• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
স্বাস্থ্যবিধি মানছে না সাধারণ মানুষ চরম

উদাসীনতায় আবারো ভয়াবহ হতে পারে করোনা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৩১, ২০২১, ১২:১৮ পিএম
উদাসীনতায় আবারো ভয়াবহ হতে পারে করোনা

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : করোনা সংক্রমণ কমায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানায় দেখা দিয়েছে চরম উদাসীনতা। এরকম পরিস্থিতিতে যে-কোনো সময় করোনা আবারো ভয়াবহ রূপ ধরণ করতে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, গণপরিবহনসহ সব জায়গায় সরকারিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথাও বলা হচ্ছে বার বার। কিন্তু সবখানেই তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষ যেন করোনাকে ভুলতে বসেছে। করোনা যেন আবারো ভয়াবহ আকারে ফিরে না আসে এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাই বিশ্বাস করেন না যে করোনা এখনো আছে। থাকলেও প্রভাব কম। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আগ্রহ নেই। অনেকেই সচেতন থাকাটাকে (মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার) অতিরিক্ত ঝামেলা মনে করেন।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা গায়ে গা ঘেঁষে চলছেন। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বাজার করছেন। একই দ্রব্য একাধিক ক্রেতা ছুঁয়ে দেখছেন। একজনের টাকা একাধিক মানুষের হাত ঘুরে যাওয়াটাও স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছে। বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতাই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগের মুখে মাস্ক নেই। কেউ কেউ পরে এলেও তা থুতনিতে লাগিয়ে রেখেছেন। কেউবা হাতের ভাঁজে মাস্ক নিয়ে ঘুরছেন।

মিরপুর-১ নম্বরের একটি বাজারে সবজি বিক্রি করেন কালাম। তিনি বলেন, দোকানে দৈনিক ২০০-৩০০ ক্রেতা আসেন। বেশিরভাগ ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকে না। মানেন না স্বাস্থ্যবিধি।

আরেক বিক্রেতা সফিক বলেন, এই বাজারে ৭২টি দোকান। কোনো দোকানিই স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। মাস্ক পরে কথা বলতে সমস্যা হয় তাদের। বাজার করতে আসা লোকদের মধ্যেও বিক্রেতাদের উদাসীনতা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।

ক্রেতা সাজ্জাদ বলেন, বাজার তো করতেই হবে। আমার একার পক্ষে তো স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। আমি একা মেনেও লাভ নেই। এসে এই ভিড়ের মধ্যেই বাজার করতে হবে। বাউনিয়াবাঁধ বাজারে আসা সেতারা বেগম বলেন, ৯ দিন পর বাজারে আসছি। সহজে আসতে চাই না। আমি তো মাস্ক নিয়ে আসছি, অনেকেই মাস্ক নিয়ে আসে না। এটা যার যার বিষয়।

মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতার পেছনে মূল কারণ কী জানতে চাইলে পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজার কমিটির সদস্য এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানাটা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে না পারার মূল কারণ আমরা মানুষের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছি। যেভাবে বোঝালে মানুষ বুঝবে সেভাবে বোঝাতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে নিজস্ব ভাষা এবং মানুষের প্রকৃতি বুঝে যোগাযোগ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, করোনা এক ধাপেই নির্মূল হওয়ার নয়। এটি কমবে, আবার বাড়বে। এ ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিনিয়ত সচেতন থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবার টিকা প্রদান সম্পন্ন করতে পারলে এক সময় এর প্রভাব শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি আরো বেড়ে গেলে সামাল দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জনস্বাস্থ্যবিদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এখনো দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করায়  আমরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছি। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছি না।

তাই আশঙ্কা করছি যে, মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা না করে চলাফেরা করছে, তাতে সামনের দিনগুলো এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৬৬ জনের দেহে। এক দিনে শনাক্তের এ সংখ্যা গত দেড় বছরে সর্বনিম্ন। এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ১২ এপ্রিল। সেদিন ১৩৯ জন রোগী শনাক্তের খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গতকাল শনিবার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ৮৩৪ জনের। এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৭ জনের দেহে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৮৩৩টি ল্যাবে করোনার ১৩ হাজার ২৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। দেশে এ নিয়ে টানা ৩৫ দিন করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে। গত এক দিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে ১৮১ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৭ জন। সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এক দিনে মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৬ ও নারী ২ জন। এর মধ্যে চল্লিশোর্ধ্ব ২, পঞ্চাশোর্ধ্ব ২ ও ষাটোর্ধ্ব ৪ জন। বিভাগ অনুযায়ী, ঢাকায় ৪, চট্টগ্রামে ২, খুলনায় ১ ও সিলেট ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!