• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাময় বছরে যাদের হারিয়েছে দেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ০৪:৫৪ পিএম
করোনাময় বছরে যাদের হারিয়েছে দেশ

ছবি: সোনালীনিউজ

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী অদৃশ্য ভাইরাস করোনার ছোবল থেকে যেনো কেউই রেহাই পাচ্ছে না। বিশ্বের পাশাপাশি দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তি, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, পুলিশ-র্যাব-বিজিবি সদস্য, সেনাসদস্য, ব্যবসায়ী, আমলা, ব্যাংক কর্মকর্তা, দুদক কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্ব কেউ-ই বাদ যাচ্ছেন না এই ভাইরাস থেকে। ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছেন অনেক প্রিয় ও আলোচিত প্রমূখ। 

২০২০ সালে বাংলাদেশ যাদের হারিয়ে শোকাহত তাদের আরেকবার স্বরণ করা যাক

শিক্ষাঙ্গন:

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান: করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ মে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মারা যান। তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৭ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৫ দিনের মাথায় ২ মে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। করোনায় আক্রান্ত ও হার্টের সমস্যার পাশাপাশি ৮৩ বছরের এই অধ্যাপক কিডনি, ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন।

অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন: গত ১৭ জুলাই দেশবরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মারা যান। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রখ্যাত প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী: গত ২৮ এপ্রিল মারা যান জাতীয় অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশের প্রকৌশল জগতে সবার পরিচিত নাম। একাধারে তিনি গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ছিলেন। ১৯৪৩ সালে সিলেটে তার জন্ম।

সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর: করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ মে মঙ্গলবার মারা যান সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর। নিলুফার মঞ্জুর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী।

শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ইমামুল কবির শান্ত: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ মে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. ইমামুল কবির শান্ত। একাধারে তিনি শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস, শান্তনিবাস, শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।

রাজনৈতিক অঙ্গন

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেইন স্ট্রোকে গত ১৩ জুন মারা যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ জুন দেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেওয়া সাহারা খাতুন মারা যান। থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা ঢাকা-১৮ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারে ৩ বছরের বেশি সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ: গত ১৩ জুন দিনগত রাতে মারা যান ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ। রাজধানীর সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান তিনি।

সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান: করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ জুন ভোররাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মারা যান। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

সাবেক এমপি মকবুল হোসেন: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ মে রাতে মারা যান আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মকবুল হোসেন।

সাবেক এমপি কামরুন্নাহার পুতুল: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২১ মে রাতে মারা যান বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদক কামরুন্নাহার পুতুল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কামরুন্নাহার পুতুল তৎকালীন বগুড়া-জয়পুরহাট জেলার সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি মনোনীত হয়েছিলেন।

বিএনপির সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ জুলাই মারা যান সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা শাহজাহান সিরাজ। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি।

বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর মারা যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি।

বিএনপির সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির: প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ মে মারা যান বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আনোয়ারুল কবির তালুকদার। তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান।

শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান: গত ১ জুলাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাসভবনে মারা যান। লতিফুর রহমানের জন্ম জলপাইগুড়িতে, ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট। তিনি ঢাকায় থাকতেন গেন্ডারিয়ায়। পড়াশোনা শুরু সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। সেখান থেকে ১৯৫৬ সালে শিলংয়ের সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে। তারপর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন লতিফুর রহমান। ঢাকায় এসে ১৯৬৬ সালে ডব্লিউ রহমান জুট মিল ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন। দেড় বছর কাজ শেখার পর নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। এভাবে কাজ করেন ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৭২ সালে তিনি সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন প্রায় শূন্য হাতে। নিজের হাতে তৈরি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপ ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। ট্রান্সকম গ্রুপে এখন কাজ করছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, সুনাম আর সততার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে তিনি পান বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে নোবেল বলে খ্যাত।

যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম বাবুল: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ জুলাই দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল মারা যান। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই বরেণ্য শিল্পপতি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

শিল্প উদ্যোগতা আব্দুল মোনেম: সুপরিচিত শিল্পগোষ্ঠী আবদুল মোনেম লিমিটেডের (এএমএল) প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মোনেম গত ৩১ মে মারা যান। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৭ মে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি কিডনির রোগেও ভুগছিলেন।

