়ে নিবিড় তদন্ত করে। আমি দুদকের ডাকে দুদক অফিসে যাই এবং জিজ্ঞাসিত বিষয়ে উত্তর দেই। দুদকের তদন্তেও আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। এ প্রসঙ্গে স্যার হেনরি ওটনের একটি উক্তি আমার মনে পড়ে। উক্তিটি হলো- ‘সমালোচনা হচ্ছে মহৎ লোকের পোশাক পরিষ্কার করার ব্রাশ’। পৃথিবীর যেখানেই আমি যাই, সেখানেই আমি এখন সম্মানিত হই।

প্রবাদ আছে- অসত্য বক্তব্য শেষ পর্যন্ত অসাড় প্রমাণিত হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এ মিথ্যা অভিযোগ, পত্রিকার রিপোর্টে আমার ব্যক্তিগত সুনামের যে ক্ষতি হয়েছে, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ বিলম্বিত হয়েছে এবং এর ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এ ক্ষতি কী, কীভাবে পূরণ হবে। দেশের কতিপয় পত্রিকা সবজেনে শুনে যে মিথ্যা অপবাদ আমাকে দিল, দেশের যে ক্ষতি করলো- এর দায় কি তাঁরা নিতে পারবে? আমার সুনাম কি তারা ফিরিয়ে দিতে পারবে?

সোনালীনিউজ : জাপানি অর্থায়নে জাপানি কনসালট্যান্ট কর্তৃক দাখিলকৃত ফিজিবিলিটি স্টাডিতে পদ্মা সেতুতে সিঙ্গেল ডেকার সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেছিল। আপনি ডাবল ডেকার সেতু কেন করলেন?

সৈয়দ আবুল হোসেন : এ কথা সত্যিই, জাপানি অর্থায়নে জাপানি কনসালট্যান্ট ফিজিবিলিটি স্টাডির রিপোর্টে প্রথমে পদ্মা সেতুতে সিঙ্গেল ডেকার সেতুর প্রস্তাব করেছিল। সিঙ্গেল ডেকার মানে মাঝখানে রেল যাবে এবং দুই পাশ দিয়ে গাড়ি যাবে। সিঙ্গেল ডেকার সেতু নির্মাণে সময় বেশী লাগে এবং ব্যয়ও বেশি হয়। আমি ডিজাইন কনসালট্যান্ট মনসেল এইকমের কাছে ডাবল ডেকার সেতু নির্মাণের প্রস্তাব রাখি। আমি চায়নায় সিঙ্গেল ডেকার নির্মিত বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু ড্যানইয়াং কুনসান মহাসেতু, বেইজিংয়ের তিয়ানজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ, উইনান উইহে গ্র্যান্ড ব্রিজ, বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ, বেইজিং তিয়ানজিন ব্রিজ, হ্যাংজো বে ব্রিজ ও রান ইয়াং ব্রিজ পরিদর্শন করেছি। হ্যাং জো বে ব্রিজ (Hangzhou Bay Bridge) কানেকটিং-নিংবো (Shanghai and Ningbo) ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ পর্যায় থেকে কয়েকবার আমি পরিদর্শন করেছি। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সাংহাই ইস্ট সি ব্রিজ (Shanghai East Sea Bridge) কানেকটিং ডিপ সি পোর্টও আমি পরিদর্শন করেছি। হংকং-ঝুহাই-মাকাও ব্রিজ (Hongkong-Zhuhai-Macau Bridge) যা সমুদ্রপৃষ্ঠে ১৬ কিলোমিটার এবং সমুদ্র ভূ-গর্ভস্থ ৩৯ কিলোমিটার সর্বমোট ৫৫ কিলোমিটার সেতুও আমি দেখেছি।

