• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্রপাড়া এখন যেন মৃত্যুপুরী


বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ৪, ২০১৮, ১১:৪২ এএম
চলচ্চিত্রপাড়া এখন যেন মৃত্যুপুরী

কাকরাইল ফিল্মপাড়া

ঢাকা: চলচ্চিত্রপাড়া এখন যেন মৃত্যুপুরী। বড়ই দুর্যোগে রয়েছে চলচ্চিত্রপাড়া। সিনেমা নেই। সিনেমার ব্যবসা মন্দা। প্রযোজকরা ক্রমেই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। এমন নানা প্রতিকূলতায় কাকরাইলের চলচ্চিত্রপাড়া এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশ স্বাধীনের আগেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থাগুলোকে ঘিরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত হয় প্রযোজনা সংস্থার অফিস।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তোপখানা রোড, নয়া পল্টন, কাকরাইল, গ্রিন রোড, সিদ্দিক বাজার, নওয়াবপুর, ওয়াইজঘাট, ইসলামপুর, গুলিস্তান, দিলকুশা, মতিঝিল, বিজয়নগর, ওয়ারী, পুরানা পল্টন, গুলশান, ধানমন্ডি, আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ নানা স্থানে বিস্তৃত হয় চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার অফিস। এসব অফিসকে ঘিরে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা ছিল রমরমা। 

১৯৫৬ সালে এ দেশে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণ হলে স্থাপিত হয় প্রযোজনা সংস্থার অফিস। ইকবাল ফিল্মসের ব্যানারে ছবিটি নির্মাণ করেন আবদুল জব্বার খান। তখন এই সংস্থার অফিস স্থাপিত হয় ভিক্টোরিয়া পার্কে অবস্থিত প্রভেনশিয়াল বুক ডিপো ভবনের দ্বিতীয় তলায়। দেশ স্বাধীনের পর গুলিস্তানে গুলিস্তান সিনেমা হল ভবনে প্রযোজনা সংস্থার অফিসগুলো একত্রিত হয়ে গড়ে তোলে ফিল্মপাড়া। 

আর এই ফিল্মপাড়া ছিল দিনে রাতে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর। দুই হাজার সালের প্রথম দিকে গুলিস্তান সিনেমা হল ভেঙে ফেলা হলে প্রযোজনা সংস্থাগুলো কাকরাইলে চলে আসে। এখানে রাজমনি ভবন, ভূইয়া ম্যানশন, ফরিদপুর ম্যানশন, যমুনা ভবন, ইস্টার্ন কমার্শিয়াল ভবনে খোলা হয় প্রযোজনা সংস্থার বিভিন্ন অফিস। তখন থেকেই চলচ্চিত্রপাড়া হিসেবে খ্যাতি লাভ করে কাকরাইল। 

এই চলচ্চিত্রপাড়া শতাধিক চলচ্চিত্র  প্রযোজনার অফিস এই শিল্পটিকে সরব করে রেখেছিল। ২০০৭ সালের পর থেকে নানা কারণে চলচ্চিত্র ব্যবসায় মন্দাভাব শুরু হলে ধীরে ধীরে প্রযোজনা সংস্থা বন্ধ করে দিয়ে অফিস গুটিয়ে নিতে শুরু করে প্রযোজকরা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন উদ্বেগের সঙ্গে জানান, এখন এই ফিল্মপাড়ায় দুই ডজন অফিসও নেই। যেগুলো আছে তাতে চলচ্চিত্রের কোনো কাজ নেই। বাধ্য হয়ে অন্য ব্যবসায় অফিসগুলোকে ব্যবহার করছেন সংশ্লিষ্ট প্রযোজকরা।

মিয়া আলাউদ্দীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাকরাইলে ৬ তলা বিশিষ্ট ভূইয়া ম্যানশন ছিল প্রযোজনা সংস্থার সবচেয়ে বড় অফিস। এখানে অর্ধশতেরও বেশি অফিস ছিল। বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৭টি অফিস। এগুলো হলো— আশীর্বাদ চলচ্চিত্র, এন এন ফিল্মস, বেনানা ফিল্মস, মালঞ্চ কথাচিত্র, জননী কথাচিত্র, টি ও টি ফিল্মস এবং হার্টবিট প্রোডাকশন। 

এসব সংস্থা থেকেও নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় না। মিয়া আলাউদ্দীন জানান, বর্তমানে কাকরাইলের বাইরে নিউ ইস্কাটন রোডের মিডিয়া গলিতে হাতে গোনা কয়েকটি প্রযোজনা সংস্থার অফিস খোলা হয়েছে। এগুলো থেকেও নিয়মিত ছবি পাওয়া যায় না। মূলত অন্য ব্যবসায় অফিসগুলো ব্যবহূত হয়। 

যেসব নামি-দামি প্রযোজনা সংস্থা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন, ত্রয়ী চিত্রম, মজনু মুভিজ, এস এস প্রোডাকশন, মেট্রো ফিল্মস, মমতা কথাচিত্র, গীতিকথা চিত্র, জুপিটার ফিল্মস, মাসুদ কথাচিত্র, চিত্রা ফিল্মস, জ্যাম্বস মুভিজ, ডি রাস ফিল্মস, যমুনা ফিল্মস, সুচন্দা চলচ্চিত্র, ববিতা মুভিজ, পারভেজ ফিল্মস, রোজী ফিল্মস, মধুমিতা মুভিজ, মেরিনা মুভিজ, উজ্জ্বল ফিল্মস, দেশ কথাচিত্র, আজাদ পিকচার্স, স্টার কর্পোরেশন, লিবার্টি ফিল্মস, গীতাঞ্জলি চলচ্চিত্র, মুস্তাফিজ ফিল্মস, সোলার মুভিজ, খান আতা প্রাইভেট লি., আলমগীর পিকচার্স, শুক্লা ফিল্মস, নাজমা ফিল্মস, স্বরলিপি কথাচিত্র, চিত্রদূত, জাহাঙ্গীর ফিল্মস, লিও ফিল্মস, মিতালি কথাচিত্র, লিবার্টি ফিল্মস, পপুলার কথাচিত্র প্রভৃতি।

সোনালীনিউজ/বিএইচ
 

Wordbridge School
Link copied!