পার্টেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাসেম: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এম এ হাসেম। করোনা পজিটিভ আসার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

এসআলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ মে জুন এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম মারা যান। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।  মোরশেদুল এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই। তিনি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ক্রিড়া অঙ্গন

বাদল রায়: নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন। সেখানে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বাদল রায়। নির্বাচনে পরাজয়ের পর দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে নিজের জায়গা থেকে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এ খেলোয়াড়। তবে সবাইকে কাঁদিয়ে ২২ নভেম্বর মারা যান তিনি। 

মরণব্যাধি ক্যান্সারের সাথে লড়তে লড়তে হার মানেন তিনি। বাদল রায় ক্রীড়াঙ্গনের সাথেই কাটিয়েছেন সারাটা জীবন। ক্লাব ফুটবলে মোহামেডানের হয়েই তারকা ক্ষ্যাতি পান তিনি। ১৯৮৬ সালে তার অধিনায়কত্বেই তিন মৌসুম পর লিগ শিরোপা জেতে মোহামেডান। ১৯৮২ সালে মালয়শিয়ার বিপক্ষে গোল করে এশিয়ান গেমসে প্রথম জয় এনে দিয়েছিলেন বাদল। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের সম্মানও পেয়েছেন তিনি।

সাংস্কৃতিক অঙ্গন

কামাল লোহানী: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২০ জুন মারা যান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৬ মাসের মাথায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি পিআইবিতে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালে ২ বছরের জন্য আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

অভিনেতা আলী জাকের: ক্যানসারের সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ নভেম্বর মারা যান বরেণ্য অভিনেতা ও নির্দেশক আলী যাকের। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৭৬ বছর বয়সে চিরবিদায় নেয়া আলী যাকের ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন।

ইশরাত নিশাত: দেশের মঞ্চ নাটকের 'বিদ্রোহী কণ্ঠ' ছিলেন ইশরাত নিশাত। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার কণ্ঠ ছিল সবসময় সোচ্চার। চলতি বছর ২০ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

আজাদ রহমান: বিখ্যাত সুরকার গুণী সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান মৃত্যুবরণ করেন ১৬ মে। তিনি বাংলা খেয়াল গানের প্রবর্তক ছিলেন। বাংলাদেশে প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন বাবুল চৌধুরীর 'আগন্তুক' ছবিতে।

এন্ড্রু কিশোর: ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ২০২০ সালের ৬ জুলাই সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। বাংলা সংগীতের জনপ্রিয় এ শিল্পী ‘প্লে-ব্যাক সম্রাট’ হিসেবেও পরিচিত। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। ছয় বছর বয়সে সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন তিনি। গুণী এ শিল্পী আমাদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্যা জনপ্রিয় গান। স্বীকৃতি হিসেবে ‘শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী’ ক্যাটাগরিতে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া একাধিক বাচসাস পুরস্কার এবং মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা আছে তার ঝুলিতে।

চিত্রনায়ক আব্দুস সাত্তার: আশির দশকের জনপ্রিয় নায়ক সাত্তার। ১৯৬৪ সালে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে ইবনে মিজান পরিচালিত ‘আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী’ সিনোমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে ‘রঙ্গিন রূপবান’ সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সাত্তার। ক্যারিয়ারে তিনি ১১০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ৫ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

আলাউদ্দীন আলী: সুর সম্রাট আলাউদ্দীন আলী মারা গেছেন ২০২০ সালের ৯ আগস্ট। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আলাউদ্দীন আলী দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস এবং রক্তের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৯৫২ সালেল ১৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আলাউদ্দীন আলী ছিলেন একাধারে একজন সুরকার, বেহালাবাদক, সংগীতজ্ঞ, গীতিকার এবং সংগীত পরিচালক। সংগীত পরিচালক হিসেবে সাতবার এবং গীতিকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

কে এস ফিরোজ: শোবিজের পরিচিত মুখ অভিনেতা কে এস ফিরোজ মারা গেছেন ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও করোনা উপসর্গ ছিল তার। ১৯৪৪ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন এ অভিনেতা। ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীর মেজর পদে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন তিনি। নাট্যদল ‘থিয়েটার’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে অভিনয়ে কে এস ফিরোজের পথচলা শুরু। প্রথম অভিনয় করেন ‘দীপ তবুও জ্বলে’ নাটকে। ছোটপর্দার পাশাপাশি বড়পর্দাতেও ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

