• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বিষণ্নতা ছুঁয়েছে শিক্ষার্থীদের


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৪:৪৭ পিএম
বিষণ্নতা ছুঁয়েছে শিক্ষার্থীদের

ঢাকা : টানা দেড় বছর পর গত রোববার থেকে স্কুল কলেজে ক্লাস করতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষে ফিরে শিক্ষক, বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে দেখা হওয়া, এক সাথে ক্লাস করলেও শিক্ষাঙ্গনে নেই আগের মতো উচ্ছলতা। বিধি মেনে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ক্লাস হয়েছে মাত্র চারদিন।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় পর স্কুলে ফিরে আগের মতো স্বাভাবিক পাঠগ্রহণে মনোনিবেশ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।    

শিক্ষা গবেষকদের ধারণা, করোনার বেড়াজালে অস্বাভাবিক পরিবেশে বিষন্নতায় ভুগছে অনেকে। আর অবস্বাদগ্রস্ত  হতে পারেন শিক্ষকরাও। তাই পাঠদানে আরো সহনশীলতার পরামর্শ তাদের। দীর্ঘ বিরতির পর স্কুল খুললেও অনেক নিয়মই বদলে গেছে।

বিধিনিষেধ বেড়ি পড়িয়েছে দুরন্ত শৈশবে। অনেক শিশু গত বছর প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েও ক্লাস করতে পারেনি। দেশে সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল ২০২০ সালের ১৬ মার্চ। তার পরদিন ১৭ মার্চ ছিল জাতীয় ছুটি। সেদিন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজনের প্রধান অনুষ্ঠানমালাও হওয়ার কথা ছিল।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কিন্তু এরই মধ্যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়লে তার এই যাত্রা বাতিল করা হয় শেষ মুহূর্তে। ১৮ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি পরবর্তীতে যে পাবলিক পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল সেগুলো

ও অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলোর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি ফলাফল প্রকাশ করা হয় যাকে ব্যাপকভাবে ‘অটোপাশ’ বলে অভিহিত করা হয়।

এরপর গত দেড় বছরেরও বেশি সময়ে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় শ্রেণিকক্ষে কোনো পাঠদান হয়নি।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত মার্চ ২১ মাস পর্যন্ত টানা এক বছর পৃথিবীজুড়ে প্রায় সতের কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দশ কোটি শিশুই ছিল ১৪টি দেশের, যেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

বিশ্বব্যাংকের এক হিসেব থেকে জানা যায়, ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল চার কোটির কিছু বেশি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম পৃথিবীজুড়েই ব্যাহত হলেও টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নজির খুব কম দেশেই আছে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ও মাদরাসাসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খুলে দেওয়া হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।

স্কুল খোলার দিন অনেক স্কুলেই শিক্ষার্থীদের ফুল এবং চকলেট দিয়ে স্বাগত জানাতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ভিড় এড়াতে অনেক স্কুলেই অভিভাবকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোনিবেশ করতে শিক্ষকদের অনেক কৌশলে ক্লাস পরিচালনা করতে দেখা গেছে। এখনই বাড়তি পরশোনার চাপ দিচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় পর স্কুলে ফিরে উচ্ছলতা হারানো শিশুদের মনোযোগ তৈরিতে কাজ করছেন শিক্ষকরা।

কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক জানান, শিশুমন এতোটাই অবসন্ন যে, ছুটি ঘণ্টায়ও নেই আগের মতো বাড়ি ফেরার উচ্ছলতা। সেই চেনারূপ ফিরিয়ে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ এখন তাদের।

গতকাল ঢাকার মহাখালীতে বিএএফ শাহীন স্কুলের ফটক দিয়ে সকালে দলে দলে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করছিল। এসময় অনেককেই জড়ো হয়ে গল্প করতে দেখা গেছে। তাদের চেহারায় ছিল খুশির ঝিলিক, অনেকদিন পর বন্ধু সহপাঠীদের সাথে এক সাথে আড্ডা দেবার আনন্দে মেতে ছিল তারা।

রাজধানীর একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিয়ান হোসাইন জানায়, দীর্ঘদিন পর স্কুলে ক্লাস করতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে। কিন্তু পড়াশোনা কোথার থেকে কি ভাবে করবে সেটা নিয়ে চিন্তিয় আছে এ শিক্ষার্থী।

তবে, ওই শিক্ষার্থীর পিতা বলেন, দীর্ঘদিন পর স্কুলে যাবার খুশিতে রোববার তার ছেলে রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারেনি। তবে এখন স্কুলে ক্লাস শুরু করে বই বড়তে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিষন্নতা কাজ করছে এ শিক্ষার্থীর। এমনকি একটানা দীর্ঘক্ষণ ধরেও সে পড়ার টেবিলে থাকছে না।

গত কয়েক দিন রাজধানীর বেশ কিছু স্কুলে প্রবেশ করে দেখা গেছে, স্কুলে প্রবেশের সময় মাস্ক আছে কিনা সেটি যাচাই করা হচ্ছে। একই সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া এবং শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। এছাড়া শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও সামাজিক দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্যদিকে গত রোববার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও প্রায় এক হাজারের মতো কিন্ডারগার্টেন স্কুল এখনো খুলেনি।

এসব স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, মূলত আর্থিক অসচ্ছলতা, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সংকটের কারণেই স্কুলগুলো বন্ধ রাখতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং কলেজ ঐক্য পরিষদ দাবি করছে যে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নানা সংকটের মুখে ১০ হাজারের মত স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই এখন প্রথামিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় তাদের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানায় ঐক্য পরিষদ।

ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের  সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় পর ক্লাসরুমে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরাও মনস্তাত্বিক সমস্যায় ভুগতে পারেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে আর হঠাৎ করে ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশ করাও অনেকটা কঠিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে অনেকটাই। তাই, ক্লাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আরো সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!