• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল অপারেটরদের কর অর্ধেক কমালো এনবিআর


নিজস্ব প্রতিবেদক  ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১, ০১:৫৭ পিএম
মোবাইল অপারেটরদের কর অর্ধেক কমালো এনবিআর

ঢাকা : জনস্বার্থের কথা গুরুত্ব বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফোরজি লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন বা স্পেকট্রাম ফি’র ওপর সাড়ে সাত শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এনবিআরের মুসক নীতি প্রথম সচিব কাজী ফরিদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিশেষ আদেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

গত বছর ভ্যাট আইন-২০১২ বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর থেকে আইন অনুযায়ী ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর অনুরোধে এসব সেবার জন্য ভ্যাট প্রদান অর্ধেকে নামিয়া আনার নির্দেশনা জারি করা হল। অর্থাৎ এখন থেকে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে।

আদেশে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক মোবাইল অপারেটরদের অনুকূলে ৪জি লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়নের ক্ষেত্রে বিটিআরসি কর্তৃক প্রাপ্ত বা প্রাপ্য লাইসেন্স বা টেকনোলজি নিউট্রালিটি ফি (২জি ও ৩জি লাইসেন্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও) বা স্পেকট্রাম ফি বাবদ নির্ধারিত অর্থের ওপর মূল্য সংযোজন করের পরিমাণ হ্রাস করা সমীচীন।

এতে আরও বলা হয়েছে, এনবিআর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ধারা ১২৬ এর উপধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ফোরজি লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে বিটিআরসি কর্তৃক প্রাপ্ত লাইসেন্স বা স্পেকট্রাম ফি বাবদ নির্ধারিত অর্থের ওপর সাড়ে সাত শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।

এই আদেশ ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে বলেও আদেশে জানানো হয়। তবে জনস্বার্থের গুরুত্ব বিবেচনায় যেকোনো সময় উক্ত অব্যাহতি রহিত করতে যাবে বলে আদেশে জানানো হয়েছে।

এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০–২১ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেন। মোবাইল ফোন অপারেটররা নতুন করহারে মোবাইল সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ১৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ ১ শতাংশ আরোপ করে। ফলে মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মানে হলো, প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জে সরকারের কাছে কর হিসেবে যাবে ২৫ টাকার কিছু বেশি। এখন দেখার বিষয় মোবাইল ফোন অপারেটররা রিচার্জে বর্ধিত কর কামায় কী না। 

উল্লেক্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোবাইল সেবার ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরোপ হয় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক আরও বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীনফোন ও রবি আজিয়াটার হিসাবে, তাদের মোট রাজস্ব আয়ের ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশই সরকারের কোষাগারে বিভিন্ন কর ও ফি বা মাশুল হিসেবে চলে যায়। দেশে মার্চ শেষে মোবাইল গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৩ লাখের বেশি। 

এদিকে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে শেয়ার ইস্যু বিবেচনায় সবচেয়ে বড় কোম্পানি হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বরে তালিকাভুক্ত হয় টেলিযোগাযোগ খাতের বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড। তবে তালিকাভুক্তির দুই মাস পার হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এবিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন,আমাদের যে পরিমাণ মুনাফা হয়েছে তার অর্ধেক লভ্যাংশ হিসেবে দিতে গেলে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ হারে দিতে হতো। আর মুনাফার পুরোটাই লভ্যাংশ হিসেবে দিলেও ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশের বেশি দেয়া সম্ভব হতো না। এত অল্প লভ্যাংশ দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব ছিল কিনা সেটি নিয়ে পর্ষদ সভায় আলোচনা হয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকরা কোম্পানিতে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছেন এবং তারা ২০১৪ সালের পর থেকে লভ্যাংশ নেননি। তা সত্ত্বেও শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ দেয়া যায় কিনা, সেটি পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়েছিল। পুনর্বিনিয়োগ করার বিষয়টিও লভ্যাংশ না দেয়ার অন্যতম কারণ।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে রবির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৪ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ১২ টাকা ৬৪ পয়সা। 

অপরদিকে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত দেশের অপর শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ১৪৫ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগে কোম্পানিটি ১৩০ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। এ নিয়ে কোম্পানিটি আলোচিত বছরের জন্য ২৭৫ লভ্যাংশ করেছে।

এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ হিসাব বছরে কোম্পানি শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৮ টাকা ৫৯ পয়সা। যা আগের বছরে ছিল ২৮ টাকা ৪০ পয়সা।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!