সাদেক বাচ্চু: করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। জনপ্রিয় এ অভিনেতার আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। কিংবদন্তি পরিচালক এহতেশামের ‘চাঁদনী’ সিনেমায় তার নাম বদলে সাদেক বাচ্চু রাখা হয়। তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাটক রচয়িতা, নাট্যনির্দেশক ও ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে সক্রিয় ছিলেন এ অভিনেতা। ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি হিসেবে ‘শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনেতা’ ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

মহিউদ্দিন বাহার: গত ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার। তিনি জনপ্রিয়তা পান ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'র সুবাদে। ১৯৪৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন বাহার। তিনি সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে ২০০৫ সালে অবসর নেন। সরকারি চাকরিজীবী হলেও অভিনয় ছিল মহিউদ্দিন বাহারের নেশা। স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ছোটদের সিরিজ ‘রোজ রোজ’-এ প্রথম অভিনয় করেন মহিউদ্দিন বাহার। এরপর চাকরির পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিমসহ অনেকের নাটকে অভিনয় করেন। প্রায় ২৬ বছর ধরে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে অভিনয় করেন মহিউদ্দিন বাহার। ইত্যাদিতে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে মহিউদ্দিন বাহারের স্বভাবসুলভ সংলাপ সবার নজর কাড়ত।

নাট্যজন মান্নান হিরা: বছরের শেষ দিকে এসে অর্থাৎ বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান বাংলাদেশের পথনাটকের অন্যতম পুরোধা নাট্যজন মান্নান হিরা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর৷ মান্নান হীরার জন্ম ১৯৫৬ সালে, সিরাজগঞ্জ জেলায়। মফস্বল শহর থেকে মাধ্যমিক, রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। নাট্যচর্চার শুরু থেকেই তিনি আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

অভিনেতা আব্দুল কাদের: জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদের ৬৯ বছর বয়সে ২৬ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ভারতের চেন্নাইয়ের ক্রিস্টিয়ান মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কয়েকদিন আগে দেশে ফিরেছেন ক্যান্সার আক্রান্ত এই অভিনেতা।১৯৫১ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি থানার সোনারং গ্রামে অভিনেতা আবদুল কাদেরের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর তিনি সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। পরে জুতা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান বাটায় যোগ দেন ১৯৭৯ সালে; সেখানে ছিলেন ৩৫ বছর।

তার অভিনীত মঞ্চনাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে– ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই, স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’। টিভিতে তিনি তিন হাজারের মতো নাটকে অভিনয় করেছেন। বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী তিনি। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের বহু জনপ্রিয় নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন কাদের। 

ইসলামিক অঙ্গন

হেফাজতের আল্লামা আহমদ শফী: গত ১৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাতে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী মারা যান। তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় মামলাও চলমান রয়েছে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজতের মধ্যে বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মাওলানা নুর হোসেন কাসেমী: গত ১৩ ডিসেম্বর মারা যান হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তাবলিগের প্রবীণ মুরব্বি মাওলানা মোজাম্মেল হক: গত ৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি ও কাকরাইল মারকাজের প্রবীণ শুরা সদস্য মাওলানা মোজাম্মেল হক। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে প্রবীণ আলেম ও এ শুরা সদস্য মুফতিয়ে আজম ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা ছিলেন। মরহুম মাওলানা মোজাম্মেল হক তাবলিগের বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ আলেম ও শুরা সদস্য ছিলেন। এছাড়া, তাবলিগ জামাতের তৃতীয় বিশ্ব আমীর হযরতজী মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.)-কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় শুরার সর্বশেষ জীবিত সদস্য ছিলেন তিনি। 

আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ: আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ গত ২৯ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদের খতিব ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি। ত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। প্রাজ্ঞ আলেম, সুবক্তা, চমৎকার কোরআন তেলাওয়াত ও মুফাসসিরে কোরআন হিসেবে মাওলানা আনোয়ার শাহ দেশব্যাপী পরিচিত ছিলেন। 
 