চায়না ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ডাবল ডেকার সেতুও আমি দেখেছি। আমি চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বেশ কিছু ডাবল ডেকার ব্রিজ পরিদর্শন করেছি এবং নির্মাণ পর্যায় থেকে অবলোকন করেছি। আমি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ডাবল ডেকার সেতু চীনের ইয়াংসিগাং (Yangsigang Yangtze), সাংহাই-এর মিনপু ব্রিজ (Minpu Bridge), জিয়াংসু প্রদেশে ওউফেনজ্যাশন ব্রিজ (Wufengshan Bridge, Jiangsu Province) এবং টেনসিংজো ব্রিজ (Tianxingzhan Yangtze River Bridge, Jiangan Disttrict, Wuhan)) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে বেনপো ব্রিজ (Banpi Bridge, Seoul, South Korea) পরিদর্শন করি। এ সকল ব্রিজগুলো পরিদর্শন করে ডাবল ডেকার ব্রিজ সম্পর্কে আমি অভিজ্ঞতা অর্জন করি। ডাবল ডেকার সেতু হলো- দোতালা সেতু। উপর দিয়ে গাড়ি যাবে এবং নিচ দিয়ে রেল যাবে। এ ধরনের ব্রিজ তৈরিতে সময় কম লাগে, দ্রুত শেষ করা যায় এবং ব্যয়ও কম হয়। কারণ, সেতুর অধিকাংশ কাজ দরদাতা নিজ ফ্যাক্টরি থেকে স্টিল স্ট্রাকচার তৈরি করে এনে শুধু সেতুতে সংযোজন করে। এসব ডাবল ডেকার ব্রিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি কনসালট্যান্ট ও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করি। এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল থেকে ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার্স কনফারেন্সে অংশগ্রহণ শেষে আসার পথে হংকং-এ মনসেল এইকমের অফিসে সংশ্লিষ্টদের বৈঠক করি। এ সময় সচিব, পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক ও সওজের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। আমার এ অভিজ্ঞতা কনসালট্যান্ট যথার্থ বলে মনে করে এবং সে অনুযায়ী ড্রয়িং ও ডিজাইন করে। পুরো বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপস্থাপিত হলে তিনি তা অনুমোদন করেন। বর্তমানে পদ্মা সেতু ডাবল ডেকারে নির্মিত হচ্ছে।

সোনালীনিউজ : পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি পর্যায়ে গৃহীত ডিজাইন ও পাইলিংয়ে আপনি কিছু মতামত রেখেছিলেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি?  

সৈয়দ আবুল হোসেন : পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে গিয়ে আমি জাপানি গৃহীত ডিজাইন দেখেছি। আমি কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোক নই- তবে ব্যবসাকালীন সময়ে এ বিষয়ে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি। চায়নার থ্রি গরজেস প্রকল্প একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। একবার বোয়া ফোরাম ফর এশিয়ার সম্মেলন শেষে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশসহ বিশ্বনেতাদের সাথে আমি এ গুরুত্ব প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছি। আরেকবার বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালিন নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্মাণ এ প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছি। পানামা ব্রিজ স্বচক্ষে আমি দেখেছি। আমি আগেই বলেছি, চীনের বেশ কয়েকটি সিঙ্গেল ডেকার ব্রিজ পরিদর্শন করেছি। চীনের ডাবল-ডেকার ব্রিজ- ইয়াংসিগাং ব্রিজ, মিনপু সেতু, ওউফেলজ্যাশন সেতু এবং টেনসিংজা সেতু আমি দেখেছি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ডাবল-ডেকার ব্রিজ বেনপো সেতুও আমি দেখেছি। এসব থেকে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। তার আলোকে কারিগরি কমিটিকে ডিজাইনে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, তা ভাবতে অনুরোধ করেছিলাম। এই ডিজাইনের বিষয়ে আমি প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রফিক সাহেবকে নিয়ে ডিজাইন কনসালট্যান্ট মনসেল এইকম-এর সাথে বসেছিলাম। তাদের সাথে আমার ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। হংকং-এ গিয়ে এ বিষয়ে তাদের সাথে মিটিংও করেছি। মিটিং-এ সচিব, প্রকল্প পরিচালক ও কনসালট্যান্ট উপস্থিত ছিলেন। সেতু দ্রুত বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েও তাদের সাথে কথা বলেছি। ডাবল ডেকার ব্রিজ স্টিল স্ট্রাকচারের বিষয়ে কথা বলেছি। উহানের আদলে এ ধারণা নিলে ৩ বছরে পদ্মা সেতু করা সম্ভব তাও তাদের বলেছি। ডিজাইন প্রতিষ্ঠান মনসেল-এইকম একজন চায়নিজ বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক, যিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডিজাইনার, তাকে দিয়ে ডিজাইন তৈরি করায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা উপস্থাপিত হয়। এবং তা তিনি অনুমোদন করেন।

আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন এমনভাবে করতে হবে- যাতে করে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলেও ব্রিজের তেমন কোনো ক্ষতি না হয়। এক্ষেত্রে জাপানি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে অনুরোধ করি। কারণ, জাপানিরা ভূমিকম্প সহনীয় ডিজাইন এক্সপার্ট। আমি তখন অভিজ্ঞতার আলোকে জামিলুর রেজা চৌধুরীকে বলেছিলাম- পদ্মা সেতুর পাইলিং করতে গিয়ে যদি শক্ত মাটি পাওয়া না যায়, নরম মাটি স্তর আসে, তাহলে কনক্রিট ফাউন্ডেশনর দেয়ার বিধান রাখতে অর্থাৎ নরম মাটি এলে তা কেমিক্যাল দিয়ে কংক্রিটে এ রূপান্তর করা সম্ভব। চায়নার উদাহরণও আমি দেখিয়েছি। পাইলিং করতে গিয়ে মাটির গভীরে গ্যাস পাওয়া গেলেও ফাউন্ডেশন করা সম্ভব- এ উদাহরণ চায়নায় রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এলে কাজ যাতে বিলম্বিত না হয়, ব্যয় না বাড়ে- এ শর্ত রাখতে আমি কারিগরি কমিটির প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরীকে অনুরোধে করেছিলাম। এবং চুক্তির আগে চায়নায় গিয়ে সরেজমিনে দেখতে বলেছিলাম। এক্ষেত্রে Variation-এর পরিবর্তে Lumpsum চুক্তির provision রাখতে বলেছিলাম, যাতে পরবর্তীতে সেতু নির্মাণের ব্যয় না বাড়ে। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে তা করা যৌক্তিক ছিল। কিন্তু জামিলুর রেজা চৌধুরী আমার মতামতের গুরুত্ব বিবেচনায় নেননি।

আমার আশংকা অনুযায়ী, বর্তমানে নির্মাণ পর্যায়ে যখন দেখা গেল- মাটির তলদেশে শক্ত মাটি নেই- তরল মাটি যা পাইলিংয়ের উপযুক্ত নয়। তখন বর্তমান ঠিকাদার, যারা নির্মাণ কাজে অভিজ্ঞ, তারা কেমিক্যাল ব্যবহার করে মাটি শক্ত করে পাইলিং করার পরামর্শ দেয়। তাদের এ পরামর্শ আমার আগের পরামর্শের সাজুস্য ছিল। কিন্তু অনভিজ্ঞ কনসালট্যান্ট সে পথে না গিয়ে গবেষণার নামে দুই বছর সময় ক্ষেপন করলো। ঠিকাদারেরই সেই পরামর্শ অনুযায়ীই বর্তমানে স্ক্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতিতে কেমিক্যাল ব্যবহারের পথ বেছে নিলো। এর ফলে সেতু নির্মাণে সময় ক্ষেপণ হলো। Cost বাড়ল।  

সোনালীনিউজ : গোয়ালন্দ-পাটুরিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণেরও উদ্যোগ আপনি নিয়েছিলেন, এ বিষয়ে কিছু বলুন?

সৈয়দ আবুল হোসেন : নিজের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি- এটা গর্বের। তবে আমাদের যে এতো অর্থ নেই- তাও ঠিক। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য আমাদের অনেক বিনিয়োগ রিসিডিউল করতে হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়েই আমার লক্ষ্য ছিল- ডিজাইন বিল্ট ফাইনানসিং এ পদ্মাসেতু নির্মাণ করার। সে সময় পদ্মা সেতু ডিজাইন বিল্ট ফাইনানসিং করা সম্ভব হলে সরকারি অর্থের উপর চাপ পড়তো না। ডিজাইন বিল্ট ফাইনানসিং এ গেলে Cost কম হতো। এবং ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ব্রিজ চালু করা যেতো। পরবর্তীতে যখন মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতু নর্মাণে বাধা দেখা দিল- তখন আমি পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে অগ্রসর হই এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাস্তবতা অবলোকন করে তাতে অনুমোদন দেন। কিন্তু তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর বাধায় তাও করা সম্ভব হয়নি। সামগ্রিকভাবে এক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পাকে পড়ে পদ্মা সেতু। দেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের স্বার্থে আমি সরে আসি মন্ত্রীত্ব থেকে। ফলে পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ বিলম্বিত হয়। আমি এখনো মনে করি, Bidders Financing বা PPP-এর মাধ্যমে এই পাটুরিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বর্তমান সেতু বিভাগ যে সব প্রকল্প হাতে নিয়েছে- তার চেয়ে এ প্রকল্প অধিক গুরুত্বপূর্ণ। PPP বা Bidders Financing এ প্রকল্প শুরু করলে এতে সরকারের কোন নিজস্ব অর্থের প্রয়োজন হবে না। এক্ষেত্রে Viability gap funding এরও প্রয়োজন হবে না।

সোনালীনিউজ : পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে এদেশের গণমাধ্যমগুলোতে আপনার বিরুদ্ধে ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। কানাডার আদালতের রায়ের পরে তারা কেউ কি আপনার সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে?

