ফাইল ছবি
ঢাকা: দেশে সাড়ে ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। যা গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ৪৮ লাখ ছাড়িয়েছে। এসব হিসাবে মোট জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
যদিও সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার লাখের বেশি, তবু আর্থিক শিক্ষা সম্প্রসারণের মাধ্যমে টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদার করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যেই চলতি বছর থেকে প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে নিকটবর্তী অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত মার্চে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি আয়োজন, শিক্ষার্থীদের হিসাব খোলা এবং লেনদেন সেবা দিতে হবে। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাধিক ব্যাংকের কার্যক্রম এড়াতে শাখা নির্বাচন নিয়ে ব্যাংকগুলোকে পারস্পরিক সমন্বয়ের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রতি তিন মাস অন্তর অগ্রগতি প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ক্যাশলেস লেনদেন বাড়াতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক শিক্ষার বিকল্প নেই। সে কারণেই প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে একটি করে স্কুল নির্বাচন করতে বলা হয়েছে।’ তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে মতিঝিলসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিসের আওতাধীন স্কুলগুলোর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য লেনদেন ডিজিটাল করা হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে শাখার আশপাশের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনও ডিজিটাল পদ্ধতিতে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়া সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামে অন্তত একটি করে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। মোট হিসাবের সংখ্যা ৪৮ লাখ ৫ হাজার। এর মধ্যে ৫২ দশমিক ৭৪ শতাংশ হিসাব গ্রামীণ অঞ্চলে এবং ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ শহর এলাকায়। রাজধানীসহ সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় অবস্থিত শাখার আওতায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শহরাঞ্চলের হিসাব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এসব অ্যাকাউন্টে ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত প্রায় সমান। মোট হিসাবের মধ্যে ছাত্রদের হিসাব ৫০ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ৪৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে দুটি ছাড়া বাকি সব ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব হিসাবে মোট জমা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাব যেন একটি পর্যায়ে এসে বন্ধ না হয়ে যায়, সে জন্য হিসাবধারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তর করতে হবে। এ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮৭ হাজার স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সাধারণ হিসাবে রূপান্তর করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে অন্তত ৩০০টি নতুন স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে খোলার কথা ছিল ১০০টি করে হিসাব। এসব কার্যক্রম জোরদার করতে চলতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৩টি স্কুল ব্যাংকিং সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
২০১০ সালের আগে শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে পারতেন। টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে পরে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য হিসাব খোলার সুযোগ চালু করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখিয়ে মাত্র ১০০ টাকা জমার বিপরীতে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারে। আইনি দিক থেকে ১৮ বছরের কম বয়সীরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এ ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন হয়। ছোটবেলা থেকেই আর্থিক সচেতনতা ও সঞ্চয়প্রবণতা গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে জমার ওপর সর্বোচ্চ সুদ দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
এএইচ/পিএস







































