শুক্রবার দিনভর ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অন্তত ৭২ জন নিহত এবং আরও অন্তত ৩১৪ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের পর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৩০ জনে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯ জন ফিলিস্তিনি।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে যেসব নিহত ও আহতকে আনা সম্ভব হয়েছে— কেবল তাদেরকেই হিসাবের মধ্যে ধরা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের তলায় এবং সড়কে এমন অনেক মৃতদেহ পড়ে আছে, যাদের উদ্ধার সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব ও চলমান বোমাবর্ষণ এ জন্য দায়ী। ফলে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর পাশাপাশি খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রীর প্রবেশও সীমিত করেছে ইসরায়েল। এর ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত না খেতে পেয়ে এবং অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছেন ২০১ জন, যাদের মধ্যে ৯৮ জনই শিশু।
খাদ্য ও ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপরও নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এভাবে ত্রাণ নিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৭৭২ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জন শুক্রবার প্রাণ হারিয়েছেন।
অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর শিকার এবং ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ব্যক্তিদেরও মোট নিহত ও আহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
হামাসের হামলার জবাব দিতে ও জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।
তবে বিরতির দুই মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে গত প্রায় পাঁচ মাসে নিহত হয়েছেন ৯ হাজার ৮২৪ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৪০ হাজার ৩১৮ জন।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাস ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস—আইসিজে)-এ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করাই এই অভিযানের লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
ওএফ







