সৈয়দ আবুল হোসেন : একথা সত্যিই, দেশের গণমাধ্যম পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অসত্য ও ভুয়া খবরকে উপজীব্য করে আমার বিরুদ্ধে ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বেনামি দরখাস্তের ভিত্তিতে বারবার একই বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে। চ্যানেলগুলোতে খবরের কাগজগুলোর রিপোর্টকে উপজীব্য করে টকশোতে নানা বুদ্ধিজীবী মহল অশোভন কথা, অসত্য কথাকে ছড়িয়ে দিয়েছে। পত্রিকা প্রতিবেদন তৈরির সময় সত্য মিথ্যা যাচাই করেনি। কীভাবে, সঠিক পথে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়েছে তা তারা জানারও চেষ্টা করেনি। আবার পত্রিকাগুলো কারিগরি কমিটির মূল্যায়নের অনিয়মের বিষয়ও কিছু বলেনি। বাতাসের ওপর ভর করে আমার বিরুদ্ধে নানা অসত্য রিপোর্টকে পুঁজি করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করেছে। বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রে হাত মিলাতে গিয়ে একবারও ভাবেনি পদ্মা সেতু দেশীয় সম্পদ। এর বাস্তবায়ন মিথ্যা অজুহাতে বাধাগ্রস্ত হলে দেশের ক্ষতি হবে। অনেক সময় ভাবি, দেশের পত্রিকাগুলো কি ষড়যন্ত্রের সাথে আপোষ করে, কিন্তু কেন? তারা এদেশের সন্তান। তারা তো দেশপ্রেমিক। তাহলে আমাকে মিথ্যা অজুহাতে নাজেহাল করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি হচ্ছে- এটা কি তারা বুঝতে সে সময় অক্ষম ছিলেন?

শেষ পর্যন্ত দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ের পর পত্রিকার তরফ থেকে সরাসরি দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি। বা তাদের কোনো লেখা ও তা প্রতিফলিত হয়নি। তবে সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এক টকশোতে সবার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এবং গভীর রাতে পত্রিকার অসত্য রিপোর্টের ভিত্তিতে যে আলোচনাকারী বুদ্ধিজীবিগনের বেশ কয়েকজন আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাজনীতিবিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আমার প্রতি অবিচারের জন্য সরকারের কাছে পুনরায় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছিলেন।

সোনালীনিউজ : যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আপনি অনেক মেগা প্রজেক্টের পরিকল্পনা করেছিলেন। সেগুলোর এখন কী অবস্থা?

সৈয়দ আবুল হোসেন : আমি প্রায় তিন বছর যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। তিন বছর আমি প্রচুর পরিশ্রম করেছি। সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রচুর বৈদেশিক সাহায্য মবিলাইজ করেছি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ এবং বর্তমান রেল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন সেতু বিভাগের বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় করা ছাড়া কোন কাজ ছিল না। আমি দায়িত্বে এসে সেতু বিভাগের কার্যক্রমে গতি সঞ্চার করি।

মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে টানেল নির্মাণ, গুলিস্তান লেচু শাহের মাজার হতে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্প গ্রহণ ও কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন শুরু করি। আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকলে পাটুরিয়া পয়েন্টেও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু এতোদিনে বাস্তবায়িত হতো। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিডারস ফাইনান্সসিং-এ সেতু নির্মাণের সার-সংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছিলেন। সড়ক বিভাগের অধীনে ১৬০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় যার মধ্যে ৪৪টি অগ্রাধিকার প্রকল্প। অনুরূপভাবে রেলওয়ের উন্নয়নে ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর অনেকগুলোর কাজ বাস্তবায়নধীন ছিল।