আল্লামা আবদুল মোমিন: ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের নেতা শাইখুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানির (রহ.) খলিফা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ও জামেয়া দারুল কোরআন সিলেটের শাইখুল হাদিস, প্রখ্যাত বুজুর্গ পীরে কামেল আল্লামা শাহ আবদুল মোমিন (শায়খে ইমামবাড়ি) ৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। তিনি আজীবন বহু মসজিদ মাদরাসা ও দ্বীনি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সেজদারত অবস্থায় আল্লামা শাহ তৈয়ব: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির মুহতামিম আল্লামা শাহ্ তৈয়ব গত ২৪ মে দিবাগত রাত দেড়টায় জায়নামাজে সেজদারত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই আলেম বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ছিলেন। ৩৬ বছর তিনি জিরি মাদ্রাসার মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেছেন। 
 
আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী: জামেয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া উমেদনগর হবিগঞ্জের প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী গত ৫ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে শীর্ষস্থানীয় হাদিস বিশারদ, রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন হিসেবে দেশ বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস: চট্টগ্রাম নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস ২৭ মে, বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম ইন্তেকাল করেন। ২০০৪ সালে থেকে নাজিরহাট মাদ্রাসার মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।

মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী: দেশের প্রবীণ রাজনীতিবীদ, ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী ১১ মে রাত সাড়ে আটটায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি দৈনিক সরকার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। 

মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী: নন্দিত মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী গত ১৭ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেড়তলা জামিয়া রাহমানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ওয়ায়েজ। প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশ বিদেশে দ্বীনের প্রচারে কাজ করে গেছেন।

অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার সাঈদী: গত ২১ নভেম্বর সুপরিচিত ধর্মীয় বক্তা অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার সাঈদী ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘ ১৬ দিন হাসপাতালে নীবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থেকে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। গোলাম সরওয়ার সাঈদী ছিলেন একজন পীরজাদা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের প্রয়াত পীর সাহেব আল্লামা হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ গোলাম হাক্কানীর (রহ.)-এর সুযোগ্য সন্তান তিনি। এছাড়া আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হযরত মাওলানা আবু সাঈদ আসগর আহমাদ আল-কাদেরী (র.) -এর নাতি তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা পড়াশোনা করা মাওলানা মো. গোলাম সারোয়ার সাঈদী বিগত কয়েক বছরে ইউটিউব চ্যানেলে ইসলাম বিষয়ক নানা বিষয়ে বয়ান করতেন। এসব বয়ান  তাকে বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে।

আইন অঙ্গন

প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক: গত ২৪ অক্টোবর সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মারা যান। ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে রেখেছিলেন ব্যারিস্টার রফিক। আদ-দ্বীন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়েছিল তাকে। ব্যারিস্টার রফিক বিভিন্ন সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম: করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি  রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৭৫ সালে হাইকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন তিনি। তিনি ১৯৯৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপর ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

সামরিক ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মোহাইমিনুল ইসলাম: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ জুলাই রাতে মারা যান সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৯১ সালের ৪ জুন নৌপ্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর ১৯৯৫ সালের ৩ জুন পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বছর নৌপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সিএমডি’র সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ জুলাই কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ মারা যান। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

উপ-পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান: করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ জুলাই ভোরে মারা যান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর গোয়েন্দা (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান। রাজধানী ঢাকায় রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

চিকিৎসা অঙ্গন

চিকিৎসা অঙ্গনে এবছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২৩ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে চিকিৎসক মারা যান, তিনি হলেন- সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন। গত ৯ মে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১২ মে রাতে মারা যান অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আবুল মোকারিম মো. মহসিন উদ্দিন। তিনি রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

সাংবাদিক

করোনায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক মারা গেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- এনটিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আব্দুস শহিদ, দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবীর খোকন, দৈনিক ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) আসলাম রহমানসহ অনেকেই।

অন্যান্য

সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব সা’দত হুসাইন: গত ২২ এপ্রিল রাতে মারা যান সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়াও, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার নুরুল হক মানিকসহ আরো অনেকেই।

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Wordbridge School
Link copied!