• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুই কী আমাদের শ্রদ্ধা?


এম. সোলায়মান ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩, ১১:৪৮ এএম
মৃত্যুই কী আমাদের শ্রদ্ধা?

ঢাকা: একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা তোমাদের কোনো ব্যস্ততার মাঝে হঠাৎ শুনবে আমার মৃত্যুর সংবাদ। হয়তো তখন একটু চমকে উঠবে। অনেকে খবরটা বিশ্বাস করতে চাইবে না, গুজব বলে উড়িয়ে দিবে। কিছুক্ষণ পর যখন নিশ্চিত হবে সত্যিই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে আমার প্রাণ। কেউ কেউ তখন ছুটে আসবে আমার নিথর দেহের পাশে। 

কেউ বা আবার আমার ছবি দিয়ে ফেসবুকে মৃত্যুর সংবাদটি দিয়ে দিবে। পরিচিত সবাই শোককাতর হয়ে যাবে। মৃত্যুর পরে হয়তো আমার প্রশংসায় মেতে উঠবে অনেকেই। একে অন্যের কাছে আমার সম্পর্কে বলাবলি করবে। পরিচিত সাংবাদিক বন্ধুরা হয়তো একটি শোক বার্তা পত্রিকায় ছাপা করতে ভুলবে না। কিন্তু কি হবে এত কিছু করে? জীবদ্দশায় যারা আমাকে বুঝলো না, মূল্যায়ন করলো না, মৃত্যুর পরে কেন এত শ্রদ্ধা? কেন এত ভক্তি? তবে কি আমার মৃত্যুর সংবাদই তাদের কাছে খুশীর একটি বার্তা! 

এমন কথাগুলো উদাহরণ টেনে লিখতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না, তারপরো লিখলাম এ কারণে- আমাদের দেশ থেকে অনেক গুণী মানুষই জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন। অনেক গুণী মানুষরা এখনো বেঁচে আছেন বাংলার বুকে। কিন্তু এই মানুষগুলোর জীবদ্দশায় আমরা কি একটিবারও কোনো খোঁজ রেখেছি? কোথায় আছে কেমন আছে? তাদের পাশে গিয়ে কি দাঁড়ানোর একটিবারও চেষ্টা করেছি? 

সম্প্রতি সাপ্তাহিক ‘একতা’ পত্রিকায় আমার একটি কলাম ছাপা হয়েছিল দেশের চার বীর নারী নিয়ে। সেখানে উল্লেখ করেছিলাম দেশের চার বীর নারীর সংগ্রামী জীবনের কিছু কথা। নিজেদের সব কিছু হারিয়ে পথে বসেছিলেন এসব নারীরা। যাদের কথা বলছিলাম তারা হলেন- ফেরদৌষি প্রিয়ভাষিণি, রমা চৌধুরী, কাকন বিবি ও তারামন বিবি। তারা জীবদ্দশায় বাঁচার জন্য অনেক সংগ্রাম করে গেছেন, কই কেউতো তখন তাদের পাশে দাঁড়াননি। মুক্তিযুদ্ধের পর এক বুক কষ্ট-দুঃখ-যন্ত্রণা নিয়ে বীর নারীরা তাদের আপনজনদের কাছে ফিরে গিয়েও কোথাও ঠাই মেলেনি তাদের। ধর্ষকেরা নাকি তাদের ইজ্জত নষ্ট করে ফেলেছে, তার আর ইজ্জত নেই, কাজেই স্বামী তাকে ঘরে তুলবে না। সমাজের মানুষই ধর্ষিতা নারী হিসেবে চোখ উচকিয়ে কথা বলতো। তবে তাদের মৃত্যুর পরে তাদেরকে নিয়ে কেন এত সম্মানের ষ্টাটাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সয়লাব হলো? কি কারণে ছিল এর ব্যাখা কেউ কি দিতে পারবেন আমায়? 

সাপ্তাহিক ‘একতা’ পত্রিকা

আমি মনে করি এগুলো হলো লোক দেখানো দেশপ্রেমের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা থেকে একটি শোক স্টাটাস মাত্র। মৃত্যুর পরে সম্মান দিলেন, নাকি খুশী হলেন সেটাই বোঝা দায়। তবে কিছু মানুষ আছে এর ব্যতিরেকে যারা সত্যিই মানুষকে যেমন বেঁচে থাকতে সম্মান দিতে জানে, ভালবাসতে জানে মৃত্যুর পরে তাদের শ্রদ্ধাটাই থাকে প্রকৃত। 

অনেক গুণী মানুষরা আমাদের সমাজের প্রতি তিরস্কার জানিয়ে হাজারো অভিমান বুকে নিয়ে হারিয়ে গেছেন চিরতরে। জীবদ্দশায় আমরা পারিনি তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে। এজন্য আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আমরা কি পারি না জীবদ্দশায় ভাল মানুষের পাশে দাঁড়াতে? তাদের প্রশংসা এবং প্রাপ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে? 

কারো মৃত্যুর পরে লোক দেখানো সম্মান ও ভালবাসা না দেখিয়ে আসুন নি:স্বার্থ ভাবে জীবদ্দশায় সেইসব মানুষের পাশে দাড়াই যারা আমাদের ভালবাসে, এ দেশকে ভালবাসে এবং সমাজের মানুষদের নিয়ে ভাবে। 

#পুরানো লেখা
লেখক: এম সোলায়মান, মফস্বল ইনচার্জ, সোনালীনিউজ।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!