• ঢাকা
  • রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

পাচার নিয়ে শঙ্কিত বিপিসি


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২, ২০২১, ০১:১৮ পিএম
পাচার নিয়ে শঙ্কিত বিপিসি

ঢাকা : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই চলেছে। গত বছরের তুলনায় বর্তমানে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকার তেলের দর এখনো বাড়ায়নি।

কারণ জ্বালানি তেলের দর বাড়লে দেশের উৎপাদন ও পরিবহন খাতে বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি বাড়বে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে চাইলেই সরকার এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

তবে এই দাম বৃদ্ধির সুযোগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কারণ দেশ দুটিতে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের দর সমন্বয় হচ্ছে। সেখানে তেলের দর লিটার প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে স্থল ও সাগরপথে বিচ্ছিন্নভাবে তেল পাচারের ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে সরকারকে।

এরই মধ্যে জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সীমান্ত ও সাগরপথে তেল পাচার ঠেকাতে সতর্ক করা হয়েছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘জুলাই থেকে ডিসেম্বরের যে ফেইজ, তাতে আমরা ডিজেল সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যে মূল্য নির্ধারণ করেছিলাম, সেই মূল্যেই এখনো আমরা তা পাচ্ছি।

এ কারণে জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এমন কোনো সিদ্ধান্তের দিকে আমরা এখনই যাচ্ছি না। তবে বর্তমান বাজারমূল্যকে কতটুকু বিবেচনায় নেওয়া হবে, সেটা সরকারের পলিসির ওপর নির্ভর করছে।

তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের বাজারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি দরে ডিজেল-পেট্রোল বিক্রি হওয়ায় দেশটিতে জ্বালানি পণ্য পাচারের শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা ঠেকাতে দর বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।’

বিপিসি চেয়ারম্যান জানান, ফার্নেস অয়েলের দর বাড়লেও সুবিধা হচ্ছে, বিপিসি এর মূল্য সমন্বয় করেছে। যে কারণে এ তেল আনতে খরচ পড়লেও সেই অর্থে সংস্থাটি চাপে নেই। আবার এ তেল পাঁচারেরও ঝুঁকি নেই।

পিডিবির হিসাবে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কেবল জুলাই মাসেই ব্যবহার করেছে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েল। আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৯০ হাজার টনে। ফলে বাড়তি চাহিদার এই জ্বালানি আমদানি করতে গিয়ে চড়া দামের জালে আটকা পড়ে বিপিসি।

অন্যদিকে মাসের ব্যবধানে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেলের চাহিদাও বেড়ে গেছে তিন গুণের মতো। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলে বিপিসির লোকসান ৮ টাকা করে মোট ১ কোটি টাকারও বেশি।

মাসে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আর মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে বছরে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো লোকসান গুনতে হতে পারে বলে ধারণা বিপিসির। এসব কারণে সরকারের মধ্য থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের দর সমন্বয়েরও কথা বলা হচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে লোকসান এবং পাচার রোধে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করার কথা সরকারেকে বলেছে বিপিসি।

সবশেষ ২০১৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। এরপর আবার ২০১৬ সালে এসে দাম কমানোও হয়।

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের সময় প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপর ২০১৬ সালে তা কিছুটা কমিয়ে লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা, কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা, অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা করা হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৪৯ ডলার। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তা বেড়ে হয়ে যায় ৬১ ডলার। চার মাস পর জুনের মাঝামাঝি আরো বেড়ে ৭১ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি হয় ৭৫ ডলার। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে এখন হয়েছে ৮৪ ডলার।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপিসি বলছে, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করায় ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলে ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকারও বেশি। প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার ৮০০ টন ডিজেল বিক্রি করে তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো। একই সঙ্গে ২ হাজার টন ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয় বাংলাদেশে।

গত ২০ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক ৫৯ মার্কিন ডলার। বিপিসির হিসেবে ডিজেলে তাদের লোকসান হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক ৭৭ টাকা। একইভাবে ফার্নেস অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৪৮৭ দশমিক ২১ ডলার। দেশে বিক্রি হচ্ছে ৫৯ টাকা। এতে লোকসান হচ্ছে ৫ দশমিক ৭৩ টাকা।

বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ১০০ রুপি বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২৫ টাকারও বেশি। এ দাম বাংলাদেশি বাজার থেকে লিটার প্রতি ৬০ টাকারও বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশে ৮৬ টাকায় বিক্রি হওয়া পেট্রল ভারতের বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৮ রুপি বা ১৩০ টাকারও বেশি দরে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আইন অনুযায়ী সব পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম নির্ধারণ করার কথা বিইআরসির। তবে এতদিনে এই কাজটি করে এসেছে সরাসরি জ্বালানি বিভাগ। এখন বিপিসি অন্য জ্বালানি তেলের মতো ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন ও পেট্রোলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা চাইছে।

বিপিসির দেয়া তথ্যমতে, এখন ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ও কেরোসিনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। তবে আগে থেকেই জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসি।

এই পণ্যগুলোর মতোই অন্য জ্বালানি তেল গুলোর দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিপিসিকে দিতে জ্বালানি বিভাগকে চিঠি দেওয়া হবে। লোকসান ও পাচারের কথা চিন্তা করেই প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!