• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাচুর্য কেড়ে নিয়েছে বিটিভি এবং শুক্রবার


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, (রংপুর)  প্রতিনিধি জানুয়ারি ২০, ২০১৭, ১১:৪০ এএম
প্রাচুর্য কেড়ে নিয়েছে বিটিভি এবং শুক্রবার

রংপুর: যুগযুগ ধরে শুক্রবার আসবে, হয়তো বিটিভি থাকবে, থাকবে সেই বিটিভির বাংলা ছায়াছবি। কিন্তু সেই মানুষগুলো থাকবে না। যারা একদিন শুক্রবারের জন্য অপেক্ষা করতো। অপেক্ষা করতো সেই বাংলা সিনেমার জন্য। প্রতিটা শুক্রবার যেন এক একটা উৎসবের দিন ছিলো। 

শুক্রবার এলে সকালে উঠেই বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা তারাতারি কাজ শেষ করে দুপুর তিনটার পর বিটিভির সিনেমা দেখতে বসতো। পরিবারের সকল সদস্য একত্রে সিনেমা দেখতো। তাছাড়া আশপাশের অনেকেই আসতো সেই সিনেমা দেখতে। যাদের টিভি ছিল তাদের ঘর হয়ে উঠতো এক একটা মিনি সিনেমা হল। 

সিনেমা দেখতে দেখতে যদি দু’ একটা হাসির দৃশ্য আসতো তা দেখে সকলে প্রাণখুলে হাসতো। আবার কেউ কেউ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতো। কিছুক্ষণ পরে কান্নার দৃশ্য দেখে সেই ব্যক্তিরাই আবার হুহু করে কাঁদতো। বাংলা সিনেমাকে ঘিরে কি আবেগ আর ভালোবাসা ছিল সে সময়।

এভাবেই বিটিভি’র পর্দায় নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা বলছিলেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ব্রাক্ষ্মণীকুন্ডার বগুড়াপাড়া প্রতিপাল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। 

বিটিভির সাথে জড়িয়ে থাকা শুক্রবারের নানান স্মৃতি আর মজার মজার অভিজ্ঞতার কথা এখনো মনে নাড়া দেয় রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্ত্বর এলাকার লাভলী বেগমের। তিনি বলছিলেন, শুক্রবার সকাল শুরু হতো দ্রুত কাজ শেষ করার মিশন নিয়ে। যতো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হতো, ততোই যেন ভালো সময় পার হতো সিমেনা দেখতে বসে। আশপাশের বাড়িগুলোতে টিভি না থাকায় তখন সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার তার বাড়ি হয়ে উঠতো মিনি সিনেমা হল। এখন সেই টেলিভিশন আছে, বিটিভি আছে, বাংলা সিনেমাও আছে, কিন্তু শুক্রবারকে ঘিরে আর আগের মতো মানুষের উপচে পড়া ভিঢ় নেই। নেই বাংলা সিনেমা দেখা নিয়ে হৈ চৈ। 

এরকম বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের রয়েছে শুক্রবারের নানান স্মৃতি । এখন সেই মানুষগুলোর কাছে ফেলে আসা দিনগুলো শুধুই স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি কিছুক্ষণ। সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে সেই মানুষগুলোর মনও। বদলে গেছে বাংলা সিনেমার সুদিনও। এখন সিনেমা দেখা নিয়ে ঘরে বাইরে মিনি সিনেমা হলের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় না। হয় না শুক্রবারকে ঘিরে বাড়তি কোন উম্মাদনা। সবই যেন হারিয়ে গেছে আধুনিকতার ছোয়ায়। 

কথা হয়েছিলো নাট্যকার ও নির্মাতা এম এ মজিদের সাথে। তিনি অনেকটা অক্ষেপ নিয়েই বলছিলেন, এখন আধুনিকতা এসেছে। প্রযুক্তির ছোয়ায় দিন দিন বাড়ছে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা। মানুষ ছেড়েছে বিটিভি আর বিটিভির বাংলা ছায়াছবি। আধুনিকতা আমাদের দিয়েছে প্রাচুর্য, দিয়েছে অনেক চ্যানেল কিন্তু কেড়ে নিয়েছে ভালোবাসার গভীরতা। এখন মানুষ ভালোবাসতেই ভুলে যাচ্ছে।

তবুও তিনি হতাশ নন। তার মতে, শুক্রবার তো আসবেই। কিন্তু ফেলে আসা সেই দিনের স্মৃতি আর বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরেয়ে আনতে এখন থেকেই পরিকল্পনা নেয়া উচিত। শুধু মুখে বলে নয় কাজ করে  দেখাতে হবে। তবেই নতুন প্রজন্ম বুঝবে বাংলা সিনেমা আর বিটিভির কদর। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!