• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কি করোনার আরেকটি ঢেউয়ের মুখে?


নিজস্ব প্রতিনিধি জুন ২১, ২০২২, ০১:৫০ পিএম
বাংলাদেশ কি করোনার আরেকটি ঢেউয়ের মুখে?

ফাইল ছবি

ঢাকা : বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ চলছে প্রায় আড়াই বছর ধরে। আর এই ধারা বাংলাদেশেও দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভাইরাসটি তার ভয়াল থাবা বিস্তার করে রেখেছে। ইতোমধ্যে করোনার বেশ কয়েকটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। 

গত কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ যে হারে বাড়ছে তাতে আরেকটি ঢেউয়ের পূর্বাভাস স্পষ্ট হচ্ছে। বরাবরের মতোই বিশেষজ্ঞরা এর বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বেশ কিছু দিন করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। কেউ মারা না গেলেও শনাক্তের হার রীতিমতো ভয় দেখাচ্ছে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্তের হার বেড়েছে ৩৮৩ শতাংশ। শূন্যের কোটায় চলে যাওয়া শনাক্তের হার এখন ১০ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। দৈনিক সংক্রমণ যেখানে ত্রিশের নিচে চলে গিয়েছিল তা এখন ৯০০ ছুঁইছুঁই।

গত ৫ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা নিম্নমুখী ছিল। এরপর থেকে প্রতিদিনই শনাক্ত বেড়েছে। যদিও টানা ২০ দিন করোনায় কেউ মারা যায়নি। সোমবার (২০ জুন) একজনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে করোনা আক্রান্তের হার ছিল একদিনে সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ। সেদিন শনাক্ত হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৪০ জন। এরপর ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতা ছিল জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর আবারও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শনাক্তের হার। ৬ জুন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে থাকলেও ৭ জুন থেকে ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। আড়াই মাস পর ১২ জুন একদিনে শতাধিক শনাক্ত হয়। এরপর মাঝে এক দিন বাদে প্রতিদিনই শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে হু হু করে।

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সবাইকে সতর্ক করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দ্রুত টিকার ডোজ সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছেন, না হলে আবার বিপদ আসতে পারে। তখন হাসপাতালেও রোগীর সঙ্কুলান হবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভালো আছি, আমাদের হাসপাতালে তেমন রোগী নেই। সারা দেশের হাসপাতালে এখন ২০ জন রোগীও নেই। আশার বিষয়, কোনো মৃত্যু নেই। কিন্তু সংক্রমণের হার যদি বেড়ে যায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। সেজন্য আমি সবাইকে বলবো— স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কাজ করতে। মাস্ক পরতে হবে, হ্যান্ড সেনিটাইজ করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব যতটুকু সম্ভব, বজায় রাখা।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের এক ঢেউ থেকে আরেক ঢেউয়ের লক্ষণ তিন মাস পর দেখা দেয়। অন্যান্য দেশে যারা খুবই কড়াকড়ি আরোপ করে থাকে, তাদের হয়তো ছয় মাস পর দেখা দেয়। তিনি সবাইকে দ্রুত টিকার আওতায় আসার তাগিদ দিয়েছেন।

এদিকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় কারিগরি কমিটি ১৪ জুন বৈঠক করে সরকারকে ছয়টি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং জনসমাগম বর্জন করা।

এই কমিটির প্রধান মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, অতি অল্প সময়ে সংক্রমণের হার ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের। তিনি মনে করেন, নতুনভাবে সাবধানতা অবলম্বনের এখনই সময়।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের এক ঢেউ থেকে আরেক ঢেউয়ের লক্ষণ তিন মাস পর দেখা দেয়। অন্যান্য দেশে যারা খুবই কড়াকড়ি আরোপ করে থাকে, তাদের হয়তো ছয় মাস পর দেখা দেয়।

মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ‘তিনটি জিনিস যদি আমরা অবলম্বন করি তাহলে এক রকম ফলাফল পাবো। আর তিনটি জিনিস অবলম্বন না করলে আরেক রকম ফলাফল পাবো। একটি হলো আবারও স্বাস্থ্যবিধি মানা, যারা করোনা টিকা নিয়েছে তাদের বুস্টার নেওয়া, আর যারা বুস্টার নিয়েছে তাদের সতর্ক থাকা।’

তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত দুটি গবেষণাও জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, মানুষ নতুন কোনো সাব ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা এবং আরেকটি হচ্ছে, মানুষের ইমিউনিটি ফল (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে) করেছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে সেটা কতটুকু বাস্তবসম্মত। এই কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করা গেলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সব খোলা রাখা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীজুড়ে মহামারিতে রূপ নেয়। বাংলাদেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। প্রায় আড়াই বছর ধরে ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী তার ভয়াল থাবা বিস্তার করে যাচ্ছে। 

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!