• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিক পৃথিবীতে অমানবিক নীতি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
মানবিক পৃথিবীতে অমানবিক নীতি

ঢাকা : যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রস্তাবিত রুয়ান্ডা বিল পাস হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর আপত্তির মুখে পাঁচ মাস ঝুলে থাকার পর গত সোমবার রাতে পাস হয়েছে বিতর্কিত বিলটি। এখন শুধু এটি আইনে পরিণত হওয়ার অপেক্ষা। আইন হিসেবে পাস হলে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন তাদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠাতে পারবে দেশটি।

বিবিসি জানাচ্ছে, এই পরিকল্পনা আরও দুই বছর আগের। ২০২২ সালের এপ্রিলে রুয়ান্ডার সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জায়গা দেবে রুয়ান্ডা। বিনিময়ে রুয়ান্ডাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয় ব্রিটিশ সরকার। পাশাপাশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পুনর্বাসন বাবদ বাড়তি অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

অবশ্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রুয়ান্ডা বিল উত্থাপনের পর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে বিরোধী দলগুলো। সুনাকের দলেরও বেশ কয়েকজন এমপি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিলেন। ২০২২ সালের জুনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি রওনা করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের এক আদেশে তা বাতিল হয়ে যায়। পরের বছরের নভেম্বরে এ ধরনের পরিকল্পনাকে অবৈধ ঘোষণা করে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট, তবে ঋষি সুনাক চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০১৩ সালের শেষের দিকে এসে নানা বিতর্কের পরেও হাউজ অব কমন্সে পাস হয় তার প্রস্তাব।  

তবে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলে আসছে, এই পরিকল্পনা কার্যকরই করা যাবে না। তাছাড়া এই পরিকল্পনা অনৈতিক। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার দূরের রুয়ান্ডাতে পাঠানো মেনে নেওয়া যায় না। এই পরিকল্পনা আইনের শাসনের প্রতি উল্লেখযোগ্য হুমকি তৈরি করছে। যুক্তরাজ্যের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান সাচা দেশমুখ বলেছেন, এই পরিকল্পনায় মানবাধিকারের ধারণাকেই আক্রমণ করা হয়েছে। আর যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রুয়ান্ডাকে কখনই নিরাপদ দেশ বলা যায় না।

এর মধ্যে গত সোমবার রাতে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেন। সোমবার পাস হওয়া বিলটিতে রুয়ান্ডাকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য নিরাপদ দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুনাক বলেন, ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ফ্লাইটগুলো রুয়ান্ডার উদ্দেশে রওনা করবে। তবে এই সময়ে আদৌ পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা থেকে গেছে। কারণ, এ নিয়ে আদালতের পক্ষ থেকে বাধা আসতে পারে। আবার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাঠাতে উড়োজাহাজের ব্যবস্থা করতেও সময় লাগতে পারে।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি মনে করেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকায় আসা বন্ধ করতে এই বিল পাস হওয়াটা যুগান্তকারী মুহূর্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে ক্লেভারলি বলেন, আমি প্রথম ফ্লাইটের পথ পরিষ্কার করতে যা যা প্রয়োজন, তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সেটাই আমরা করেছি। এখন ফ্লাইটগুলো যেন রওনা করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

ইতিমধ্যে চুক্তির আওতায় রুয়ান্ডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ২২ কোটি পাউন্ড পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া বছরে ৫ কোটি পাউন্ড করে আগামী ৩ বছরে অতিরিক্ত ১৫ কোটি পাউন্ড পরিশোধের কথা আছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!