• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

লভ্যাংশ বিতরণের দায়িত্ব নিতে চায় সিএমএসএফ, কার্যক্রম নিয়ে আপত্তি স্টেকহোল্ডারদের 


আবদুল হাকিম জুলাই ২১, ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
লভ্যাংশ বিতরণের দায়িত্ব নিতে চায় সিএমএসএফ, কার্যক্রম নিয়ে আপত্তি স্টেকহোল্ডারদের 

ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল বা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) আইনি ভিত্তি আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে কার্যপরিধি।

সিএমএসএফকে ‘ডিভিডেন্ড হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ জমা দেবে সিএমএসএফে।

সেই লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিতরণ করবে এবং কর কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে সিএমএসএফ। এতে করে কোম্পানির কাছ থেকে রাজস্ব প্রদানের প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে রিটার্ন দেওয়ার কষ্ট করতে হবে না বিনিয়োগকারীদের।

সিএমএসএফ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় সিএমএসএফকে শক্তিশালী আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। তবে তহবিলের অপব্যবহার ও কার্যক্রম নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বিশেষজ্ঞ ও বাজারসংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বলছে, ২০২১ সালের জুনে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ক্ষমতা ব্যবহার করে সিএমএসএফ গঠন করে।

পুঁজিবাজারে তারল্য জোগান এবং বিনিয়োগকারীদের মাঝে অবণ্টিত লভ্যাংশ পরিশোধই ছিল এর উদ্দেশ্য। এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার নগদ এবং ৩০৫ কোটি টাকার শেয়ার লভ্যাংশ পরিশোধ করেছে সিএমএসএফ।

তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য সিএমএসএফের পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ফান্ডটির প্রাসঙ্গিকতা এবং তহবিলের যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়। জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে কেবল সম্মানী ও অনুষ্ঠান বাবদ খরচ করা হয় এক কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই বছরে মোট পরিচালন খরচ ছিল দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনবেন, কোম্পানি লভ্যাংশ দেবে, এখানে আবার তৃতীয় পক্ষ কেন? এটা করার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে কোম্পানির যে মৌলিক কাঠামো, সেটা তো থাকে না। আমরা এটা চরম বিরোধিতা করি। এখন পর্যন্ত ওদেরকে (সিএমএসএফ) যে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটার কোনো স্বচ্ছ হিসাব নেই। আগে সেটার স্বচ্ছ হিসাব দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স ঠিক করুন, তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে নগদ লভ্যাংশ চলে যাবে, বোনাস শেয়ার ডিপিতে চলে যাবে। কারও হিসাব বন্ধ হয়ে গেলে হয়তো লভ্যাংশ ফেরত আসতে পারে, কিন্তু সেটা খুবই নগণ্য।

এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ সিএমএসএফের অর্থ সরকারি কোষাগারে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিএসইসি ও এফআইডি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

কারণ, এটি মূলত বিনিয়োগকারীদের অর্থ। ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারীরা এসব লভ্যাংশ দাবি করতে পারেন। তাই এসব অর্থ সিএমএসএফের মাধ্যমে হস্তান্তরের সুযোগ রাখার পক্ষে মত দেন তারা।

২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিএমএসএফের বোর্ড অব গভর্নরের জরুরি সভায় বাজার সংশ্লিষ্টদের ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়। সম্প্রতি সিএমএসএফ প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রেরণের জন্য মধুমতি ব্যাংকে একটি বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব খোলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন আইনগত ভিত্তি দুর্বল উল্লেখ করে হিসাব খোলার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিএমএসএফের আইনি কাঠানো পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনি কাঠামো পরিবর্তন হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফান্ডের কার্যক্রমের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হবে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিএমএসএফকে একটি ‘স্ট্যাটুটরি’ বা আইনসিদ্ধ তহবিলে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলা হয়। বিএসইসি এবং এফআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিএমএসএফে আইনি ভিত্তি শক্তিশালী করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এতে সম্মতি দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে তহবিলটি নতুন নাম ও পরিচালন কাঠামো পাবে।

নতুন আইনি কাঠামোয় থাকছে যেসব প্রস্তাব: সিএমএসএফ অতীতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে কিছু ইকুইটিতে বিনিয়োগ করেছে। আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড নামের একটি মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাজারে সমালোচনার জন্ম দেয়। নতুন কাঠামোয় বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহার করে আর কোনো বিনিয়োগ বা স্পন্সরশিপ করার সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন সিএমএসএফ কর্মকর্তারা।

নগদ লভ্যাংশ বিতরণে সিএমএসএফ প্রধান ভূমিকা পালন করতে চায়। বর্তমানে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ বিতরণ করে। প্রতিটি কোম্পানি পৃথকভাবে কর প্রত্যয়নপত্র দেয়, যা করদাতাদের জন্য ঝামেলার। যাদের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) আছে, তাদের লভ্যাংশ আয়ে ১৫ শতাংশ কর কাটা হয়, আর যাদের নেই, তাদের ক্ষেত্রে কর ২০ শতাংশ। 

করফাঁকি ঠেকাতে আয়কর রিটার্নে প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানির দেওয়া কর প্রত্যয়ন অনলাইনে মিলছে না। আবার উৎসাহজনক প্রণোদনা না থাকায় অনেকে কর প্রত্যয়ন সংগ্রহে আগ্রহী হন না। সিএমএসএফ যদি কেন্দ্রীয়ভাবে লভ্যাংশ বিতরণের দায়িত্ব নেয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সম্মিলিত লভ্যাংশ আয়ের বিপরীতে একটি চালানেই কর অব্যাহতির সুবিধা নিতে পারবেন।

এআর

Wordbridge School
Link copied!