ঢাকা : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান অভিযোগ করেছেন, দেশের মিষ্টির দোকানগুলো নিয়মিতভাবে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, জীবনে বহুবার মিষ্টি কিনেছি, কিন্তু কখনও কোনো দোকানদারের কাছ থেকে ভ্যাটের রসিদ পাইনি।
মিষ্টির দোকানগুলোয় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিনও ব্যবহার করা হয় না উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সাধারণ জনগণ ভ্যাট দিলেও সেই টাকা শেষ পর্যন্ত সরকারের কোষাগারে পৌঁছায় না।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের ভবনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, যারা নিজেদের খাতকে সহায়তা করতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়, মিষ্টির উপর বর্তমান ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক।
সংগঠনের দাবি ছিল, অতীতে যখন ভ্যাটের হার ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ, তখন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল বেশি।
তবে এনবিআর চেয়ারম্যান এই যুক্তিকে ‘অবাস্তব’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “ভ্যাট ফ্রি করলে রাজস্ব বাড়বে—এমন ধারণা নিছক আজগুবি। ১৫ শতাংশে রাজস্ব কম আর সাড়ে ৭ শতাংশে বেশি—এমন জাদুকরী দেশ কোথাও নেই।”
তার মতে, ভ্যাট ঠিকভাবে পরিশোধ ও প্রক্রিয়াজাত না হলে রাজস্ব আদায়ে কোনো হার-কমবেশির ফারাক পড়ে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের সুপারশপগুলোর মতো মিষ্টির দামেও শিগগিরই ‘ইনক্লুসিভ ভ্যাট’ পদ্ধতি চালু করা হবে। এতে পণ্যের মূল্যের মধ্যে ভ্যাট আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে, আলাদাভাবে উল্লেখ থাকবে না। ফলে ভোক্তাকে ভ্যাট দেখে আতঙ্কিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। একই পদ্ধতি ইতোমধ্যে সুপারশপগুলোতে সফলভাবে চালু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা আরও কিছু কর রেয়াত ও শুল্ক ছাড়ের দাবি করেন। সোলার প্যানেল উৎপাদনে আর্থিক সহায়তা, যাত্রীবাহী নৌযানের এসি কক্ষে ভ্যাট মওকুফ, জেট ফুয়েলের আমদানি শুল্ক ও মূসক অব্যাহতি, ট্রান্সফরমার শিল্পে কাঁচামালের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারসহ নানা প্রস্তাব উঠে আসে এই আলোচনায়।
এনবিআর চেয়ারম্যান যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বর্তমানে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো টিকিটের দামের সঙ্গে যুক্ত করে ট্রাভেল ট্যাক্স আদায় করে, যা তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে বহু কোম্পানি সেই অর্থ জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করে, আবার কেউ কেউ দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা বকেয়া থেকে যায়।
এ কারণে এনবিআর এবার ভিন্ন পদ্ধতি চালুর কথা ভাবছে—যেখানে যাত্রীরা নিজেরাই ট্যাক্স পরিশোধ করে চালান গ্রহণ করবে এবং তা প্রদর্শন করেই বিদেশ ভ্রমণ করবে।
আলোচনার শেষ দিকে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্যকে সহজ করা, ফাঁকিগুলো বন্ধ করা এবং কর কাঠামোয় যতটা সম্ভব সাম্য বজায় রাখা।
তিনি বলেন, আমরা এমন বাজেট চাই, যেখানে ব্যবসা ও রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ভারসাম্য থাকবে। কেউ কর ফাঁকি দিয়ে লাভবান হবে না, আবার ব্যবসার পথও রুদ্ধ হবে না।
এমটিআই