একীভূত হওয়া পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরতের জন্য বিশেষ স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্কিম অনুযায়ী প্রথম ধাপে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা এককালীন উত্তোলন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় আমানত বীমা তহবিল থেকে এ অর্থ পরিশোধ করা হবে। পরে যাদের জমার পরিমাণ দুই লাখ টাকার বেশি, তারা প্রতি তিন মাস পর সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে তুলতে পারবেন। তবে চলতি মাসে দুই লাখ টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডজনখানেক ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নেয় কয়েকটি গ্রুপ। এতে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ে। এর মধ্যে সংকটে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত ওই পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে অধিগ্রহণ করবে।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনুসর, চার ডেপুটি গভর্নর, পাঁচ ব্যাংকের প্রশাসক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলনে।
গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, একীভূত ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ, নতুন ব্যাংক থেকে এসব গ্রাহকের টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন ব্যাংকের কোনো ডেটাবেজ তৈরি হয়নি। একই সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকও নিয়োগ হয়নি। তাই আইনি একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে গভর্নর নির্দেশ দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যেসব গ্রাহকের হিসাবে দুই লাখ টাকা বা তার কম রয়েছে, তারা স্কিম ঘোষণার পর সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন আর যাদের হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি রয়েছে, তারা তিন মাস পরপর এক লাখ টাকা করে দুই বছর পর্যন্ত টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সি আমানতকারী ও ক্যানসারে আক্রান্ত গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এ বিধান শিথিল রাখা হয়েছে। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু ব্যাংকটি সম্পূর্ণ নতুন, এতে কোনো জটিলতা নেই। তাই কারো টাকা ওঠানোর প্রয়োজন মনে করি না। তবে কেউ যদি ওঠাতে চান, তাহলে স্কিম অনুযায়ী তুলতে হবে। এ স্কিম বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য আমানতকারীদের আস্থার সংকট নিরসন এবং ধাপে ধাপে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফেরানো।
স্কিমের আওতায় টাকা পেতে গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে খোলা বৈধ হিসাব থাকতে হবে। এক ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও একজন গ্রাহক একটি হিসাবের বিপরীতে এ সুবিধা পাবেন। তবে একই গ্রাহকের পাঁচ ব্যাংকে থাকা পৃথক হিসাবের বিপরীতে আলাদাভাবে টাকা পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। যেসব আমানতকারীর ঋণ আছে, তারা ঋণ সমন্বয় না করা পর্যন্ত টাকা উত্তোলনের সুবিধা পাবেন না।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং আমানত বীমা তহবিল থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সরকারের অংশের ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ আমানতকারীর প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। বিপরীতে ঋণ আছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।
নবগঠিত ব্যাংকের বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, সরকারি মালিকানায় ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়া ইতিবাচক অগ্রগতি এবং নতুন ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হবে আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
এএইচ/এম







































