• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বন্ধুত্ব থেকে শত্রুতার পথে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২০, ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম
বন্ধুত্ব থেকে শত্রুতার পথে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক

ছবি: সোনালীনিউজ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব বেড়েছে। এক সময় দীর্ঘদিনের মিত্রতা থাকা দুই দল বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে একে অপরের প্রতিপক্ষের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন, যা সহিংসতার প্রবণতাকে আরও প্রকট করেছে। বিশেষ করে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ধরনের সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। 

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থ ও রাজনৈতিক কৌশলই মূলত এই দুই দলের বিরোধের প্রধান কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, “মূলত ক্ষমতাকেন্দ্রিক সুবিধাবাদের রাজনীতিই এক সময়ের মিত্রকে শত্রুতে পরিণত করেছে। বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে জামায়াত তাদের কার্যক্রমকে বিএনপি বিরোধী করতে সক্ষম হচ্ছে।”

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৫২টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১২৯ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার। এসব ঘটনায় ৫৫টি ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৫০৩ জন এবং নিহত ২ জন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় দলই একে অপরকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখায়। দলীয় শীর্ষ নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা ব্যবহার, এবং মাঠ পর্যায়ের সংঘর্ষ-সবই বিরোধকে আরও তীব্র করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য উভয়পক্ষের দূরত্ব ও বিদ্বেষকে জোরদার করেছে।

ইতিহাসের আলোচনায় দেখা যায়, জামায়াত ১৯৪১ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে-পরে দলের অবস্থান পরিবর্তিত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল, যার কারণে স্বাধীনতার পর তা নিষিদ্ধ হয়। ১৯৭৭ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জামায়াত পুনরায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ শুরু করে। এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াত একাধিক সময়ে জোটে থেকেও বিচ্ছিন্ন থেকেছে।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জামায়াত চারদলীয় জোট গঠন করে এবং নির্বাচনে জয়ী হয়। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দুই দলের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং জোট ভেঙে যায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্বহীন অবস্থায় থাকায় জামায়াত তাদের ক্ষমতামুখী উচ্চাভিলাষ জোরদার করতে শুরু করে।

জামায়াতের সহকারী জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবে। আমরা আমাদের কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ করব এবং শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করব। নেতৃত্বের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের নেতাকর্মীরা সহানুভূতিশীলভাবে কাজ করবে।”

বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “জোট থাকাবস্থায় জামায়াতকে সমর্থন দিতাম, এখন আলাদা। চলার পথে বিতর্ক বা রেষারেষি হওয়া গণতন্ত্রের অংশ। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে এই ধরনের সংকট দূর হবে।”

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উভয় দলের মধ্যে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ এবং সংঘর্ষের মূল কারণ হলো ক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বার্থ। জামায়াত বিএনপিকে কোনঠাসা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে জনগণ বিএনপিকে এখনও সমর্থন করছে। ফলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ চলতে থাকবে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্থিতিশীল হতে পারে।

বন্ধুত্ব থেকে শত্রুতার পথে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক, ক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্বার্থের দ্বন্দ্বের খেলা। নির্বাচনের আগে সহিংসতা, উসকানিমূলক বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিক্রিয়া এই দুই দলের দূরত্বকে আরও দৃঢ় করেছে।

এসএইচ
 

Wordbridge School
Link copied!