জোর দিয়ে বলতে পারি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি তিন বছরে যে কাজ করে দিয়ে এসেছি, যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি, সেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে, সে কাজ ১০০ বছরের ভেতরে পাঁচ বছর মেয়াদি কোনো সরকার উদ্যোগ নিতে পারেনি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি সেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছি, বাস্তবায়ন করেছি তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইল ফলক এবং একটি ঐতিহাসিক দলিল।

আমি যখন দেখি- এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে, হচ্ছে- তখন অবশ্যই ভালো লাগে। ক্রমান্বয়ে আমার সময়ে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। দেশের জনগণ, ঢাকাবাসী শীঘ্রই এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবেন।   

সোনালীনিউজ : মাদারীপুরে আপনি অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন। সেগুলো নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ আবুল হোসেন : মাদারীপুরে আমি অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি- যেগুলো শিক্ষাপ্রসারে অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলেছে। আমি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবকাঠামো দিক থেকেই উন্নয়ন করিনি- মানসম্মত শিক্ষা প্রদানেও যোগ্য করে গড়ে তুলেছি। আমি এলাকায় ৬টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

আমি অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছি, প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছি। ১৫০টির অধিক প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি, যার কমিউনিটি পার্টিসিপেশনের অর্থ পুরোটা আমি বহন করেছি। এগুলো পরবর্তীকালে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে রূপান্তরিত হয়েছে।

আমি আনন্দিত যে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনা করে শিক্ষার্থীরা আজ দেশের উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করছে। বেসরকারি উচ্চপদে চাকরি করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছে। বিদেশে কাজ করছে। আজ মাদারীপুরের প্রতিটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা ঘরের ভাত খেয়ে পড়াশুনা করতে পারছে। আমাদের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে আমরা দূরের স্কুল-কলেজে পড়াশুনা করছি। অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়াশুনা করতে পারেনি। আজ মাদারীপুর দেশের অন্যতম শিক্ষাঞ্চল হিসেবে পরিচিত।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আমি নানা মহল থেকে প্রশংসিত হয়েছি। পুরস্কৃত হয়েছি। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে বিদ্যাসাগর পদক প্রদান করেন এবং আমাকে বাংলাদেশের বিদ্যাসাগর হিসেবে অভিহিত করেছেন। আজ আমার জন্মস্থান ডাসার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য, সুন্দর অবকাঠামোর জন্য, দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সোনালীনিউজ : আপনি মাদারীপুরে, বিশেষ করে, আপনার নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুর-৩ এ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন- একথা কতটুকু সত্য?

সৈয়দ আবুল হোসেন : আপনার প্রশ্নের মধ্যেই তো সত্যতা লুকিয়ে আছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে রাজনীতিতে আসি। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ থেকে নির্বাচন করি এবং বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই।

আমি যখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই- তখন এলাকায় কোন রাস্তাঘাট ছিল না। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের এলাকা ছিল উন্নয়ন বঞ্চিত ও অবহেলিত। এ এলাকায় স্বনামে খ্যাত ব্যক্তিরা জন্ম নিলেও, এলাকার উন্নয়নে কেউ গভীরভাবে কখনো চিন্তা করেনি। আমি কালকিনির সন্তান। ডাসার আমার জন্মস্থান। আমি এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছি। আমি পরপর ৪ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এ সময়ে পুরো এলাকাকে সড়ক নেটওয়ার্কে নিয়ে এসেছি। সেতু নির্মাণ করেছি। জেলা সদরসহ রাজধানীর সাথে সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি।

আগে আমার এলাকা সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। আমি সন্ত্রাসী জনপদকে শান্তির জনপদে উন্নীত করি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত করি। শুধু ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে মরহুম মতিয়ার রহমান এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ’৭৩ নির্বাচনে রাজ্জাক ভাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এরপর ’৯১ পর্য্যন্ত, আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত, এলাকার আওয়ামী লীগের কোনো এমপি ছিলেন না। উপজেলা পর্যায়েও আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিল না। আমি রাজনীতিতে পরমসহিষ্ণুতা ও ভালো কাজ প্রদর্শন করে- এলাকার মানুষকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে আমার সাথে কাজ করেছেন।

এ সময় তাদের মধ্যে কোন বিভেদ-বিশৃঙ্খলা ছিল না। তারা ঐক্যবদ্ধ ছিল। একে অপরের সম্পূরক ছিলেন। সবাইকে নিয়ে এলাকায় আমি আওয়ামী লীগের বাগান গড়ে তুলি। মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!